গণতন্ত্রে যাওয়ার ওপরে নির্ভর করছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব: মির্জা ফখরুল
Published: 1st, May 2025 GMT
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা রাজনৈতিক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পরিবেশে বসবাস করছি। ফ্যাসিস্ট বিদায় নিলেও গণতন্ত্র এখনো ফিরে আসেনি। গণতন্ত্রে যাওয়ার ওপরে নির্ভর করছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ের সংস্কারে একমত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচন দিন। আর যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়নি সেগুলো লিখিতভাবে নির্বাচিত পার্লামেন্টে উপস্থাপন করুন। দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহেলা করে, জনগণকে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না, যে চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থের বাইরে যাবে।
শ্রমিকদের অধিকারের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যুগের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু শ্রমিকের প্রয়োজন কমেনি। বারবার সরকার এসেছে কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা কেউই দিতে পারেনি। দেশে সবচেয়ে বঞ্চিত খেটে খাওয়া মানুষ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
তিন বিষয়ে একমত এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন
বিএনপির পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও বিভিন্ন দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। গতকাল বুধবার এবি পার্টি এবং এনসিপির সঙ্গে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনায় বসে ইসলামী আন্দোলন। এর আগে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বাংলামটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে বৈঠক করে এনসিপি।
যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। গণঅধিকার পরিষদ, সিপিবি-বাসদ, বিজেপি, ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে তারা। এনসিপি এই সময়ে বৈঠক করেছে খেলাফত মজলিস ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে।
২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে আগামী সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। একই দিনে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি।
আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি
গতকালের বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি তিন বিষয়ে একমত হয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। মৌলিক সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতেও একমত তারা। দল দুটি চায়, গণহত্যার ও ফ্যাসিবাদে জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার। বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখার দাবিতেও একমত হয়েছে ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি।
ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবং এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, গণপরিষদ নির্বাচন, সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন, সংস্কার এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনেও আলোচনা হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্যে তৈরি হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ থেকে করিডোর কোন পদ্ধতিতে হবে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মানবিক করিডোরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে, এর সঙ্গে এনসিপি একমত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্য সৃষ্টিতে অন্য দলের সঙ্গে বৈঠক চলছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, তা এনসিপি ব্যাখ্যা করেছে। ইসলামী আন্দোলন ভেবে দেখার কথা বলেছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনঅধিকার
হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সব দল দাঁড়াবে।
সংলাপে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন দলের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম
সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। এনসিপির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী প্রমুখ।
জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চলছে
এর আগে এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ ১১ দফায় ঐকমত্যের কথা জানান চরমোনাই পীর। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরকে আঘাত করে কথা না বলার সিদ্ধান্তেও ঐকমত্য হয়েছে দু’দল।
চরমোনাই পীর বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পাঁচটি দল এক হয়েছে। জামায়াতও ইসলামিক দল। তারাও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক আলাপ চলছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন মানি না। এতে নারীকে অবমাননা করা হয়েছে। এবি পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলন এই বিষয়ে একমত। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন, পতিত স্বৈরাচারের বিচারের দাবিতেও ঐকমত্য হয়েছে তারা।
সংলাপে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেন।
নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য
আওয়ামী লীগের বিচার এবং নির্বাচনের ঘোষিত সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কারে একমত হয়েছে এনসিপি ও গণসংহতি। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সংস্কারের জন্য ন্যূনতম ঐকমত্য দ্রুত তৈরি হোক। সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়েও যাতে ঐকমত্যে আসতে পারি। আওয়ামী লীগের যারা গত ১৫ বছরের গুম-খুন, হামলা-মামলা ও লুটপাটে যুক্ত এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডে যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর পদের সীমা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, নারী আসন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ বিভিন্ন মৌলিক সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সাকি।
নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে বৈঠকে এনসিপির পক্ষে বৈঠকে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা ফারুক, এহসান শুভ্রসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
গণসংহতির পক্ষে ছিলেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি ও মনির উদ্দিন পাপ্পু।