ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থামছেই না। দুই মাস ধরে গাজায় কোনো ত্রাণসামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না তারা। হামলার কারণে গাজায় ত্রাণসামগ্রীর ঘাটতি আরও প্রকট হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী যেসব এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে, সেখানকার গুদামে সামান্য ত্রাণসামগ্রী থাকলেও তা মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে সেসব খাবারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামবোঝাই তিন হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক সীমান্তে আটকা পড়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে শিশুরা। গাজার অন্তত ১০ লাখ শিশুর জীবন ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীর অভাবে তাদের জীবন শঙ্কার মুখে পড়েছে।

গাজা সিটির কাছের শুজাইয়া শহরের ১২ বছর বয়সী কন্যাশিশু রাশাফ তাদের একজন। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শিশুটি গুরুতর আহত হয়েছে। এখন সে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছে শিশুটি।

আল-জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট ওই ভিডিও যাচাই করেছে। এতে জানা যায়, শিশুটির নাম রাশাফ। অপুষ্টির সঙ্গে নিজের লড়াইয়ের বিবরণ দেওয়ার সময় তাকে খুবই দুর্বল দেখাচ্ছিল। সে বলে, ‘আমি যদি আগের মতো হতে পারতাম! আমি চাই, আমার চুল আবার আগের মতো লম্বা হোক, যেন আঁচড়াতে পারি। আমি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে চাই। কিন্তু এখন বসে নামাজ পড়তে হয়।’ কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণকাজে বাধা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু২৮ এপ্রিল ২০২৫

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের হামলায় দুই দিনে আরও ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার নিহত হয়েছেন ১৮ জন। বুধবার প্রাণ গেছে ৩৫ জনের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এর মধ্য দিয়ে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে।

গাজার হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩০৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫ হাজার ৯৭৩ জন।

আজ সকালে গাজার উত্তর ও দক্ষিণের বেসামরিক এলাকাগুলো ইসরায়েলের বিমান হামলায় কেঁপে ওঠে। এতে বেইত লাহিয়ার একটি আবাসিক এলাকায় তিনজন নিহত হয়েছেন। হামলায় গুরুতর আহতদের পার্শ্ববর্তী ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তিনজন কৃষক নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই কৃষকেরা খামারে যাওয়ার সময় ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকাজুড়ে তীব্র খাদ্যসংকট মোকাবিলায় চাষাবাদ করে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনের চেষ্টা করছিলেন তাঁরা।

বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা উপত্যকায় খাবারের দোকান ও সাহায্যকারী সংস্থার রান্নাঘরে লুটপাটের ঘটনা বাড়ছে। এটি সেখানকার মানুষের ক্রমবর্ধমান হতাশা ও ক্ষুধার চিত্র তুলে ধরেছে।

ফিলিস্তিনের বাসিন্দা ও ত্রাণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার গাজার বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচটি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে সাহায্য সংস্থার রান্নাঘর, ব্যবসায়ীদের দোকান এবং গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কমপ্লেক্স রয়েছে।

গাজার একটি বেসরকারি সংস্থার পরিচালক আমজাদ আল-শাওয়া বলেন, ‘গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, লুটপাটের ঘটনা তার একটি ইঙ্গিত। তীব্র খাদ্যসংকট, মনোবল হারিয়ে ফেলা, চরম হতাশা এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতির প্রতিফলন এসব ঘটনা।’

আরও পড়ুনইসরায়েলে দাবানল, মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে৮ ঘণ্টা আগে

বুধবার গভীর রাতে কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ গাজা সিটিতে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কমপ্লেক্সে ঢুকে সেখানকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ চুরি করে ও যানবাহনে ভাঙচুর চালায় বলে জানিয়েছেন জর্ডানে অবস্থানরত সংস্থাটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা লুইস ওয়াটারিজ।

গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারের গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা লুটপাটের ঘটনাগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এসব ঘটনা ‘আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রতিফলন নয়।’ এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ