রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মকসুদুর রহমান বলেন, শফীউদ্দীন সরদার সাহিত্য ও ইতিহাসের সেতুবন্ধ তৈরি করেছিলেন। তাঁর লেখা প্রায় ৭০টি গ্রন্থের ২৭টিই ঐতিহাসিক উপন্যাস, যা দেশের আর কোনো লেখকের লেখায় দেখা যায় না।

শিকড়সন্ধানী সাহিত্যিক শফীউদ্দীন সরদারের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোর শহরের একটি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় অধ্যাপক মকসুদুর রহমান এ কথা বলেন। শফীউদ্দীন সরদার ফাউন্ডেশন এ সেমিনারের আয়োজন করে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল ওহাবের সভাপতিত্বে সভায় অধ্যাপক মকসুদুর রহমান ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও কবি নাফিউল ইসলাম, সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান শামীমা নার্গিস, বাংলাদেশ বেতারের নাট্যকার অধ্যাপক মোস্তফা মোহাম্মদ আবদুর রব, নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রুহুল আমীন তালুকদার, রবীন্দ্র সম্মিলন নাটোরের সহসভাপতি খগেন্দ্রনাথ, ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সভায় প্রধান আলোচক অধ্যাপক মকসুদুর রহমান বলেন, শফীউদ্দীন সরদার বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। ১৯৩৫ সালের ১ মে নাটোরের হাটবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নিভৃত গ্রামে জন্ম নিয়েও তিনি দেশ-বিদেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন। শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও তিনি প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছয় বছর আদালতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর হাতে নাটোর ও রাজশাহীর খ্যাতনামা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে তিনি সারা জীবন একের পর এক গ্রন্থ লিখেছেন।

শফীউদ্দীন সরদারের লেখা ঐতিহাসিক ঔপন্যাসের মধ্যে ‘বখতিয়ারের তলোয়ার’, ‘গৌড় থেকে সোনার গাঁ’, ‘যায় বেলা অবেলায়’, ‘বিদ্রোহী জাতক’, ‘বারো পাইকার দুর্গ’, ‘প্রেম ও পূর্ণিমা’, ‘সূর্যাস্ত’ বহুল সমাদৃত। এ ছাড়া সামাজিক উপন্যাসের মধ্যে ‘শীত বসন্তের গীত’, ‘অপূর্ব অপেরা’, ‘চলনবিলের পদাবলী’, ‘থার্ড পণ্ডিত’ ও ‘মুসাফির’ উল্লেখযোগ্য। শিশুসাহিত্যের মধ্যে রয়েছে ‘ভূতের মেয়ে লীলাবতী’, ‘রাজকন্যার পোষা-পাখী’ ও ‘জ্বিনের ডিম’। এ ছাড়া ‘গাজী মণ্ডলের দল’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘বন মানুষের বাসা’, ‘কাঁকড়া কেত্তন’সহ বহু নাটক লিখেছেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে তাঁর লেখা শতাধিক নাটক প্রচারিত হয়েছে। তিনি নিজেও নাটকে অভিনয় করতেন।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শফীউদ্দীন সরদার কর্মজীবন শেষে বাড়িতে রাতদিন অবিরাম লিখতেন। তিনি প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন। ৮৪ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত তিনি অনেকটা নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। এ কারণে তিনি যোগ্য হয়েও জাতীয় কোনো পুরস্কারে পুরস্কৃত হননি।

সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, দেশে তিনিই সবচেয়ে বেশি ঐতিহাসিক ঔপন্যাস লিখেছেন। অসাধারণ প্রতিভাসমৃদ্ধ এই লেখককে নিয়ে বহু গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, শুনানি হতে পারে রোববার

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আগামী রোববার শুনানি হতে পারে।

চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ বুধবার রায় দেন। রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর ফলে ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস জামিন পান।

এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান।

পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। শুনানি হয়নি। চেম্বার আদালত আগামী রোববার আবেদনটি শুনবেন।

এর আগে ওই মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ গত ২ জানুয়ারি চিন্ময়ের জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে গত ১২ জানুয়ারি আবেদনটি করেছিলেন চিন্ময় দাস। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল দেন হাইকোর্ট। আবেদনকারীকে (চিন্ময়) কেন জামিন দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টে চিন্ময় দাসের পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না, প্রবীর হালদার ও অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়েছিল। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালত গত ৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন রাখেন। সেদিন চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন রাখেন। সেদিন তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই বছর পর মামলা, আসামি আওয়ামী লীগের নেতা, সাংবাদিকসহ ১৫৮ জন
  • এনসিপির বক্তব্যের জবাব দিলেন ইশরাকের আইনজীবী
  • এনসিপির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালেন ইশরাকের আইনজীবী
  • মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের
  • শ্রম আদালতে ঝুলছে ২২ হাজার মামলা
  • মাওলানা রইস হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে ১০২ নাগরিকের বিবৃতি
  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও কিশোর গ্যাংয়ের মামলায় আসামিপক্ষে সরকারি আইনজীবীদের না দাঁড়ানোর নির্দেশ
  • চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, রোববার ফের শুনানি
  • চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, শুনানি হতে পারে রোববার