চলতি মাসেই আইএমএফের ঋণের কিস্তির বিষয়ে সমঝোতা, জুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
Published: 17th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে একইসঙ্গে কর ব্যবস্থা সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা এবং আর্থিক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার সুপারিশও করেছে সংস্থাটি। আইএমএফ জানিয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসেই ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামী জুনে বোর্ড সভায়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় ১২ দিনের সফর শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। তিনি জানান, ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সফরে সংস্থার তিনটি ঋণ কর্মসূচি—এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)—এর আওতায় তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার অংশ হিসেবে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
আইএমএফ-এর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির আওতায় বাকি রয়েছে আরো ২৩৯ কোটি ডলার। সংস্থাটি আশা করছে, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বসন্তকালীন বৈঠকে ঋণ কিস্তির বিষয়ে একটি সমঝোতা চূড়ান্ত হবে।
আইএমএফ বলছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশকে আরো নীতিগত কড়াকড়ি অবলম্বন করতে হবে। মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। ২০২৪ সালের মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৫-৬ শতাংশের অনেক বেশি। সংস্থাটি জানায়, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.
সংস্থাটির মতে, রাজস্ব আয় বাড়াতে একটি স্বচ্ছ, সহজ এবং ন্যায্য কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত এখনও অনেক কম। ভর্তুকিনির্ভর করছাড় কমানোরও তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা জোরদার এবং ঝুঁকিভিত্তিক তদারকির ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে তারা।
বিনিময় হারের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থায় বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। এ পদ্ধতি চালু থাকায় হঠাৎ করে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি নেই। সংস্থাটির মতে, আরও নমনীয় বিনিময় হার প্রয়োগ করা হলে মূল্য প্রতিযোগিতা বজায় থাকবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠিত হবে এবং অর্থনীতি বাহ্যিক চাপ মোকাবিলায় আরো সক্ষম হবে।
এ সফরে আইএমএফ প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টা, অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশ ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে আসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে আসে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। সরকার আশা করছে, আগামী জুনেই চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হবে।
ঢাকা/এনএফ/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ