জিআই স্বীকৃতি পেল কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি
Published: 1st, May 2025 GMT
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদিসহ আরও ২৪টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ দিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫ এর আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্টদের এসব সনদ হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, এই পণ্যের বাজারজাতকারীদের ন্যায্য স্বীকৃতি ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারীদের ক্ষমতায়ন হবে। এই জন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ জরুরি। জামদানি শাড়ি দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।
তিনি বলেন, দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ করার পর সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত করতে হবে। জিআই পণ্য আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে লালন করে।
নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (ব্রাকেটে সনদ নম্বর)
মিল্লার খাদি (৪০) ছাড়াও নরসিংদীর লটকন (৩২), মধুপুরের আনারস (৩৩), ভোলার মহিষের দুধের কাঁচাদই (৩৪), মাগুরার হাজরাপুরী লিচু (৩৫), সিরাজগঞ্জের গামছা (৩৬), সিলেটের মনিপুরি শাড়ি (৩৭), মিরপুরের কাতান শাড়ি (৩৮), ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা (৩৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি (৪১), গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা (৪২), সুন্দরবনের মধু (৪৩), শেরপুরের ছানার পায়েস (৪৪), সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি (৪৫), গাজীপুরের কাঁঠাল (৪৬), কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান (৪৭), অষ্টগ্রামের পনির (৪৮), বরিশালের আমড়া (৪৯), কুমারখালীর বেডশিট (৫০), দিনাজপুরের বেদানা লিচু (৫১), মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর (৫২), নওগাঁর নাকফজলি আম (৫৩), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের জামুর্কির সন্দেশ (৫৪) ও ঢাকাই ফুটিকার্পাস তুলার বীজ ও গাছ (৫৫)।
কুমিল্লা খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা সাংবাদিকদের বলেন, পৃথিবীর যেখানে বাঙালি কমিউনিটি আছে, সেখানে খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে। কুমিল্লায় যেসব বিদেশি আসেন, তারাও খাদির কাপড় কিনছেন। এটা হাতে তৈরি কাপড় হওয়ায় পরে ন্যাচরাল ফিল পাওয়া যায়।
খাদি কাপড়ের বিশেষত্ব হলো এটি হাতে তৈরি, পরিবেশবান্ধব এবং আরামদায়ক। কুমিল্লার কারিগররা তাদের অনন্য দক্ষতার মাধ্যমে খাদিকে একটি শিল্পে রূপান্তরিত করেছেন। তিনি বলেন, এ স্বীকৃতির ফলে কুমিল্লার খাদি পণ্যের বিপণন ও রপ্তানির সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও কুমিল্লার খাদি পণ্য নতুন মাত্রা পাবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারিগরদের জীবনমান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সম্ভাবনাও তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.
খাদির ইতিহাস
খাদি হাতে বোনা এক ধরনের কাপড়বিশেষ। কার্পাস তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে এই কাপড় বোনা হয়। এই কাপড় যে তুলা দিয়ে তৈরি হয়, সেই সুতাও হাতে তৈরি হয়। খাদি কাপড় মূলত মোটা। মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ১৯২১ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় খাদি জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়। এ কাপড়ের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ‘স্বদেশি পণ্য গ্রহণ করো আর বিদেশি পণ্য বর্জন করো’—এই স্লোগানের ওপর ভিত্তি করেই তখন খাদিশিল্পের বিকাশ হয়।
তবে খাদি কাপড়ের নামকরণ নিয়ে রয়েছে মতবাদ। দেশে যখন খাদি কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যায়, তখন সাধারণ মানুষের কাপড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য মাটির নিচে গর্ত করে পায়ে চালানো প্যাডল দ্বারা এ কাপড় তৈরি হতো। খাদ থেকে তৈরি হতো বলে এর নাম হয় খদ্দর বা খাদি। আবার অনেকে বলে থাকে খদ্দর শব্দটি গুজরাট শব্দ। এই শব্দ থেকে খাদি বা খদ্দর হচ্ছে।
আমাদের দেশে কুমিল্লায় সর্বপ্রথম খাদিশিল্পের প্রসার ঘটে। ধীরে ধীরে বাড়ে খাদি কাপড়ের চাহিদা। এই চাহিদাকে ধরে রাখার জন্য ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তৎকালীন কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ও বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নূনের সহযোগিতায় দি খাদি কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। তখন কুমিল্লার অভয়াশ্রম, চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘ আর নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমে খাদি বা খদ্দর কাপড় বোনা হতো।
ড. আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত দি খাদি কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের হাল ধরেন চান্দিনার শৈলেন গুহ ও তার ছেলে বিজন গুহ। তারা এই খাদিশিল্পের সুনাম ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনবরত কাজ করে গেছেন। শৈলেন গুহ মারা যাওয়ার পর তার ছেলে অরুণ গুহ বাবার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। পরবর্তী সময়ে অরুণ গুহ মারা গেলে শৈলেন গুহের আরেক ছেলে বিজন গুহ এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন কোনোমতে। চান্দিনায় মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত একটি তাঁতশিল্প রয়েছে আজও। ১৯৯৪ সালে কুমিল্লার খাদিশিল্প তাদের গুণগত মানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ আই স ব ক ত জ আই স ব ক ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ