দেশে ফিরছেন নাহিদ-রিশাদ ও বাংলাদেশের দুই সাংবাদিক
Published: 9th, May 2025 GMT
পাকিস্তান-ভারত রাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে হঠাৎ বদলে গেল পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) মঞ্চ। নিরাপত্তা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছানোয় বাতিল করা হয়েছে টুর্নামেন্টের বাকি অংশ। আর সেই সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অংশগ্রহণকারী বিদেশি খেলোয়াড়দের। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন, নাহিদ রানা ও দুইজন ক্রীড়া সাংবাদিক আজ শুক্রবার (৯ মে) রাতে ইসলামাবাদ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
এই দুই তরুণ ক্রিকেটার পাকিস্তানে পিএসএলের ব্যস্ত সূচিতে খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসনের সম্ভাব্য হুমকিকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই বদলে যায় পরিস্থিতি। টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর দ্রুতই নেওয়া হয় বিদেশিদের নিরাপদ গমনব্যবস্থা। ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি নির্দিষ্ট ফ্লাইটে রিশাদ ও নাহিদের সঙ্গে অন্য বিদেশি ক্রিকেটারদেরও পাঠানো হয় দুবাইয়ে।
তবে শুধু ক্রিকেটাররাই নন, একই ফ্লাইটে ছিলেন বাংলাদেশের দুই ক্রীড়া সাংবাদিকও। দুবাই পৌঁছেও ক্রিকেটাররা থেকে যাবেন পিএসএলের হোটেলে। যদিও সাংবাদিকরা সেখান থেকে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেবেন।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতে হওয়ার ঘোষণা দিয়েও পিএসএল স্থগিত
স্থগিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ভারতের বাংলাদেশ সফর ও এশিয়া কাপ
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, আমরা শুধু আমাদের দুই ক্রিকেটারের কথা বলিনি, সাংবাদিকদের বিষয়েও সরাসরি অনুরোধ করেছি যাতে একই প্রক্রিয়ায় নিরাপদে তারা ফেরত আসতে পারেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে, রাজনৈতিক অস্থিরতার আগুনে পুড়ে ছিন্নভিন্ন হলো মাঠের ক্রিকেট। হঠাৎ থেমে গেল পিএসএলের গতি। তবে এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও আশার কথা—বাংলাদেশি ক্রিকেটার ও সাংবাদিকরা সুস্থভাবেই ফিরছেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার চার বছরের মধ্যেই সামরিক অভ্যুত্থানের চক্রে পড়ে দেশটি পথ হারিয়ে ফেলে। একই ধারা আবার দেখা যাচ্ছে গত বছর আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত কথিত ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র ক্ষেত্রেও। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ক্ষমতা গ্রহণ করে অন্তবর্তীকালীন সরকার। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতে, কথিত নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত একটি নিবেন্ধ এসব কথা বলা হয়েছে।
ইকোনমিস্টের প্রিন্ট সংস্করণের লিডার্স শাখায় ‘আনব্যান দ্য আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখাটি অনলাইন ভার্সনে ‘ব্যানিং দ্য অপজিশন ইজ নো ওয়ে টু রিভাইভ বাংলাদেশ’স ডেমোক্র্যাসি’ শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ড. ইউনূসের সরকারের হাতে খুবই কঠিন একটা কাজ তুলে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিনের অপশাসনে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়া, দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে যাওয়া এবং সরকারবিরোধীদের আইন বহির্ভূতভাবে মারধর করার ঘটনা ছিল সাবেক সরকারের আমলের প্রায় নিয়মিত ঘটনা। অর্থনীতি কিছুদিন অসাধারণ অগ্রগতি দেখালেও তা একসময় তাল হারিয়ে ফেলে। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে, দেশের এক-পঞ্চমাংশ তরুণ বেকার হয়ে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। মন্দার মধ্যে অর্থনীতি স্থিতিশীল রেখে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা নতুন করে ঋণ দিতে শুরু করেছে। তবে পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এর মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে এটি সুবিধাজনক বলে মনে করছে বর্তমান সরকার। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় ভারত অসন্তুষ্ট হয়েছে। গত বছর পর্যন্ত যেটি ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, এখন সেখানে উত্তেজনা বাড়ছে। ফলস্বরূপ, ভারত একটি ট্রানজিট চুক্তি বাতিল করেছে, বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠিয়েছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি বণ্টন চুক্তি পুনরায় আলোচনার দাবি জানিয়েছে।
ইকোনমিস্টের নিবন্ধে বলা হয়, ড. ইউনূসের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন নির্বাচনের পদ্ধতিতে সম্মত করিয়ে দেশের রাজনীতি নতুন করে গড়ে তোলা। তবে এর প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। আর এই রাজনৈতিক মনোমালিন্যের রেশ গড়াচ্ছে হাঙ্গামাতে। জুনের মাঝামাঝি একদল লোক এক সাবেক নির্বাচন কমিশনারকে হেনস্তা করে যার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ভোট কারচুপিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এতে দেশে-বিদেশে সৃষ্টি হয় ব্যাপক বিতর্ক। দুর্নীতির দায়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচারের আওতায় আনা যৌক্তিক হলেও, মনে করা হচ্ছিলো দলটির সাধারণ সদস্যরা নিজেদের পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে। এই নিষেধাজ্ঞা একটি বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধনের মাধ্যমে চালু করা হয়েছে, যা আইনি ও নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এটি সেই পুরোনো রাজনৈতিক প্রতিশোধের চক্রকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উচিত, আওয়ামী লীগের ওপর থেকে বিধিনিষেধ সরিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। তাদের এখনও ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
তাদের স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করবে, সে সম্ভাবনা কম। তবে সংসদে তাদের উপস্থিতিতে বিজয়ীরা জবাবদিহির মধ্যে থাকবে। নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে প্রতিহিংসার বদলে পুনর্মিলন প্রয়োজন।