‘আমাকে তাড়াতাড়ি ছাড়ুন’, হাসপাতালে কেন বারবার বলতেন মান্না দে
Published: 1st, May 2025 GMT
১ মে বিশ্ব শ্রম দিবস। শ্রম আর সৃজনশীলতা যেখানে একসূত্রে গাঁথা, সেদিনই জন্মেছিলেন বাংলা ও ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীতজগতের এক অনন্য সাধক-মান্না দে। যিনি কেবল গায়ক নন, ছিলেন এক জীবন্ত সংগীতশিল্পী, যাঁর প্রতিটি সুর ছিল সাধনার মতো। এই দিনেই যেন আরও একবার ফিরে দেখা দরকার তাঁর জীবন, ভালোবাসা আর অপূর্ণ থেকে যাওয়া একটি চিরকথার গল্প।
গান নয়, জীবনের সাধক ছিলেন তিনি
১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতার একটি বাঙালি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন প্রবোধ চন্দ্র দে। সংগীতানুরাগী পরিবারে বেড়ে ওঠা, কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন তাঁর জীবনের প্রথম গুরু ও অনুপ্রেরণা। ডাকনাম ছিল ‘মান্না’, আর এই নামেই একদিন গানের আকাশে অমর হয়ে উঠলেন তিনি—মান্না দে। ছেলেবেলা থেকেই গান ছিল তাঁর নেশা, অথচ একই সঙ্গে তিনি ছিলেন ক্রীড়ানুরাগীও। ফুটবল, কুস্তি, এমনকি বক্সিংয়েও ছিলেন দারুণ দক্ষ। এমনকি পরিবারে অনেকেই চেয়েছিলেন, মান্না একদিন হবেন নামকরা আইনজীবী। কিন্তু তাঁর আত্মা তখন সুরের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজে সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে নজর কেড়েছেন বারবার। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াকালীন তিনটি ভিন্ন বিভাগে আন্তকলেজ সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে চমকে দিয়েছিলেন বিচারকদের। এখান থেকেই শুরু মান্না দের দীর্ঘ সংগীতজীবনের পথচলা, যা তাঁকে নিয়ে গেছে সারা ভারতের মানুষের হৃদয়ে। বাংলা-হিন্দি ছাড়াও গেয়েছেন মারাঠি, গুজরাটি, মালয়ালম, কন্নড়সহ বহু ভাষায়। ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’, ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’, ‘জীবন খাতে কে পায়’ এমন গান শুধুই গান নয়, একেকটা জীবনের ভাষ্য হয়ে থেকেছে মানুষের মনে।
ভালোবাসার গল্পটাও যেন উপন্যাসের মতো
মান্না দের জীবনের সবচেয়ে মায়াময় অধ্যায় তাঁর প্রেম। ১৯৫০-এর দশকে একটি রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা হয় সুলোচনা কুমারনের সঙ্গে। অবাঙালি হয়েও সুলোচনার ছিল রবীন্দ্রসংগীতে গভীর অনুরাগ। সেদিন মঞ্চে একসঙ্গে গান গেয়েছিলেন মান্না দে ও সুলোচনা, ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, সুরেরও বাঁধনে।’ গান গাইতে গাইতেই গড়ে উঠেছিল সুরের সেই বন্ধন, যা পরে হয়ে ওঠে জীবনের বন্ধন। দুজনের মধ্যে তৈরি হয় ভালোবাসা, বিশ্বাস আর একে অপরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। তবে এই সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি মান্না দের পরিবারের অনেকেই। তবু পাশে ছিলেন তাঁর মা মহামায়া, যিনি পুত্রের পাশে দাঁড়িয়ে সব বাধা অতিক্রম করতে সাহস দেন। ১৯৫৩ সালে মান্না দে ও সুলোচনার বিয়ে হয়। বিয়ের পরের জীবন ছিল সংগীত ও ভালোবাসায় ভরপুর। সুলোচনার অনুপ্রেরণাই মান্না দেকে অনেক নতুন গান করতে সাহস জুগিয়েছে, জীবনের বাঁকে বাঁকে থেকেছেন ছায়ার মতো।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ বন জ বন র পর ব র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি