পাকিস্তানের পাঞ্জাব এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের ছয়টি স্থানে বুধবার ভারত গভীর রাতে বিমান হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা ‘ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ঝুঁকি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হন। ইসলামাবাদ পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে। সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীর মতে, জবাবে বেশ কয়েকটি ভারতীয় চেকপোস্ট ধ্বংস করা হয়েছে। 

দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনাকর পরিস্থতি নিয়ে পাকিস্তানের কূটনীতিকমালিহা লোধি বলেছেন, “এটি ভারতীয় আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট অত্যন্ত গুরুতর সংকট। পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় পোস্ট ধ্বংস করে ভারতীয় আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পাকিস্তান বলেছে,  তারা এখন ভারতীয় আক্রমণের জবাব দেবে। তারা প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। কারণ কয়েক বছর অন্তর ভারত বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর জন্য সীমান্ত বিধি লঙ্ঘন করে। পাকিস্তান চায় না যে এটি নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠুক, যার ফলে কৌশলগতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।”

লোধি আরো বলেন, “পারমাণবিক পরিবেশে আরো উত্তেজনা গুরুতর ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ। বড় উত্তেজনা এড়ানো সম্ভব কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে আমরা এটি প্রতিরোধে মার্কিন হস্তক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অতীতের সংকটগুলো সবসময় ওয়াশিংটনের মাধ্যমে প্রশমিত করা হয়েছে।”

পাকিস্তানের সিনিয়র বিশ্লেষক মাজহার আব্বাস বলেছেন, “৭ মে, দিনটি পাকিস্তানের জন্য আশাব্যঞ্জক কারণ আমরা কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, কূটনৈতিক ফ্রন্টেও ভারতকে পরাজিত করেছি।
ভারত একটি চলচ্চিত্র চালিয়েছে, আমরা একটি ট্রেলার চালিয়েছে, যদি তারা যুদ্ধে এগিয়ে যেতে চায়, আমরা প্রস্তুত।.

..পাকিস্তান তাদের তিনটি ফ্রন্টে পরাজিত করেছে: যুদ্ধ, মিডিয়া এবং কূটনীতি। যদি আমরা এই সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, তাহলে আমরা সফল হব।”

পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, “পাকিস্তানে ভারতের হামলা ২০১৯ সালের চেয়ে অনেক বড় আকারের। অনেক রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করা অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা ২০১৯ সালেরও মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, তারা ইতিমধ্যেই ২০১৯ সংকটের যেকোনো সময়ের তুলনায় ক্রমবর্ধমান সিঁড়িতে উপরের দিকে উঠে গেছে। এই দুটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, এমনকি প্রতিরোধক হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াই, একে অপরের বিরুদ্ধে ... প্রচলিত সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে ভয় পায় না। ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বাস্তব। এবং এটি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।”

আইনজীবী জিবরান নাসির বলেছেন, “ভারত দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের মতো আচরণ করে, বেসামরিক নাগরিক এবং মসজিদগুলোতে হামলা চালিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে। পহেলগামে পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না দিয়ে, মোদি সরকার জেনেভা কনভেনশন , জেনেভা প্রোটোকল, হেগ কনভেনশন, হেগ কনভেনশন ১৯৫৪, আইসিসির ১৯৯৮ সালের রোম স্ট্যাচুর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং আইসিআরসির সংশোধিত কাস্টমারি আইএইচএল-এর বিধান লঙ্ঘন করে যুদ্ধাপরাধের আশ্রয় নিয়েছে। ভারতের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করা এবং সামরিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি পরিমিত ছিল এবং আত্মরক্ষার অধিকার রক্ষায় করা হয়েছিল।”

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ম ন ভ প ত ত কর বল ছ ন ক টন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জবি শিবিরের মেধাবীদের তালিকায় নেই ৩ বিভাগের শিক্ষার্থী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেধাবী শিক্ষার্থীদের ‘কবি মতিউর রহমান মল্লিক মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। তবে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি সংস্কৃতি-সম্পর্কিত নাট্যকলা, সংগীত ও ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের কোনো শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত না করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে সংগঠনটি।

জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ মাঠে ২০১৮–১৯ ও ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের প্রতি বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের হাতে এই মেরিট অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই তিন বিভাগের কোনো শিক্ষার্থীর নাম তালিকায় ছিল না।

আরো পড়ুন:

মালয়েশিয়ায় ‘হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বাকৃবির সাবেক উপাচার্য

যবিপ্রবির শিক্ষার্থীর আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক অর্জন

নাট্যকলা বিভাগের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মো. ইমাম হোসেন বলেন, “ছাত্রশিবির কাকে বৃত্তি দেবে, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ থেকে কলা অনুষদের তিনটি বিভাগ বাদ দেওয়া নিন্দনীয়, এটা প্রকাশ্য বৈষম্য ও স্বল্পজ্ঞানের প্রমাণ। নাট্যকলা, সংগীত, ফিল্ম—এসব বিভাগও বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। এগুলো বাদ দেওয়া সংস্কৃতিকে ছোট করে দেখার চেষ্টা।”

তিনি আরো বলেন, “যে কবি মতিউর রহমান মল্লিকের নামে পুরস্কার, তিনি নিজেই ছিলেন সংস্কৃতিমনা কবি ও গীতিকার। তার নামের সঙ্গে এমন বর্জন বেমানান।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগীত বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “যদি সত্যিই মেধার ভিত্তিতে পুরস্কার দেওয়া হয়, তাহলে সেটা সব বিভাগের শিক্ষার্থীর প্রাপ্য। আমাদের বিভাগগুলোকে কেন বাদ দেওয়া হলো, জানতে চাই। আশা করি, শিক্ষক ও বিভাগীয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।”

নাট্যকলা বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন চাকমা বলেন, “আমাদের আবর্তনের স্নাতক পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি—এটা যুক্তিযুক্ত কারণ হতে পারে। তবে আয়োজকরা বিভাগগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কি না, সেটাও প্রশ্ন। যদি যোগাযোগ না করে থাকে, তাহলে সিদ্ধান্তটা এককেন্দ্রিক মনে হয়। অথচ অন্য বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা হলে সেটা উদারতার পরিচয় দিত। যদি বিশেষায়িত বিভাগগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সেটা স্পষ্ট বৈষম্য। এর দায় সংগঠনটির ওপরই বর্তাবে।”

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমি সর্বশেষ ৭ম সেমিস্টারের ফলাফলে প্রথম হয়েছিলাম। কিন্তু এই মেরিট অ্যাওয়ার্ডের বিষয়ে জানতে পারি অনুষ্ঠান হওয়ার পর ব্যানার দেখে। আমাদের বিভাগের কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে আক্ষেপ হয়েছে।”

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম আরিফ বলেন, “আমরা খুব স্বল্প সময়ে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছি। কন্ট্রোলারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের অনেকগুলোই ভুল ছিল। তবুও আমরা রেজিস্ট্রেশন চালু রেখে বিভাগগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি।”

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, “দুই-একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, এজন্য আমরা দুঃখিত। তবে যারা রেজিস্ট্রেশন করেছে, সবাইকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এখনো যেসব যোগ্য শিক্ষার্থী পুরস্কার পাননি, তারা রেজিস্ট্রেশন করলে আমরা তাদেরও সম্মাননা প্রদান করব।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উত্তর কোরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান কিম ইয়ং নাম মারা গেছেন
  • জবি শিবিরের মেধাবীদের তালিকায় নেই ৩ বিভাগের শিক্ষার্থী