অর্থ উপদেষ্টার কাছে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারকদের ৬ দাবি
Published: 23rd, April 2025 GMT
হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যপণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে ছয়টি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)। সংগঠনটির সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী এক চিঠিতে এ খাতে বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে অর্থ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বিএফএফইএর নেতাদের একটি সভা হয়। হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যপণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো.
বিএফএফইএর সভাপতির চিঠিতে দীর্ঘ দিনের বকেয়া নগদ সহায়তার অর্থ দ্রুত ছাড় করার বিষয়ে বলা হয়েছে, হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতের কাঁচামাল শতভাগ কৃষিজাত পণ্য। প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে কিনে দেশের শতাধিক হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা হচ্ছে। এটা শতভাগ মূল্য সংযোজিত পণ্য। এ খাত শতভাগ দেশীয় কাঁচামাল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের খাত। সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা এ খাতের কোনো লভ্যাংশ নয়। কাঁচামালের স্বল্পতার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে মাছের মূল্য বেশি থাকায় কারখানায় পণ্যের ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পায়। তদুপরি বিভিন্ন সময় আওতাবহির্ভূত সমস্যার কারণে, যেমন: করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে চিংড়ি ও মাছের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় এ খাতের রপ্তানি অনুকূল অবস্থার পরিবর্তে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এ খাতের নগদ সহায়তা শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের লক্ষ্যে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার সহায়ক মাত্র। প্রায় ১ বছর যাবত অডিট আপত্তির বিষয়টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তাপ্রাপ্তির কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। অর্থ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে নিষ্পত্তি হওয়ার ফলে অডিট কার্যক্রম চালু হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে অডিটকৃত ১৩৮ কোটি টাকা বকেয়া আছে, যার ফলে রপ্তানিকারকদের তারল্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং প্রান্তিক চাষিদের চিংড়ি ও মাছের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি খাতের অডিটকৃত পাওনা অর্থ দ্রুত ছাড় করার দাবি জানানো হয়েছে।
বিএফএফইএর ছয় দাবি হলো—
১। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ হিসাবের মূল ঋণ ও সুদ পৃথক পৃথক ব্লকড হিসাবে স্থানান্তর করা।
২। ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্লকড হিসাবে স্থানান্তরের ফলে ঋণ হিসাবে সৃষ্ট কুশন অনুযায়ী ড্রইং সুবিধা অনুমোদন করা।
৩। মূল ঋণের জন্য সৃষ্ট ব্লকড হিসাব দুই বছরের সুদবিহীন মরেটরিয়াম সুবিধাসহ ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া।
৪। ‘কস্ট অব ফান্ড’ বিবেচনায় মূল ঋণের জন্য সৃষ্ট ব্লকড হিসাবে ৯ শতাংশ হারে বাৎসরিক ভিত্তিতে সুদ আরোপের সুযোগ দেওয়া।
৫। সুদের জন্য সৃষ্ট ব্লকড হিসাব দুই বছরের মরেটরিয়াম সুবিধাসহ বিনা সুদে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া।
৬। ঋণ হিসাব পুনঃতফশিলের জন্য প্রচলিত ডাউন পেমেন্টের হার শিথিল করে মূল ঋণের ওপর ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট পরিশোধের সুযোগ দেওয়া।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব লকড হ স ব ২০২৪ স ল র ও মৎস য র জন য পর শ ধ ম ল ঋণ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ