ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতার নাম উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। সেটা শুধু খেলার মাঠেই নয়, অর্থের হিসাবেও হয়ে উঠেছে এক মহাযুদ্ধ। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন দল পেতে যাচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ছুঁতে পারে।

উয়েফা জানিয়েছে, চলতি মৌসুমের জন্য তারা প্রাইজমানি বাবদ মোট বরাদ্দ রেখেছে ২৪৩.

৭ কোটি ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। গত মৌসুমের তুলনায় এটি প্রায় ৪০ কোটি ইউরো বেশি।

এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন দল পাবে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৪৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। রানার্স-আপ দলের জন্য রয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ইউরো। অর্থাৎ ২৫৫ কোটি টাকা। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া দুটি দল বার্সেলোনা ও আর্সেনালও খালি হাতে ফিরছে না। তাদের দেয়া হচ্ছে ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো করে। যা প্রায় ২০৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

আরো পড়ুন:

২০২৬ বিশ্বকাপে কি খেলতে পারবে রাশিয়া, যা জানালেন ট্রাম্প

‘আমরা এখানে এসেছি কারণ আমাদের সেটা প্রাপ্য’

চ্যাম্পিয়নস লিগে তিন ভাগে হয় টাকা বণ্টন:
চ্যাম্পিয়নস লিগের টাকা তিনটি ভাগে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। যাথা- অংশগ্রহণ ফি, পারফরম্যান্স বোনাস এবং সম্প্রচার রেভিনিউ। প্রতিটি অংশগ্রহণকারী ক্লাব পাচ্ছে নির্ধারিত ১৮.৬২ মিলিয়ন ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা।

পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯১.৪ কোটি ইউরো। যেখানে প্রতিটি জয় বা ড্রয়ের ভিত্তিতে বাড়তে থাকবে ক্লাবগুলোর আয়। ইউরোপিয়ান র‍্যাংকিংয়ের ওপর ভিত্তি করে যে ক্লাব সবচেয়ে উপরে থাকবে তারা পাবে সর্বোচ্চ ১৩৬ কোটি টাকার বেশি। আর সবচেয়ে নিচের দল পাবে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা।

এছাড়া ‘ব্রডকাস্ট মার্কেট পুল’ নামক বিভাগের মাধ্যমে দলগুলো আরও অর্থ পাবে, যার নির্ধারিত বাজেট ৮৫.৩ কোটি ইউরো বা প্রায় ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রতিটি ক্লাবের জনপ্রিয়তা, বাজারমূল্য ও সম্প্রচার চাহিদার ওপর নির্ভর করে এখানে ভাগ করা হবে অর্থ।

তাহলে সর্বোচ্চ কত টাকা পেতে পারে একটি ক্লাব?
সবকিছু মিলিয়ে—অংশগ্রহণ ফি, পারফরম্যান্স বোনাস, র‍্যাংকিং ইনসেনটিভ এবং মিডিয়া মার্কেট পুল থেকে একটি ক্লাব সর্বোচ্চ ‘১২০ মিলিয়ন ইউরো’ অর্থাৎ প্রায় ‘১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা’ পর্যন্ত আয় করতে পারে।

কে জিতবে এই লড়াই?
এই বিপুল অর্থ কার হাতে যাবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ফাইনাল উঠেছে ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেন্ত জার্মেই (পিএসজি) ও ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলান। আগামী ৩১ মে দিবাগত রাতে ফাইনালে মুখোমুখি হবে দল দুটি। এখন অপেক্ষা শুধু শেষ বাঁশির। যেখানে বিজয়ী শুধু শিরোপাই নয়, গর্ব আর বিপুল সম্পদেরও মালিক হবে।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল প এসজ চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ম ল ন চ য ম প য়নস ল গ সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

সাইফ হাসান: খোলস থেকে বেরিয়ে রঙিন ভুবনে পায়চারি

 ‘‘হি ইস সিরিয়াসলি সিরিয়াস ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার।’’
শ্রীলঙ্কান স্পিনার ওয়েল্লালাদেকে ইনসাইড শটে ছক্কা উড়ানোর পর বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান সাইফ হাসানকে এভাবেই প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন ধারাভাসকার সাঞ্জায় মাঞ্জারেকার। সাইফের ওই শট হরহামেশা দেখা যায়। কিন্তু থুসারার লেগ স্ট্যাম্পে পায়ের উপরের বলে স্রেফ ফ্লিক করে যেই ছক্কা উড়িয়েছেন তা চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল। হাই ব্যাকলিফটে আলতো সুইং, পেছনের পায়ে পুরো ভারসাম্য। টাইমিং একশোতে একশ। সবমিলিয়ে পিকচার পারফেক্ট। তাইতো আকাশ চোপড়া বলতে বাধ্য হন, ‘‘এটাকেই বলে ট্যালেন্ট।’’

গত রাতে দুবাইয়ে সাইফ হাসানের ওই শট এখনও মুগ্ধ করে রেখেছে ক্রিকেট প্রেমিদের। সামনে ওই শটের চর্চাও হবে বেশ। টি-টুয়েনটি যুগে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেন ব্যাটসম্যানরা। তবে সাইফের শট যেকোনো বিশেষণ, জ্যামিতির পরিমাপকে হার মানাবে। শিল্পির আরাধ্য ক্যানভাসে রংধনুর আঁচড়।

৪৫ বলে ৬১ রানের ইনিংসে ডানহাতি ব্যাটসম্যান নিজের শেষ ৩ বছরের সবটুকু পরিশ্রম, অযুত-নিযুত ঘামবিন্দু ঝরানোর ফল পেয়েছেন। নিজেকে পাল্টে তৈরি করেছেন। নিজেকে ভেঙে গড়েছেন নতুন করে।
অফস্টাম্পের বাইরের বল লাগাতার ছেড়ে দেওয়া, বলের ওপর শেষ পর্যন্ত নজর রাখা, ধৈর্য ও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব‌্যাটিং করার মানসিকতায় সাইফ হয়ে উঠেন অনন‌্য। যাকে মনে করা হচ্ছিল বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে লম্বা রেসের ঘোড়া।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই প্রতিফলন দেখা যায়। জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট তিন ডাবল সেঞ্চুরি তার নামের পাশে। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পরবর্তী ব‌্যাটন থাকবে তার কাছেই। কিন্তু বিশ্বাস ও ভাবনার সঙ্গে মাঠের ক্রিকেটে আকাশ পাতাল পার্থক‌্য।
টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক হলেও রাঙাতে পারেননি। নিজেকে পাল্টে আক্রমণাত্মক ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবেও হাজির করেন। তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও বাদ পড়তেও সময় নেননি।
হাল ছাড়েন না সাইফ। আক্রমণাত্মক ব‌্যাটিংয়ে খুঁজে পান দিশা। চলে তার একক লড়াই। যেখানে পাশে পেয়েছিলেন অনেককেই। ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরেন। কখনো সফল হয়েছেন। কখনো ব‌্যর্থ। তবে পরিশ্রম থামাননি। খোলস থেকে বেরিয়ে রঙিন ভুবনে পায়চারি করতে করতেই অনন্য হয়ে উঠেছেন।
সবশেষ বিপিএলে ১৩ ম‌্যাচে ৩০৬ রান করেছেন ১১৯.৬ স্ট্রাইক রেটে। এরপর জিএসএলে ৪ ম‌্যাচে ১২৭.৩ স্ট্রাইক রেটে ৮৪ রান এবং সবশেষ টপ এন্ড টি-টোয়েন্টিতে ৬ ম‌্যাচে ১২১.১ স্ট্রাইক রেটে ১৩২ রান করেন সাইফ।

পরিসংখ‌্যান তার পারফরম‌্যান্স নিয়ে বড় উচ্ছ্বাস দেখাবে না নিশ্চিতভাবেই। বড় কিছু বা উল্লেখযোগ‌্য কিছু আছে তেমনও নয়। তবে নিজেকে পাল্টে অন‌্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে রাখা, পরিস্থিতি বিবেচনায় পারফরম‌্যান্সে পরিবর্তন আনা এবং দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একজন খেলোয়াড় সব সময়ই লক্ষ‌্যে পৌঁছে যায়। সাইফের ক্ষেত্রে তেমনটিই হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দলে ফিরে ভালো করার সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন। কাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাসলো তার ব্যাট। ভালো করতে পারেন আর ভালো করে দেখানোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বাসের রেণু ছড়িয়ে, বুকভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ২২ গজে ধুমকেতু হয়ে এসেছেন সাইফ। ধ্রুবতারা হয়ে উঠতে পারলেই আলোঝলমলে সময় কাটাবে দেশের ক্রিকেট।

ঢাকা/ ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাইফ হাসান: খোলস থেকে বেরিয়ে রঙিন ভুবনে পায়চারি