ভাঙারির দোকানি জানতেন না, কী অমূল্য জিনিস তুলে দিলেন আমার হাতে
Published: 19th, October 2025 GMT
আমরা যখন স্কুলে পড়েছি, তখনো ইন্টারনেট আজকের মতো এতটা বিস্তৃত পরিসরে পৌঁছায়নি। অন্তত মফস্সল শহরে বড় হওয়ায় আমার অভিজ্ঞতায় স্কুলজীবনে মুঠোফোন বলতে দেখেছি কেবল ‘বাটন ফোন’। বোধ করি, এ কারণেই বিভিন্ন খেলাধুলার পাশাপাশি অবসরের সময়টা দখল করেছিল গল্প, উপন্যাস। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই সহজলভ্যতায় বড় হলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠত কি না, কে জানে।
‘তিন গোয়েন্দা’র স্রষ্টা রকিব হাসান প্রয়াত হয়েছেন ১৫ অক্টোবর। কখনো তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি, কথা হয়নি। তারপরও তাঁর মৃত্যুর খবরটা শুনতেই বেদনায় মনটা ছেয়ে গিয়েছিল। চোখে ভাসছিল কিশোর পাশার সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতি। কবি, লেখক, সৃষ্টিশীল মানুষের প্রাপ্তি বোধ হয় এখানেই। শব্দে, অক্ষরে, চিত্রকল্পে চরিত্রের মধ্য দিয়েই তাঁরা স্থান করে নেন পাঠকের হৃদয়ে।
কিশোর পাশাকে প্রথম পেয়েছিলাম পুরোনো মালামাল দিয়ে নতুন মালামাল নেওয়ার ভ্রাম্যমাণ দোকানে। তখন গ্রামে থাকি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। দারুণ চাপ পড়ার। সব সময় মা-বাবা, পরিবারের সবাই ‘পড়তে’ বলেন। সকাল-বিকেল স্যার আসেন পড়াতে।
মডেল টেস্ট দিতে কোচিংয়েও যেতে হয়। আর সারাক্ষণ ‘বৃত্তি পাওয়ার বই’ পড়তে এত কার ভালো লাগে! অন্তত আমার মতো ‘পড়াচোর’দের তো ভালো লাগে না। তাই সুযোগ পেলেই ক্লাসের বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ি।
এর মধ্যে একদিন পুরোনো মালামালের; বরং বলা ভালো ভ্রাম্যমাণ ভাঙারির দোকানি আসার শব্দ পেয়ে গেলাম দৌড়ে। ভাঙারির দোকানিরা বোতল ছিদ্র করে বোতলের সঙ্গে একটা মার্বেল বেঁধে বাজাতে বাজাতে আসতেন। খটখট ধরনের একটা শব্দ হতো।
বলা দরকার, পুরোনো মালামালের দোকান হলেও পুরোনো বই-খাতা-কাগজও কিনতেন তাঁরা। যদিও বলেছি দৌড়ে গেলাম, কিন্তু এই দৌড়ে যাওয়ার কারণ ‘কিশোর পাশা’ ছিল না। কারণ ছিল ‘বুটভাজা’। খেতে বেশ মজা।
দুই টাকায় অনেকগুলো পাওয়া যেত। সেদিন বুটভাজা কেনার উদ্দেশ্যে গেলেও হঠাৎ পুরোনো বই-খাতা রাখা চাঙাড়ির ওপর চোখ চলে যায়। পুরোনো, ময়লা লাগা একটা বই। বইয়ের পেছনে লেখা, ‘হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা—আমি কিশোর পাশা বলছি আমেরিকার রকি বিচ থেকে.
তখনো গোয়েন্দা কাহিনির সঙ্গে পরিচয় হয়নি। তাই কিছুটা উৎসাহের সঙ্গেই পকেটে থাকা বুটভাজা কেনার দুই টাকা বের করে দোকানি কাকুকে বলি, ‘কাকু, এই বইটা নিই।’
‘টাকা লাগবে না, নিয়ে নে,’ এমন কিছুই সম্ভবত বলেছিলেন দোকানি কাকু। তাঁর কাছে পুরোনো বইটার হয়তো অর্থনৈতিক মূল্য ছাড়া আর কোনো মূল্য ছিল না।
কিংবা কাকু এ–ও জানতেন না, সেদিন তিনি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন। পুরোদস্তুর পাঠক হয়ে ওঠার রসদ। বাড়ি ফিরে বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে এক রাতে বইটা পড়েছিলাম। পরদিন কোচিংয়ে মডেল টেস্টে নম্বরও কম পেয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে বকাও খেয়েছিলাম অনেক। তারপর একে একে রকিব হাসানের সঙ্গে পরিচয়। ‘তিন গোয়েন্দা’র পাঠক হয়ে ওঠা।
আরও পড়ুনরকিব হাসান, আমাদের শৈশবের নায়ক১৬ অক্টোবর ২০২৫রকিব হাসান (১২ ডিসেম্বর ১৯৫০-১৫ অক্টোবর ২০২৫)উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে কনডেমড সেলে নয়: লিভ টু আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর
বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেমড সেল) রাখা যাবে না বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য ২৮ অক্টোবর দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এই দিন নির্ধারণ করেন।
এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেমড সেল হিসেবে পরিচিত) রাখা যাবে না বলে গত বছরের ১৩ মে রায় দেন হাইকোর্ট। ঘোষিত রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে অন্য বন্দীদের মতোই দেখতে হবে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা অন্য বন্দীদের নিরাপত্তার স্বার্থে, সংক্রামক রোগ, স্বাস্থ্যগত বিষয়সহ ব্যতিক্রম পরিস্থিতির কারণে তাঁকে কনডেমড সেলে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে।
হাইকোর্টের সেই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত গত বছরের ১৫ মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত সিপি (লিভ টু আপিল) করতে বলেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ গত বছর নিয়মিত লিভ টু আপিল করে। আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় লিভ টু আপিলটি ৩৮ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে বিষয়টি উত্থাপন করেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি মেনশন (উত্থাপন) করা হলে আপিল বিভাগ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন গঠিত বেঞ্চে ২৮ অক্টোবর শুনানির জন্য রেখেছেন।
বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত আসামিকে কনডেমড সেলে রাখার বৈধতা নিয়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেমড সেলে থাকা তিন আসামি ২০২১ সালে এই রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ গত বছরের ১৩ মে রায় দেন।
আরও পড়ুনকনডেমড সেলে কেন দুজন বন্দী রাখা হয় না?১৪ মে ২০২২