সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচন চায় এনপিপি
Published: 4th, May 2025 GMT
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১১২টিতে একমত হয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট (এনপিপি)। শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জোটের বৈঠক শেষে এ কথা জানানো হয়। জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ২৮টি প্রস্তাবে আংশিক একমত হয়েছি। দুয়েকটি বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করে নেব। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি, আগে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পর পার্লামেন্ট স্থানীয় নির্বাচন করবে।
তিনি বলেন, তারা (ঐকমত্য কমিশন) আমাদের বলেছে, একসঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সম্ভব কিনা। আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশনই বলেছে একসঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। অন্য একটি বিষয়ে একমত হয়েছি তা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ তিন থেকে চার মাস করলে ভালো হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। আমরা বলেছি, সংসদ সদস্যের মাধ্যমে হতে হবে। এর বাইরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংযুক্ত করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, সংসদে আসন সংখ্যা ৩০০ থাকতে হয়। নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০ হবে, এতে আপত্তি নেই। বিচার বিভাগের বিষয়ে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। আমরা বলেছি, জ্যেষ্ঠতা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হবেন। হাইকোর্ট থেকে অ্যাফিলিয়েট ডিভিশনে এসব বিচার হবে। যেসব বিচারপতি দুর্নীতিপরায়ণ, তাদের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বাদ দিতে হবে। পরপর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। এর পর একবার বিরতি দিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে হবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, অনির্বাচিত সরকার বেশি দিন থাকলে দেশে নানা সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, নির্বাচিত সরকার যেভাবে সুষ্ঠুভাবে দেশ চালাতে পারে, অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এই যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা অনেক অসুবিধায় আছি। কে বা কারা মানবিক করিডোরের প্রস্তাব দিয়েছে, আর আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তাতে সম্মতি দিয়েছেন। এটা তো দেশের সঙ্গে নির্বাচিত একটা সরকার থেকে করতে হবে। আমরা যারা পলিটিক্যাল পার্টি আছি, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এটা করল। এই মানবিক করিডোর যে সামরিক করিডোর হবে না, কে বলতে পারে। এটা যে আরেকটি গাজা হবে না, সেটা কে বলতে পারে? এ জন্য আমরা বলছি, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ কী? তাদের প্রথম কাজ, জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। ড.
এদিকে ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায় বলে জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এ ব্যাপারে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় সনদ তৈরি করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। সেই চেষ্টায় আমরা আপনাদের (জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট) সহযোগিতা পেয়েছি, রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি।
আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের (মার্ক্সবাদী) আলোচনা হয়েছে। দলটির সমন্বয়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের হয়ে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জয়দীপ ভট্টাচার্য, শফি উদ্দিন কবির আবিদ প্রমুখ ।
এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল, তা ধরে রাখতে হবে। সেই ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরি হবে, যা আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা নির্দেশ করবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার অবসান ঘটিয়ে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে মনোযোগী হতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনারা দয়া করে ওই সমস্যাগুলো সমাধান করে যাতে সবাই একসঙ্গে আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারি, এই সমস্যার সমাধান করে আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারি, সেই পথে এগিয়ে চলুন।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
এদিন সকালেই জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর থেকে বিএনপি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে সংস্কার প্রস্তাবগুলোই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের সভায় আলোচনা হয়নি, এমন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিএনপি।
গণসংহতি আন্দোলনের অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এই দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’
আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগেযেকোনো চক্রান্তকে পরাজিত করতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে ষড়যন্ত্র আমাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে, তাকে পরাজিত করতে হবে। এখানে আমরা বিভিন্ন দল করতে পারি, বিভিন্ন মত থাকতে পারে, বিভিন্ন পথ থাকতে পারে, কিন্তু একটা বিষয়ে আমরা সব সময় এক ছিলাম, বাংলাদেশের ব্যাপারে; সবার আগে বাংলাদেশ—এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক জীবনে হতাশাবাদী নই; কারণ, আমি বিশ্বাস করি যে ন্যায়ের জয় হবেই, সত্যের জয় হবে।’
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা গণসংহতি আন্দোলনের সাফল্য কামনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন অতীতে আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, সব সময় আপনাদের সঙ্গে থাকব; কিন্তু অবশ্যই আপনাদেরকে নিজে এই যে জায়গা তৈরি করেছেন, তার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য কেউ সেটা করে দেবে না।’
শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা এবং শহীদ ওমর নুরুল আবছারের স্ত্রী ফারজানা জাহান। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।
কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া, নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য হিস্যার দাবি এবং ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে গণসংহতি আন্দোলন তাদের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন করছে। তিন দিনের এই আয়োজনে সারা দেশ থেকে প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা দলের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগে