আদালতের রায়ের পর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপির ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম।

এক বিবৃতিতে গত মঙ্গলবার রাতে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ইশরাক হো‌সে‌নের মামলার প্রথম তিন বছর পাঁচ মাসে ৩২টি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে মাত্র চার মাসে ১৭টি তারিখ দিয়ে মামলাটি তড়িঘড়ি করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে এত দ্রুততার সঙ্গে তারিখ ধার্য করা হয়নি। ট্রাইব্যুনাল একটি পক্ষকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যায্য সুবিধা দিয়েছে কি-না, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে ইশরাকের আইনজীবী মো.

রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালে নির্বাচন কমিশন ও শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছরের আইনি লড়াই শেষে গত ২৭ মার্চ আদালত রায় ঘোষণা করেন। এই মামলা নিয়ে এনসিপির উদ্বেগ অপ্রাসঙ্গিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিচার বিভাগের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননার শামিল।

ইশরাকের আইনজীবী বলেন, মামলায় শেখ ফজলে নূর তাপস আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং মামলার জবাব দেন এবং একপর্যায়ে মামলা খারিজের জন্য দরখাস্ত করেন। কিন্তু আদালত তৎকালীন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই উভয়পক্ষের শুনানি শেষে শেখ ফজলে নূর তাপসের আবেদন নামঞ্জুর করেন। সেই আদেশে অসন্তুষ্ট হইয়া বিবাদীপক্ষ হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করিয়া দীর্ঘদিন মামলাটি আটকে রাখে, ফলে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরেও তাপসের সরাসরি হস্তক্ষেপে মামলা হাইকোর্টে শুনানি বার বার পিছিয়ে যায় এবং শুনানি না করিয়া ফেলে রাখে। ফলে বিবাদীপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ও জবাব দাখিল করা স্বত্বেও মামলাটি দীর্ঘদিন অনিস্পন্ন থাকে।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলাটি ৫ আগস্টের পর দেশের বিচারব্যবস্থা আওয়ামী সরকারের রাহুমুক্ত হওয়ায় হাইকোর্ট রিভিশন খারিজ করিয়া নিম্ন আদালতে দ্রুত নিস্পত্তির জন্য প্রেরণ করে। ফলে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল আবার মামলাটির শুনানি শুরু করেন। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনসিপি আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তি করছে, একইসঙ্গে আদালতের আদেশকে অবমাননা করিতেছে। এছাড়া মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি কারণ নিয়ে এনসিপির বক্তব্য একেবারেই শিশুসুলভ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যে কোনো মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তির আদালতের একটি সহজাত ক্ষমতা। তাছাড়া ২০২০ সালে দায়ের করা মামলাটি ২০২৫ সালে নিস্পত্তি হইয়াছে, যাহাতে দীর্ঘ ৫ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হইয়াছে। এটি মোটেও সংক্ষিপ্ত সময় নয়। বরং মামলাটি আরও আগেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল। একটি নির্বাচনা মামলার নিষ্পত্তি সংক্ষিপ্ত সময়ের হওয়া উচিত। এনসিপির এজাতীয় বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। 

আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আদালত যে কোনো রায় বা ডিক্রি দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ আইন মেনেই দেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ন্যায় বিচার হয়নি বলে মনে করেন, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, এভাবে প্রেস নোট দিয়ে বক্তব্য প্রদান দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও আদালতকে অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়।

রফিকুল ইসলাম বলেন, রায়ের কপি আইন মন্ত্রণালয়েও প্রেরিত হইয়াছে। রায়ে কোনো অসামঞ্জস্যতা না পেয়ে নির্বাচন কমিশন যথাযথ নিয়ম মেনে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ইশর ক হ স ন র আইনজ ব এনস প র র আইন

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর