জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “ঐকমত্যের বিষয়ে আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। আমরা সব বিষয়ে একমত হতে পারব না, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক জায়গায় আমাদের একমত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” 

রবিবার (৪ মে) রাজধানীর সংসদ ভবনের এল. ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে ১২ দলীয় জোটের আলোচনার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। 

এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড.

বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ আলোচনার সূচনায় বলেন,  “শুধু এই টেবিলে বসে, এখানে আলোচনা করে আমরা জাতীয় ঐকমত্যের চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছাতে পারব, এটা আমি মনে করিনা। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কেবল কমিশনেরও নয়, বরং রাজনৈতিক দল, সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঐকমত্য কমিশন এক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে।” 

তিনি আরো বলেন, “যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, শুধুমাত্র সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে৷ এজন্য প্রতিটা পক্ষকেই কিছু ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও রাখতে হবে।”

আলোচনায় ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তাফা জামাল হায়দার এর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে আরো শাহাদাত হোসেন সেলিম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, রাশেদ প্রধান, লায়ন ফারুক রহমান, শামসুদ্দিন পারভেজ, মাওলানা আব্দুল রাকিব,  আবুল কাশেম, ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন এবং এম এ মান্নান উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। ১২ দলীয় জোটসহ এ পর্যন্ত ২৪টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। 

ঢাকা/এএএম/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ঐকমত য

এছাড়াও পড়ুন:

নানা বাধার কারণে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি: আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে বাধা দেওয়ায় রাষ্ট্রের যে কাঙ্ক্ষিত আমূল পরিবর্তন, সেটি সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে এক সেমিনারে আসিফ মাহমুদ এ মন্তব্য করেন।

‘রিবিল্ডিং দ্য নেশন: বাংলাদেশ ২.০’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সেমিনারটি সাজানো হয়েছে পাঁচটি প্যানেল আলোচনা দিয়ে।

চতুর্থ প্যানেল আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির খতিয়ান’। এতে অংশ নেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীরা অভ্যুত্থানের পরে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করতে চায়নি উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এর আগে সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা আমাদের জাতির রয়েছে। সবচেয়ে বেশি রয়েছে পাকিস্তান আমলের সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা। সবচেয়ে রিসেন্ট (সাম্প্রতিক সময়ের) রয়েছে এক-এগারোর অভিজ্ঞতা।’ তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘সরাসরি সেই এক-এগারোর মতো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে একধরনের বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই সরকারকে একটা অথরিটারিয়ান বা ওই ধরনের কর্তৃত্ব দেওয়ার সরকার হিসেবে গড়ে উঠতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছে।’

এর একটা বড় কারণ গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন বলে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এর ফলে যেটা হয়েছে, আমরা যে ধরনের ড্রাস্টিক্যাল চেঞ্জ (আমূল পরিবর্তন) চেয়েছিলাম, সেটা বাস্তবে সম্ভব হয়নি।’

সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমাদের একটা ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি সে সময়কার বাস্তবতায়। তবে সুসংবাদ হচ্ছে, ৫ আগস্ট, আজ থেকে তিন দিন পর আমরা সেই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করার মতো একটা জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। সেই ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার একটা ঐকমত্যে রাজনৈতিক দল, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আমরা আসতে পেরেছি। এটা একটা সুসংবাদ।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। সেটাও মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে আছে। তিনি বলেন, ‘পদ্ধতিগত কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য আছে, সেগুলোতে যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে আশা করি ৮ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ, যেটা আমরা বলছি জুলাই চার্টার, সেটার বিষয়ে একটা চূড়ান্ত ঘোষণা, চূড়ান্ত একটা বোঝাপড়ায় আসা সম্ভব হবে।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, এই সনদ বাস্তবায়নে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল গণভোটের কথা বলছে, কেউ কেউ গণপরিষদের কথা বলছে, সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে নির্বাচিত সরকারের ওপর বা তাদের সদিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা। সে বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে সরকারের এই উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

গণ-অভ্যুত্থানের পরে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। যার ফলে আমরা যেকোনো রাজনৈতিক দল বা যেই ক্ষমতায় আছে তার উইল থাক বা না থাক, তাকে প্রভাবিত করার মতো রাজনৈতিক সচেতন জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে।’

সেমিনারে চতুর্থ প্যানেল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন প্ল্যাটফর্মটির সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমাম।

এর আগে সকালে তিনটি প্যানেল আলোচনা হয়েছে। প্রথম প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি: সংকট ও সম্ভাবনা।’ তাতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। দুপুরে দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘ইন্টেরিম, গণকবরে কারা?’ এতে জুলাই শহীদের পরিবারের সদস্য, কবি, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীরা। তৃতীয় প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন: কোন পথে বাংলাদেশ?’ এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। সর্বশেষ প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী সাংস্কৃতিক রাজনীতি’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনেক ইহুদি ভোটার জোহরানকে সমর্থন করছেন, একমত তাঁর গাজা ইস্যুতেও
  • মৌলিক সংস্কারে শর্ত সাপেক্ষে একমত হওয়া উদ্বেগজনক
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে আবার আলোচনা
  • সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন
  • ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে গতি আনতে চায় কমিশন
  • রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র আর বেশিদিন টিকবে না
  • ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সনদ প্রকাশ উচিত নয়
  • ঐকমত্য হয়েছে বেশ কিছু মৌলিক সংস্কারে
  • নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ
  • নানা বাধার কারণে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি: আসিফ মাহমুদ