Samakal:
2025-05-01@16:09:29 GMT

রঞ্জু মিয়ার রসের হাঁড়ি

Published: 20th, January 2025 GMT

রঞ্জু মিয়ার রসের হাঁড়ি

শীতের সকাল। গাছে রস এবং বাড়িতে গুড়ের গন্ধ ভাসছে। রঞ্জু মিয়া গ্রামের জনপ্রিয় গুড় প্রস্তুতকারী। তাঁর গুড়ের কদর অনন্য। রঞ্জু মিয়ার হাজারি গুড়; রস জমাতে জমাতে হাত দিলে ছাতুর মতো ঝরঝরিয়ে পড়ত, গন্ধে জাদু। সবাই জানত, রঞ্জু মিয়ার গুড়ের মতো মিষ্টি গুড় আর কোথাও পাওয়া যায় না।
ফলে তাঁর রসের প্রতি আগ্রহ সবার। রাতে কিছু কিশোর ছেলে দলবেঁধে খেয়ে নিত তাঁর রস। রঞ্জু মিয়া বহুবার রাতের বেলায় পাহারা দিয়েছেন, কখনোই সাফল্য পাননি। পাহারা দিয়ে বসে থাকলে কিশোররা এসে সুমধুর গল্পে রঞ্জু মিয়ার সময় নষ্ট করিয়ে রস চুরি করে চলে যেত। একদিন রাতে রঞ্জু মিয়া ঠিক করলেন, এবার তিনি কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
প্রথমে তাঁর গাছগুলোর মধ্যে লোহা পুঁতে দিলেন। ভাবলেন যে এবার রস চুরি করবে, তার বুকেই লোহার আঘাত লাগবে, এতে চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। পরদিন সকালে রস সংগ্রহ করতে গিয়ে রঞ্জু মিয়া নিজেই ভুলবশত সেই লোহার গাছের দিকে চলে গেলেন। গাছের দিকে হেঁটে যাওয়ার পরই একটি লোহা তাঁর পায়ে আঘাত করে। আহ! যন্ত্রণা! সেই দিন আর রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ছেলে এসে বাবার পায়ের আঘাত দেখে অবাক হয়ে গেল। ‘বাবা, তুমি তো রস চুরি ঠেকাতে গেলে; কিন্তু নিজেই বেচারা হয়ে গেলে!’
রস চুরি চলছেই। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, হাঁড়ির মধ্যে ইঁদুরের বিষ দিয়ে রাখবেন। যে রস চুরি করবে, তাকে কঠিন শাস্তি দেবে এই বিষ!
রঞ্জু মিয়া গাছের ডালপালার মাঝে বিষের পাত্র রেখে দিলেন, আর মনে মনে হাসলেন। এবার কেউ আর রস চুরি করবে না। কিন্তু তিনি জানতেন না, এর পরিণতি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।
সন্ধ্যা, রাত নামল। কিছু কিশোর এসে রঞ্জু মিয়ার গাছের দিকে গেল। সেদিন তারাও চিন্তা করল, আজকে কীভাবে রস চুরি করা যায়। তারা জানত, রঞ্জু মিয়া পাহারা দেন না। তারাও বুঝে গেল, কিছু এক ঘাপলা আছে। তাই ভেবে বিষের পাত্রগুলো দেখে খুলে ফেলে। তারা গাছের গাছের পাত্রে বিষের বদলে কচু রেখে দিল। রঞ্জু মিয়ার গাছগুলোর মধ্যে যেগুলোতে কচু না ছিল, সেগুলোতে কচু দিয়ে নতুন হাঁড়ি বেঁধে দিল। আর যেগুলোতে বিষ ছিল, সেগুলোতে বদলে দেওয়া হাঁড়ি রেখে দিল। রঞ্জু মিয়া রস সংগ্রহ করতে এসে কিছু বুঝতে পারলেন না। হ্যাঁ, এবার তো পুরোপুরি সফল হবেন! রঞ্জু মিয়া মনে মনে ভাবলেন। তিনি যেই রসের হাঁড়ি ধরলেন, তিনি যেন মিষ্টির পর মিষ্টি পেয়েছেন। তাঁর গলা ভরে গেল একবারে!
তিনি এক গ্লাস, দুই গ্লাস রস খেলেন। আর খেয়েই গেলেন। কিন্তু তারপর যা হলো, তা ছিল এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা। তাঁর গলা চুলকাতে শুরু করল, আর বাথরুমে দৌড়াতে দৌড়াতে দিন কেটেই গেল! অথচ তিনি তো ভেবেছিলেন রসচোরদের শাস্তি হবে! 
রঞ্জু মিয়া হেসে ফেললেন। এবার ভাবলেন, ওরা যত পারে খাক আর কিছুই বলব না। পরের দিন কিছুই না বলায় তারা অবাক হয়। অভূতপূর্ব এমন আচরণে ছেলেরা বুঝতে পারল, এমন কাজ করা ঠিক হয়নি। একজন গাজি অনেক পরিশ্রম করে এক হাঁড়ি রস পান। এত কষ্টের রস আমরা এভাবে নষ্ট করতে পারি না। সবাই একসঙ্গে তাঁর কাছে এসে ক্ষমা চাইল।
এতে রঞ্জু মিয়া খুব খুশি হলো।
তিনি জানেন, ছেলেরা কালই হয়তো আবার আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের এ উপলব্ধিতে তিনি স্বস্তি পান। পরের দিন রঞ্জু মিয়া নিজেই সবার বাড়ি গিয়ে রস খাইয়ে আসেন। এবং অভিভাবকরা এই রসের গল্প শুনে রঞ্জু মিয়ার সঙ্গে হেসে মরেন। 
সুহৃদ ফরিদপুর 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রামগড়ে ভ্যাকসিন দেয়ার পর অর্ধশত গরু-ছাগলের মৃত্যু 

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার লামকুপাড়া এলাকায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ভ্যাকসিন দেয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগাক্রান্ত গরু ও ছাগল মারা গেছে। গত ১৫ দিনে চারটি গরু ও প্রায় অর্ধশত ছাগলের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে এলাকা পরিদর্শন করে মৃত পশুর ময়নাতদন্ত ও রোগাক্রান্ত পশুর নমুনা সংগ্রহ করেছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের চট্টগ্রাম থেকে আসা মেডিকেল টিমের সদস্যরা। তারা এলাকায় এসে খামারিদের সঙ্গে কথা বলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের পক্ষে ৬ সদস্যের তদন্ত টিমের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা ভেটেনারি কর্মকর্তা ডা. সাহব উদ্দিন।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে মহাজনী সুদের চাপে শ্রমিকের মৃত্যু, দাবি পরিবারের

নোয়াখালীর মাদরাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা 

স্থানীয়রা খামারিরা জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পশু চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি ভ্যাকসিন দেয়ার পর এ ঘটনা ঘটেছে। খামারিরা মনে করছেন, এ সব ভ্যাকসিনে সমস্যা ছিল অথবা একই সিরিঞ্জে সবগুলো পশুকে ভ্যাকসিন দেয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

ভ্যাকসিন দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পশুর অতিরিক্ত জ্বর, চামড়ায় গুটি ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতে গরু ও ছাগল মারা যায়। কোনো চিকিৎসায় আর বাঁচানো যাচ্ছে না।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে মৃত পশু মাটিচাপা দেয়া এবং আক্রান্ত পশুকে অন্য পশু থেকে আলাদা রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা/রূপায়ন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ