৬৭৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডির বিরুদ্ধে মামলা
Published: 18th, November 2025 GMT
চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরা সংগ্রহ করে অর্জিত ৬৭৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার গুলশান থানায় এই মামলা করা হয়েছে বলে আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সিআইডি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সিআইডি ঢাকার ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের আর্থিক লেনদেন, নথিপত্র ও ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরা সংগ্রহ করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণে চোরাচালান ও উৎসহীন অর্থ উপার্জনের সত্যতা পেয়ে মামলা করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দেশে-বিদেশে সোনা ও হীরা ব্যবসা পরিচালনার আড়ালে অর্থ পাচার ও চোরাকারবারি করে আসছিলেন।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের বিষয়ে সিআইডি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে মোট ৩৮৪৭ লাখ টাকার সোনার বার, অলংকার, লুজ ডায়মন্ড ও অন্যান্য দ্রব্য বৈধভাবে আমদানি করে। একই সময়ে স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়, বিনিময় ও পরিবর্তন পদ্ধতিতে ৬৭৮ কোটি টাকার সোনা ও হীরা সংগ্রহ করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সিআইডিকে এসবের উৎস বা সরবরাহকারী সংক্রান্তে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। বৈধ নথি না থাকায় এসব বিপুল পরিমাণ সোনা ও হীরা অবৈধ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তাঁকে আদালতে তোলা হয়। এরপর তাঁকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই দিন তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় নিম্ন ও উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর ১ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ল প ক ম র আগরওয় ল ড য়মন ড ও স আইড
এছাড়াও পড়ুন:
বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থানে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করার ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ বাম ঘরানার গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলগুলো।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই কনভেনশন করা হবে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কার্যালয়ের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির বিস্তারিত কর্মসূচি প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ২৯ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সব দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল-বাম রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন জাতিসত্তা, নারী সংগঠন, শ্রম-কর্ম-পেশার সংগঠনগুলো, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সবার মিলিত শক্তিতে আমরা জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, ‘১৯৭১–এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২০২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় কনভেনশন। দেশের চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আসন্ন নির্বাচনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ কনভেনশনের আয়োজন করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে দেশে পর্যায়ক্রমে নৌকা-ধানের শীষ-দাঁড়িপাল্লা-লাঙ্গল ইত্যাদি মার্কার সরকার এবং সামরিক সরকারের অপশাসন ও দুঃশাসন চলেছে। দেশ নির্যাতিত, রুগ্ণ, গভীর সংকট ও ধ্বংসের মুখোমুখি। মানুষ মুক্তি চায়।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন প্রমুখ।
বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রস্তাবনাসংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদের পক্ষে জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির ৮টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করা; জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে না দেওয়া, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংগঠিত খুন গুম লুণ্ঠন ও সম্পদ পাচারের উপযুক্ত বিচার করা, নব্য-ফ্যাসিবাদ ও উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান প্রতিরোধ; গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় জাতীয় সংসদের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা; শোষণ, লুণ্ঠন, গুম, খুন, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতির বিপরীতে সন্ত্রাস অনাচার মুক্ত জনবান্ধব শাসন কায়েম।
প্রস্তাবনায় আরও রয়েছে কর্মসংস্থানভিত্তিক উন্নয়নকৌশল অবলম্বন, আধুনিক সর্বজনীন একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা আর দরিদ্রবান্ধব জনস্বাস্থ্যভিত্তিক সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাস্তবায়ন; বিদেশি শোষণের নিয়ন্ত্রণমুক্ত দেশ গড়ে তোলা। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা; আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতি মেনে চলা সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবিরোধী আগ্রাসন লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা।