‘সে শুধু নিজের রেকর্ডের জন্য খেলে, দলের জন্য নয়’
Published: 1st, May 2025 GMT
এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে আল-নাসর। তবে মাঠের ফলাফলের চেয়েও এখন আলোচনায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর প্রতিক্রিয়া। ম্যাচ শেষে তার ‘বিষণ্ণ ও নাটকীয়’ আচরণ উপহাস হিসেবে দেখছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
বুধবার রাতে জেদ্দার আলিনমা স্টেডিয়ামে জাপানি ক্লাব কাওয়াসাকি ফ্রন্টেলের বিপক্ষে ৩-২ গোলে হারে সৌদি ক্লাব আল-নাসর। এই পরাজয়ে রোনালদোর দলের সামনে চলতি মৌসুমে আর কোনো ট্রফি জয়ের সুযোগ থাকল না। সেমিফাইনালের ম্যাচটিতে রোনালদো একটি সুবর্ণ সুযোগও নষ্ট করে। প্রতিপক্ষ দলের গোলরক্ষককে কাটিয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে বল জালে পাঠাতে ব্যর্থ হন পর্তুগিজ মহাতারকা। সমর্থকদের মতে, রোনালদোর গোল মিস করাটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।
ম্যাচ শেষে হতাশ রোনালদোকে দেখা যায় মাঠের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে কথা বলতে ও আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিতে হাত নেড়েছেন। তার এই অদ্ভুত আচরণ নিয়েই এখন সরগরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘রোনালদোর জন্য ‘ফুটবলকে ছেড়ে দাও, তার আগেই যে ফুটবল তোমাকে ছাড়বে’—এই কথাটা একেবারে যথার্থ।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘এই লোকটা এখন আর মজার না… শুধু অহঙ্কারে ভরা।’
তৃতীয় একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মেসির বিশ্বকাপ জয় মানসিকভাবে শেষ করে দিয়েছে রোনালদোকে।’ অন্য একজন কটাক্ষ করে বলেন, ‘ক্যামেরার জন্য এমন মরিয়া চেষ্টাও এক রকম প্রশংসার দাবি রাখে—যদি না সেটা এত করুণ হতো।’
অনেকে আবার রোনালদোর স্বার্থপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সে শুধু নিজের রেকর্ডের জন্য খেলে, দলের জন্য নয়।’
তবে এত সমালোচনার পরও অবসরের কোনো ইঙ্গিত দেননি রোনালদো। বরং সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে দলের প্রতি নিজের গর্বের কথা জানান তিনি। রোনালদো লেখেন, ‘সবসময় স্বপ্ন পূরণ হয় না। তবে আমি গর্বিত আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে। যারা আমাদের পাশে থেকেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সমর্থন আমাদের অনেক কিছু বলে।’
এদিকে ম্যাচ শেষে আল-নাসরের কোচ স্তেফানো পিওলি দলের পারফরম্যান্সে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কৌশলে সমস্যা ছিল, দ্বিতীয়ার্ধে ঝুঁকি নিয়েছিলাম। তবে যে পারফরম্যান্স হয়েছে, তা হতাশাজনক। প্রতিপক্ষ আমাদের চমকে দেয়নি, বরং নিজেদের দুর্বলতাই বড় ধাক্কা দিয়েছে।’
এই হারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে পড়েছে আল-নাসর, আর প্রশ্নটা থেকে গেছে—রোনালদো আসলে কোথায় গিয়ে থামবেন?
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ঋণের সুদের চাপে শ্রমিকের মৃত্যু?
গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় কমল বিশ্বাস (৫০) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক আকস্মিক অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তার পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে, মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ নিয়ে মানসিক চাপ থেকে হার্ট অ্যাটাক করে তার মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান ও বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ আফজাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীর মাদরাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা
সাভারে পোশাক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে কমল বিশ্বাস বাড়ি থেকে মাঠে যাওয়ার জন্য বের হন। কিছুদূর যাওয়ার পর পুকুরপাড়ে আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধরাধরি করে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।
মৃত কমল বিশ্বাসের স্ত্রী রীনা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার স্বামী এবং আমি ৩০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে প্রতিবেশী বিধান ভক্তের স্ত্রী বীণা ভক্তের কাছ থেকে ২০২০ সালে মাসিক শতকরা ৩ টাকা সুদে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিই। এরই মধ্যে আমরা সুদ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এরপরও বীণা ভক্ত আমাদের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন। আমরা সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে বীণা ভক্তকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প ফেরত চাই। এ সময় বীণা ভক্ত আমাদের কাছে আরো ১ লাখ টাকা দাবি করেন এবং বলেন, বাকি ১ লাখ টাকা না দিলে স্ট্যাম্প ফেরত দেবেন না। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে আমার স্বামী ও আমার নামে মামলা করে টাকা আদায় করার হুমকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বীণা ভক্তের খারাপ আচরণ ও দেনা পরিশোধ করতে না পারায় আমার স্বামী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সারা রাত চিন্তায় হা-হুতাশ করেন। বীণা ভক্তের সুদের টাকার চাপ সইতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে আমার স্বামী মারা গেছেন।’’ তিনি বীণা ভক্তের শাস্তি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বীণা ভক্ত বলেন, ‘‘আমি কোমল বিশ্বাসের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাই। টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল, টাকা দেননি। তাই আমি স্ট্যাম্পও দেইনি। কোমলকে আমি গালাগাল করিনি বা খারাপ আচরণ করিনি।’’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কৌশিক কীর্ত্তনীয়া জানান, কোমল বিশ্বাসের মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে তদন্ত করে কোমল বিশ্বাসের মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন, যাতে আর কোনো ব্যক্তি সুদ ব্যবসার জালে জড়িয়ে প্রাণ না হারান।
গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান বলেন, ‘‘মৃত কোমল বিশ্বাসের পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী জানতে পারি, তিনি প্রতিবেশী বীণা ভক্তের কাছে সুদের দেনা ছিলেন। টাকা দেওয়ার পরও স্ট্যাম্প ফেরত না পেয়ে মানসিক টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আমরা মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/বাদল/বকুল