জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে আহত হন খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর ওপরের ঠোঁট, মাড়ি, নাক, তালু, এক চোখ—এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। এই পুরো অংশ মিলে বড় একটি গর্ত হয়ে আছে। সরকারি খরচে চিকিৎসার জন্য খোকন বর্তমানে রাশিয়ায় আছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর পাঁজরের হাড় ও কপালের চামড়া দিয়ে নাক বানানো হবে। বাঁ চোখে আর দেখতে পাবেন না, সেখানে কৃত্রিম চোখ লাগানো হবে। থ্রিডি মডেলের মাধ্যমে তৈরি করা হবে তাঁর মুখের আদল।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি খোকন উন্নত চিকিৎসার জন্য রাশিয়ায় গেছেন। সেখানে এত দিন খোকনের শারীরিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। থ্রিডি মডেল তৈরি হলে নিচের চোয়ালে কিছু প্লেট বসাতে হবে। আপাতত ১৪ এপ্রিল খোকনের প্রথম অস্ত্রোপচার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রথম অস্ত্রোপচার সফল হলে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। এভাবে একেক ধাপে এক মাস থেকে তিন মাসসহ বিভিন্ন মেয়াদে বিরতি দিতে হবে।

হোয়াটসঅ্যাপে খোকনের চিকিৎসার বিষয়ে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান। তিনি খোকনের সঙ্গে রাশিয়ায় গেছেন। মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি রাশিয়া থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়ার পাশাপাশি দেশটিতে কাজও করেছেন। তাই রুশ ভাষা বুঝতে পারেন, এ সুবিধার জন্যই তাঁকে সরকারিভাবে খোকনের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে খোকনের বিষয়ে তিনি এসব তথ্য জেনেছেন।

চিকিৎসার জন্য রাশিয়ায় পাঠানোয় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন খোকন। তবে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে যাতে দ্রুত দেশে ফিরতে পারেন, সে জন্য তাঁর পাশে থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

২১ ফেব্রুয়ারি যাওয়ার পর চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হলো কি না, জানতে চাইলে চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়েছে—বিষয়টি আসলে তেমন না। এখানে (রাশিয়া) আসার পর খোকনের মুখে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। দুই সপ্তাহ ড্রেসিং করতে হয়েছে। চোখের চিকিৎসককে দেখানো, পুরো শরীর সিটিস্ক্যান করাসহ নানা পরীক্ষা করাতে হয়েছে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে খোকনের মুখ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। চিকিৎসাটা ব্যয়বহুল এবং চিকিৎসা শেষ হতে কত দিন লাগবে, তা বলার কোনো উপায় নেই।

খোকনের বয়স ২৩ বছর। পেশায় গাড়িচালক। গত ৫ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ওই দিনের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গুলিতে খোকনের ঠোঁট, মাড়ি, নাক-মুখের অংশের মাংস প্রায় খুলে পড়ছে। তাঁর মুখ ও পুরো শরীর রক্তাক্ত। এ অবস্থাতেও তিনি একজনের হাত ধরে উঠে দাঁড়ান। খোকন নিজেই আঙুলের ছাপ দিয়ে মুঠোফোনের লক খোলেন। সেই মুঠোফোন থেকেই একজন খোকনের বড় ভাই খোকা চন্দ্র বর্মণকে গুলি লাগার খবর দেন।

সব মিলিয়ে খোকনের মুখ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। চিকিৎসাটা ব্যয়বহুল এবং চিকিৎসা শেষ হতে কত দিন লাগবে, তা বলার কোনো উপায় নেই।মাহমুদুল হাসান, খোকনের সঙ্গে থাকা চিকিৎসক

খোকনের স্বজনেরা জানান, খোকা ও খোকন একই কোম্পানিতে গাড়ি চালাতেন। খোকন যাত্রাবাড়ীতে থাকতেন; আর খোকা মা-বাবা ও ছোট ভাইকে নিয়ে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে থাকেন।

গত ৯ অক্টোবর প্রথম আলোতে ‘গুলিতে খোকনের ঠোঁট, মাড়ি, তালু, নাকের আর অস্তিত্ব নেই’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন খোকন ভর্তি ছিলেন ঢাকার (সাবেক নাম শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে থাকার সময় এবং এখন রাশিয়াতেও খোকনকে মুখ সাদা গজ কাপড় দিয়ে ঢেকে চলাফেরা করতে হয়; যাতে অন্যরা ভয় না পান। চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান বলেন, রাশিয়ায় যেহেতু যুদ্ধ চলছে, তাই খোকনকে দেখে মানুষের মধ্যে অন্য ধরনের আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। রাস্তায় বের হলে দফায় দফায় পুলিশি তল্লাশিতে পড়তে হচ্ছে। গণপরিবহন ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো খোকন সহজে মেনে নিতে পারেন না। মন খারাপ করেন।

মোবাইলে খোকন চন্দ্র বর্মণের পুরোনো ছবি।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র জন য সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা

কপ৩০ সম্মেলনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোসহ উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিছু বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে কয়েকটি দেশ। জলবায়ু সংকট নিরসনে ধনী দেশগুলোর আর্থিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিও আলোচনায় তোলার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে গতকাল বুধবার সমঝোতার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টার কথা ছিল আয়োজক দেশ ব্রাজিলের।

ওই পদক্ষেপগুলো আগের বিভিন্ন সম্মেলনে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিল। ব্রাজিলের বেলেম শহরে কপ সম্মেলন শুরুর দিন গত সোমবার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। তবে এ নিয়ে আয়োজক দেশ ব্রাজিল অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ করবে এবং সমঝোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য মধ্যস্থতা করবে—এমন প্রতিশ্রুতির পর মূল আলোচনা পেছানো হয়েছিল।

বুধবারের আলোচনার জন্য চারটি বিষয় বিবেচনায় রয়েছে। সেগুলো হলো বাণিজ্য, স্বচ্ছতা, জলবায়ু-সংক্রান্ত অর্থায়নের দায়বদ্ধতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এমন গ্যাস নিঃসরণ কমানো। শেষের দুটি বিষয় বেশি সংবেদনশীল। কারণ, ধনী দেশগুলো আর্থিক সহায়তা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয়। আর জলবায়ু পরিবর্তনে জীবাশ্ম জ্বালানির দায় নিয়ে আলোচনা চায় না তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো।

সম্মেলনের ফাঁকে দুই দিন ধরে বিষয় দুটি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর গতকাল দেখার পালা ছিল ব্রাজিল আদৌ সফল হয়েছে কি না। আর্থিক সহায়তা ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে মধ্যবর্তী কোনো অবস্থান খুঁজে পেয়েছে কি না। আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে সমঝোতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তারা।

কপ সম্মেলনে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে অবশ্যই জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) চুক্তিতে সই করা ১৯৭ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মতি লাগবে। ব্রাজিলের সঙ্গে দেশগুলোর অনানুষ্ঠানিক আলোচনা সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন একজন পর্যবেক্ষক এএফপিকে জানিয়েছেন, কিছু দেশ আলোচনায় অংশ না নিলেও তা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে।

আলোচনায় জোর ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের

আর্থিক দায়বদ্ধতা ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে সবচেয়ে জোর দিচ্ছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট (এওএসআইএস)। বেলেমে কপ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো যেন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিরাপদ মাত্রায় ধরে রাখার ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে—এমনটাই দাবি এই জোটের। এতে সম্মতি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখাটা সম্ভব হবে না। কারণ, এই লক্ষ্য ধরে রাখার জন্য যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি দেশগুলো। সম্মেলনে অংশ নেওয়া একজন কূটনীতিক বলেন, ব্রাজিল শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মোকাবিলার সাহস দেখিয়েছে।

তবে এ জন্য ব্রাজিলকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। পর্যবেক্ষকেরা জানিয়েছেন, তেল উৎপাদনকারী ২২টি আরব দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য ব্রাজিলের সমালোচনা করেছে। এ ছাড়া আর্থিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনার জন্য ধনী দেশগুলোও আপত্তি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, এই বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই, তবে তারা সমঝোতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সম্মেলনস্থলে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ

এদিকে কপ৩০-এর সম্মেলনস্থলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। এ সময় স্থানীয় আদিবাসী ও অ-আদিবাসী বিক্ষোভকারীদের একটি দল সম্মেলনস্থলেও হামলা চালায়। তখন কয়েক ডজন নারী-পুরুষ দৌড়ে সম্মেলনস্থলের মেটাল ডিটেক্টর ভেদ করে ব্লু জোনে ঢুকে পড়েন।

তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের থামাতে ছুটে যান। তাঁদের ধরে ফেলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তারক্ষীদের ধাক্কা দেন, চিৎকার করতে থাকেন। বিক্ষোভে একজন অ-আদিবাসী পুরুষ একটি ব্যানার ধরে ছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়’। অন্যদের পরনের টি-শার্টে লেখা ছিল ‘জুন্তোস’। স্প্যানিশ এই শব্দের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘একসঙ্গে’।

বিক্ষোভকারীরা সেখানে ব্যানার নাড়াতে থাকেন। জোর করে সরিয়ে দেওয়ার আগপর্যন্ত সম্মেলনস্থলে নানা স্লোগান দেন তাঁরা। এ বিষয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু-বিষয়ক মুখপাত্র জানান, এ ঘটনায় দুজন নিরাপত্তারক্ষী সামান্য আহত হয়েছেন। সম্মেলনস্থলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে এই অনুপ্রবেশের জন্য কে বা কারা জড়িত, সেটা স্পষ্ট নয়।

এ বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ব্রাজিল আর জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরা সব ধরনের প্রটোকল মেনে সম্মেলনস্থলকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে সম্মেলনস্থল পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাশ্মীরে থানায় বিস্ফোরক ভান্ডারে বিস্ফোরণে নিহত ৯, আহত ২৯
  • তারকাবহুল পাঁচ সিনেমার বক্স অফিসে ভরাডুবি
  • অমিতাভ রেজার বিয়ে
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার
  • ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ব্যাপক হামলা
  • দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন নবীর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী
  • কল করে ‘কাকন বাহিনী’র প্রধান বললেন, তিনি প্রকৌশলী, ইজারা নিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন
  • থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে আবারো উত্তেজনা
  • স্থপতি থেকে অভিনেতা হোমায়ুন এরশাদি
  • সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা