গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় কমল বিশ্বাস (৫০) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক আকস্মিক অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তার পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে, মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ নিয়ে মানসিক চাপ থেকে হার্ট অ্যাটাক করে তার মৃত্যু হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান ও বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ আফজাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীর মাদরাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা 

সাভারে পোশাক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে কমল বিশ্বাস বাড়ি থেকে মাঠে যাওয়ার জন্য বের হন। কিছুদূর যাওয়ার পর পুকুরপাড়ে আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধরাধরি করে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।

মৃত কমল বিশ্বাসের স্ত্রী রীনা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার স্বামী এবং আমি ৩০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে প্রতিবেশী বিধান ভক্তের স্ত্রী বীণা ভক্তের কাছ থেকে ২০২০ সালে মাসিক শতকরা ৩ টাকা সুদে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিই। এরই মধ্যে আমরা সুদ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এরপরও বীণা ভক্ত আমাদের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন। আমরা সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে বীণা ভক্তকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প ফেরত চাই। এ সময় বীণা ভক্ত আমাদের কাছে আরো ১ লাখ টাকা দাবি করেন এবং বলেন, বাকি ১ লাখ টাকা না দিলে স্ট্যাম্প ফেরত দেবেন না। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে আমার স্বামী ও আমার নামে মামলা করে টাকা আদায় করার হুমকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বীণা ভক্তের খারাপ আচরণ ও দেনা পরিশোধ করতে না পারায় আমার স্বামী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সারা রাত চিন্তায় হা-হুতাশ করেন। বীণা ভক্তের সুদের টাকার চাপ সইতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে আমার স্বামী মারা গেছেন।’’ তিনি বীণা ভক্তের শাস্তি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বীণা ভক্ত বলেন, ‘‘আমি কোমল বিশ্বাসের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাই। টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল, টাকা দেননি। তাই আমি স্ট্যাম্পও দেইনি। কোমলকে আমি গালাগাল করিনি বা খারাপ আচরণ করিনি।’’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কৌশিক কীর্ত্তনীয়া জানান, কোমল বিশ্বাসের মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে তদন্ত করে কোমল বিশ্বাসের মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন, যাতে আর কোনো ব্যক্তি সুদ ব্যবসার জালে জড়িয়ে প্রাণ না হারান।

গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান বলেন, ‘‘মৃত কোমল বিশ্বাসের পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী জানতে পারি, তিনি প্রতিবেশী বীণা ভক্তের কাছে সুদের দেনা ছিলেন। টাকা দেওয়ার পরও স্ট্যাম্প ফেরত না পেয়ে মানসিক টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আমরা মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/বাদল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আম র স ব ম গ প লগঞ জ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।

ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র‍্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র‍্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেউ কটুক্তি করলে কী করবেন?
  • বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স‌্যামির
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার