সাভারের আশুলিয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শের আলীকে (২০) মেসে ডেকে নিয়ে রাতভর মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন তার সহপাঠীরা। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকায় ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। রাতেই তাকে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন সহপাঠীরা।

আরো পড়ুন:

‘উদাসীনতায়’ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সংকটে যবিপ্রবি

জাবিতে একাডেমিক নিপীড়ন প্রতিরোধে নতুন প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু

অভিযুক্তরা হলেন- অন্তু দেওয়ান (২২), মেহেদী হাসান (২১) ও আশরাফুল (২২)। তারা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। 

শের আলী একই বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। আশুলিয়ায় একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করছেন। 

সরেজমিনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে গিয়ে শের আলীকে চিকিৎসাধীন দেখা যায়। হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, শারীরিক নির্যাতন ও মারধরের কারণে তার গায়ে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। পুরোপুরি সেরে উঠতে কয়েক দিন সময় লাগবে।

ভুক্তভোগী শের আলী বলেন, “আমরা যারা মেসে থাকি সবাইকে দাওয়াতের কথা বলে ডাকা হয়। প্রথমে আমরা মাজারে আসি, এরপর আমরা আশরাফুল ভাইয়ের মেস বাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে এবং আমার সহপাঠী মাহিমকে পেঁয়াজ ছিলতে বলা হয়। আমি বলি, পেঁয়াজ ছিলতে পারি না, আমি রসুন ছিলব। রসুন ছিলছিলাম, তখন আশরাফুল ভাই আমাকে ডেকে বলেন, মুখে মুখে তর্ক করিস কেন? আমি বলি, বড় ভাইদের অসম্মান হয় এমন কিছু তো বলিনি।”

“তারপরে আশরাফুল ভাই বললেন, তোকে মারতে কী লাগবে? তোকে মারলে কী হবে? আমি তখন বলি, আমাকে মারলে কিছুই হবে না। এরপর আমি সেখান থেকে বাসায় চলে আসি”, যোগ করেন তিনি। 

এই শিক্ষার্থী বলেন, “রাত ৯টার দিকে সহপাঠীদের দিয়ে আমাকে আবার ওই বাসায় ডাকিয়ে নেন, আমি যাই। ভুল হয়েছে বলে আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। এরপর সেখানে রান্না করা খিচুড়ি খাই।”

শের আলী অভিযোগ করে বলেন, “খাবার খাওয়ার পর সবাইকে যেতে বলেন তারা। আমাকে একা আটকায়, এরপর এক পায়ে দাঁড়াতে বলে। আমি দাঁড়াই। অন্তু ভাই ডেকে বলেন, কখনো হস্তমৈথুন করছিস? আমি বললাম, যৌবনে সবাই করে। তখন অন্তু ভাই আমাকে টানা ৫-৬টা চড় মারেন। এরপর বলেন, প্যান্ট খোল, যখন অস্বীকৃতি জানাই, তখন তরিকুল ভাই আমাকে মারেন। এরপর আমাকে প্যান্ট খুলে অন্তু ভাই পেটে লাথি মারেন। ৩২ ব্যাচের মেহেদি ভাই, আশরাফুল ভাই দুইজন আমাকে চড় মারতে থাকেন। এরপর আমি তাদের পায়ে ধরি, মাফ চাই। সেখানে ১৫-২০ জন ছিল ৩২ ব্যাচের, তাদের পায়ে ধরি, আমার ভুল হয়ে গেছে বলি। এরপর আমাকে ছাড়ে।” 

“সেখান থেকে বের হয়ে আমি একটা মসজিদে যাই, তারপর বাইরে এলে বন্ধু মাহিম দেখে আমাকে নিয়ে যায়। পরে তারাই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে আসে।”

তিনি বলেন, “সকালে ৩২ ব্যাচের লাবিব ভাই হাসপাতালে এসে এটা আর বাড়াতে চাও, নাকি শেষ করবা বলে হুমকি দেয়। আমি এই ঘটনার যথাযথ বিচার চাই। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেব।” 

আহত শের আলীকে হাসপাতালে নেওয়া মাহিম খান বলেন, “সিনিয়রদের কাছে ডাকা হয়, আমরা সবাই যাই, শের আলীও যায়। তখন পেঁয়াজ ছিলি। শের আলীকেও পেঁয়াজ ছিলতে বলা হয়, সে বলে পারে না ওর চোখে সমস্যা। শের আলী রসুন ছিলে। তখন আশরাফুল ভাই ডেকে নেয়, শুনি চেচামেচির আওয়াজ। পরে ও বাসায় চলে যায়। আমাকে আর এক বন্ধুকে দিয়ে শের আলীকে রাত ৯টার দিকে ডাকিয়ে আনায়। সে এসে বড় ভাইদের কাছে মাফ চায়।” 

তিনি বলেন, “রাতে খাওয়ার পর সবাই চলে যায়, কিন্তু শের আলীকে তারা রাখে। বড় ভাইদের রুমে নেয়। কিছুক্ষণ পর দেখি কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছে। তখন বন্ধুদের ডেকে আনি, জানতে পারি মারধর হয়েছে। এরপর তাকে প্রথমে রুমে নেই, পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”

এই বিষয়ে জানতে অন্তু দেওয়ানের মোবাইলে কল করা হয়। প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে তিনি আর কল রিসিভ করেননি।

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা.

নকিব জাহাঙ্গীর বলেন, “রাতে ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হবে।”

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য সচিব কনক চন্দ্র রায় বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীকে দেখে এসেছি। ভিসিসহ বিষয়টি নিয়ে বসা হয়েছে। এই বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, “ঘটনাটি জানা নেই। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর অভ য গ আশর ফ ল ভ ই গণস ব স থ য শ র আল ক সহপ ঠ ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্প মোকাবিলায় ২ সপ্তাহ বন্ধ থাকবে ঢাবি, হল খালি করার নির্দেশ

আগামী দুই সপ্তাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম।

এদিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে আগামীকাল রবিবার বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ঢাবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় জবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রবিবার

ভূমিকম্প আতঙ্ক: রবিবার বন্ধ থাকবে ঢাবি

শনিবার (২২ নভেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ঢাবি বন্ধের বিষয়টি জানান ভিপি।

ফেসবুকে ভিপি সাদিক কায়েম লেখেন, “পরপর দুইদিন ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহের কথা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কনসার্নগুলো আমরা মাননীয় ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারার স্যারদের অবগত করি।”

তিনি আরো লেখেন, “এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি SMT এবং সিন্ডিকেট মিটিং আহ্বান করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে মিটিংয়ে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সকল হলের প্রতিটি কক্ষে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে সংস্কার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

“শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ভূমিকম্প পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে,” যোগ করেন সাদিক।

এদিকে, ভূমিকম্প পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন।

সভা শেষে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। হলগুলো পুরোনো অবস্থায় আছে, এই হলগুলোর প্রতিটি রুমের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ ও সংস্কার করা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “পর্যবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের ভাষ্যমতে চার সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে। এর মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সংস্কার করতে বলেছে। এজন্য সব হল খালি করা প্রয়োজন। এই দুই সপ্তাহ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। আগামীকাল রবিবার বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল খালি করার নিদের্শনা দেওয়া হলো।” 

তিনি আরো বলেন, “যেহেতু তাদের রুম পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সেহেতু হল খালি করার সময় শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের কাছে চাবি গচ্ছিত রাখতে বলা হলো। একইসঙ্গে রুমের মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিতে বলা হলো।”

খুব দ্রুতই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানান প্রক্টর।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দায়িত্বে ফেরার দেড় ঘণ্টা পরই ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
  • বিবলিওথেরাপি: বইয়ের মাধ্যমে মনের আরোগ্য
  • রূপগঞ্জে গার্মেন্টসে ‘ভূমিকম্পের  ফাটল’ আতঙ্ক, ছুটি ঘোষণা
  • ভূমিকম্প–পরবর্তী পরিস্থিতি নিরীক্ষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল পরিদর্শন শুরু
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অনেকে হল ছাড়ছেন, দ্বিধাদ্বন্দ্বে
  • ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ
  • ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঢাবি ১৫ দিন বন্ধ
  • ভূমিকম্প পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা
  • ভূমিকম্প মোকাবিলায় ২ সপ্তাহ বন্ধ থাকবে ঢাবি, হল খালি করার নির্দেশ