মে দিবসে সমাবেশ করে সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি জানালেন চা–শ্রমিকেরা
Published: 1st, May 2025 GMT
মহান মে দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিশাল চা-শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার রাজঘাট চা-বাগানের নাট মন্দির প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকার বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
এর আগে বালিশিরা ভ্যালির বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস, ট্রাক, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন পরিবহনে চেপে চা-শ্রমিকেরা উপজেলার রাজঘাট চা-বাগানে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো চা-শ্রমিকের ভিড়ে জমে ওঠে রাজঘাট চা-বাগান। দুপুর ১২টায় সহস্রাধিক মানুষের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি নাটমণ্ডপ থেকে বের হয়ে রাজঘাট চা-বাগানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আবারও অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে শেষ হয়।
বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘সমাবেশ ও র্যালি শেষে আমরা আমাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।’
চা-শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে চা-শ্রমিকদের বসতভিটার মালিকানা ব্যবস্থা প্রণয়ন, সরকারি তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক নির্বাচন দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা, চা-শ্রমিকদের জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা ধার্য করা, জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ চা-বাগানগুলো চালুর উদ্যোগ গ্রহণ, পাঁচটি জেলাজুড়ে বিদ্যমান ২১টি উপজেলা এলাকায় চা-শ্রমিক সন্তানদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তাদের কর্মসংস্থান ও মেধাবিকাশের জন্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/বিদ্যালয় নির্ধারিত স্থানে স্থাপন, শ্রম আইনে বিদ্যমান চা-শ্রমিকদের জন্য বৈষম্যমূলক বিধানগুলো সংশোধন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একটি ‘চা জনগোষ্ঠী শিল্পকলা একাডেমি’ স্থাপন, চা-শ্রমিক সন্তানদের প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান/দপ্তর/বিভাগে যোগ্যতানুসারে চাকরিতে যোগদানের বিশেষ নির্দেশনা প্রণয়ন এবং ২০ মেকে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে
কর অব্যাহতির বিষয়ে নীতি প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, ব্যবসায়ীরা শুধু করছাড় চাচ্ছেন। তবে সামনে কর অব্যাহতির রাস্তা কঠিন হয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘সামষ্টিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজস্ব ব্যবস্থা’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন কর অব্যাহতি বিষয়ে নীতি তৈরি করতে। সেই নীতি আইনে প্রতিফলিত হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের প্রস্তাব হলো, সরকার কিংবা এনবিআর কোনো কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। এ ক্ষমতা যাবে সংসদের হাতে। এর মানে হলো— কারও সঙ্গে একটু ভালো সম্পর্ক হলে অথবা বোঝাতে সক্ষম হলে কর অব্যাহতি পেয়ে যাবে– এমনটা থাকছে না। কর অব্যাহতির রাস্তা সামনের দিনে কঠিন হয়ে যাবে। এই ধরনের নীতি প্রণয়নের দিকে যাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এতদিন ব্যাপক কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এর দরকারও ছিল। এখন নতুন করে ভাবতে হবে। রাজস্ব আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মেটানোর মতো রাজস্ব আয় হচ্ছে না। রাজস্ব কম কেন– সেই প্রশ্নও তুলছে জনগণ। এসব জায়গায় আরেকটু সচেতন হলে আগামী বাজেটের আকার কিছুটা ছোট হতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আয়ের মধ্যে পরোক্ষ করের পরিমাণ অনেক বেশি, যা সভ্য দেশের লক্ষণ নয়। প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে। যে পরিমাণ কর আদায় করার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। করযোগ্য সবার থেকে কর আদায় করতে না পারার কারণে করজাল সংকুচিত। কর আদায় বাড়ানোর বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, একদিকে আয় বাড়ানো, অন্যদিকে নীতি-সহায়তা দেওয়ার মধ্যে ভারসাম্য আনা বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সুশাসনের ঘাটতি। যার যে কাজ করা দরকার, তিনি তা করছেন না। ফলে পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে। সে জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ বিষয়ে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতির খারাপ সময়েও রাজস্ব আদায় আগের চেয়ে বাড়ছে। এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি আরও ভালো হবে। যারা কর দিচ্ছেন না, তাদের নোটিশ করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে কোম্পানির কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের নিয়ম করা হবে।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, রমজানের আগে নিত্যপণ্যে করছাড়, পর্যাপ্ত আমদানি এবং সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গত জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত টাকা ছাপিয়ে যেভাবে ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এখন তা কমে আসছে। টাকা পাচার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি কমেছে। এর ফলে রিজার্ভ ইতিবাচক। তিনি বলেন, যারা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কর অব্যাহতি পেয়ে আসছেন, তাদের বিষয়ে এনবিআরকে নতুন করে ভাবা দরকার।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবীর। ইআরএফ প্রেসিডেন্ট দৌলত আক্তার মালা সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সঞ্চালনা করেন।