পানি কম, ঢেউও নেই, তবু কেন ভাঙছে মধুমতী
Published: 23rd, April 2025 GMT
‘শুধু বালু তোলার কারণে আমার বাড়ি ভাঙছে। আমি গরিব-অসহায়। আর কোথাও যে বাড়ি করমু, আমার জমির এক ফোঁটাও নাই। স্বামী নাই, একটা ছেলে নাই, আছে চারটা মাইয়্যা। এখন আমি কোন উপায়ে কী করমু? জানুয়ারিত বৃষ্টি-বাদলা কিছুই ছিল না, তবু ভিটা ভাঙিছে। এখনো ভাঙতাছে। বৃষ্টি আইলেই সব যাইব। এখন আমি যাই কই?’
কথাগুলো বলছিলেন লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী শামসুন্নাহার বেগম। তাঁর বাড়ির সামনে মধুমতী নদী থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হয়। সেই বালু স্তূপ করে রাখা হয় তাঁর বাড়ির পেছনে। বালু তোলার কারণে সামনের বাঁধের বালুর বস্তা পানিতে সরে গিয়ে ভেঙে পড়ে। আর পেছনের স্তূপ করা বালুর পানির টানে নদীগর্ভে চলে যায় তাঁর ভিটেমাটি।
গত রোববার শামসুন্নাহারদের গ্রাম কাশিপুরসহ আশপাশের মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মধুমতী নদীতে পানি কম, ঢেউও নেই, তবু চলছে ভাঙন। বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বালুর বস্তা সরে গিয়ে নদীতে তলিয়ে গেছে। ফলে পুরোনো বাঁধ ভেঙে নতুন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বসতভিটা, ফসলি জমির পাশাপাশি ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯৪৫ সালে স্থাপিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কয়েকটি মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গ্রামের রাস্তাঘাট।
মর্জিনা বেগম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আগে দুইবার নদীতে আমাগের বাড়ি ভাঙিছে, কষ্ট করে নতুন করে বাড়ি করিছি। মেলা জমি নদীতে চলে গেছে। এখনকার বাড়িও ভাঙনের ঝুঁকিতে।’
ভাঙনের মুখে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত রোববার তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।