ফেসবুকে মাঝেমধ্যেই সরব হয়ে ওঠেন রুমানা আহমেদ। তিন বছর ধরে জাতীয় দলে নেই, ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফুটে ওঠে সেই হতাশা, অভিমান। এমন প্রকাশ্যে না হলেও বাংলাদেশ নারী দলের আরও দুই সিনিয়র ক্রিকেটার জাহানারা আলম আর সালমা খাতুনেরও জাতীয় দলে না থাকা নিয়ে অভিমান আছে। জাহানারা এখন আছেন অস্ট্রেলিয়ায়, সালমার সময় কাটে খুলনায় অনুশীলন করে।

পঞ্চপাণ্ডব–পরবর্তী সময়ে ছেলেদের ক্রিকেট একটা সংকটের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। নারী ক্রিকেট ঠিক সেরকম সংকটে নেই, তবে ‘সিনিয়র’দের বিদায়ের বাঁশি সেখানেও বাজছে। নারী ক্রিকেটেও তারুণ্যের দিকেই তাকাচ্ছে বিসিবি। প্রিমিয়ার লিগে ৮ ম্যাচ করে খেলে সালমা ২১ আর রুমানা ১৪ উইকেট নিয়েও তাই নির্বাচকদের নজরের বাইরে। বিকেএসপিতে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ক্যাম্পে জায়গা হয়নি তাঁদের। ভবিষ্যতে ঘরোয়া ক্রিকেটে আহামরি কিছু করে না ফেললে তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের আর জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

রুমানা সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিসিবি যেন তাঁকে তাঁর ভবিষ্যতের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দেয়। বিসিবির নারী উইং থেকে যে একেবারেই তিনি কোনো ধারণা পাননি, তা অবশ্য নয়। ফিটনেসে উন্নতি আনতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তবে রুমানার দলের বাইরে থাকার অন্য কারণও আছে। জাতীয় দলে ফাহিমা খাতুন–স্বর্ণা আক্তারদের পারফরম্যান্সও রুমানার ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ করে তোলার একটা কারণ। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর দেওয়া স্ট্যাটাস নিয়েও বিরক্তি আছে বিসিবিতে।

সালমা আমাদের নারী ক্রিকেটের প্রথম তারকা। সে যদি অবসর নিতে চায়, তাহলে এটা বিসিবিকে জানাব।নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ

দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেও জাতীয় দল থেকে একরকম ছিটকে যাওয়া রুমানা ফিটনেস প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘ফিটনেসে যে উন্নতি হয়েছে, সেটা আমি কোথায় দেখাব? ওই সুযোগ তো দিতে হবে। আর নতুনদের কাছ থেকে মানুষ ফিটনেস চায়, পুরোনোদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা। আমি তো ঘরোয়া ক্রিকেটেও পারফর্ম করছি।’

অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে সবচেয়ে এগিয়ে সালমা। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক খেলোয়াড়ি জীবনের পর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। তবে আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যাওয়ারও ইচ্ছা আছে, হোক সেটি ঘরোয়া ক্রিকেটে। কারণ, জাতীয় দলে তাঁর ফেরার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, তা বুঝতে পারছেন সালমাও।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার ফেরার স্বপ্ন দেখেন কি না জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘আমি এটা বলতে পারব না। আমার কাজ পারফর্ম করা, করে যাচ্ছি। বাকিটা যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের হাতে।’ বাংলাদেশ নারী দলের সাবেক অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে আয়োজন করে বিদায় জানানোর ইচ্ছা বিসিবিরও। এ বিষয়ে বিসিবির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব পেলে ভেবে দেখবেন সালমা।

সালমার ভবিষ্যৎ নিয়ে নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ বলেছেন, ‘সালমা আমাদের নারী ক্রিকেটের প্রথম তারকা। সে যদি অবসর নিতে চায়, তাহলে এটা বিসিবিকে জানাব। তাঁকে যেন ভালোভাবে বিদায় দেওয়া যায়, সে জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমরা করব।’

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় জাহানারা আলম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় দল ফ টন স

এছাড়াও পড়ুন:

এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে ২২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ

দীর্ঘ সময় ধরে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। অর্থ সংকট ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নানা জটিলতায় এই অর্থ প্রাপ্তির অপেক্ষা আরও বেড়েছে। অবসর ও কল্যাণ সুবিধা মিলিয়ে ৮৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে। এসব আবেদনের বিপরীতে টাকা দেওয়ার জন্য বোর্ডে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। আর এই সংকট কমাতে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে ২২০০ কোটি টাকা বরাদ্দে সম্মতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে গত ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি সম্মতিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে ২০০০ কোটি টাকা (বন্ড হিসেবে) এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ‘মূলধন তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ২০০ কোটি টাকা (অনুদান হিসেবে) বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের চিঠিতে বলা হয়, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে অবসর সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীনে ‘১৩৫০০৩৪০০-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ এর অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ‘৩৬৩১১৯৯-অন্যান্য অনুদান’ খাতে ২০০০ কোটি টাকা অর্থ বিভাগের ১০৯০১০১-১২০০০১০০০৫৯১১১১২- অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি আপন করা হলো। বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।

শর্তে উল্লেখ করা হয়, (ক) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান ৬ অনুযায়ী অধিক আলোর লক্ষ্যে বোর্ডের অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ হিসাবে প্রদত্ত ২০০০ কোটি টাকা লাভজনক সরকারি সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে; (খ) সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার ১ (এক) সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে; এবং (গ) ‘স্থায়ী তহবিল’ হিসাব হতে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত ‘স্থায়ী তহবিল’ হতে কোন অর্থ অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধুমাত্র সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ‘চলতি তহবিলে’ জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।”

অন্যদিকে শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের চিঠিতে বলা হয়, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে কল্যাণ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীন ১৩৫০০৩৫০০-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ‘মূলধন তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ‘৩৬৩১১৯৯-অন্যান্য অনুদান’ খাতে ২০০ কোটি টাকা টাকা অর্থ বিভাগের ‘১০৯০১০১-১২০০০১০০০-৩৯১১১১২- অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।

শর্তে উল্লেখ করা হয়, (ক) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান ৭ এ বর্ণিত ‘মূলধন তহবিল” হিসাবে কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে প্রদত্ত ২০০.০০ (দুইশত) কোটি টাকা অধিক আয়ের লক্ষ্যে সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে;
(খ) সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার ১ সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে; এবং (গ) ‘মূলধন তহবিল’ হিসাব হতে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত ‘মূলধন তহবিল’ হতে কোন অর্থ অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধুমাত্র সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ‘সাধারণ তহবিলে’ জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।”

অবসর-সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬ শতাংশ হারে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআর থেকে মাসে আয় হয় পাঁচ কোটি টাকা। এই খাতে মাসে আয় হয় ৮০ কোটি টাকা, যা বছরে ৯৬০ কোটি টাকা। কিন্তু শুধু অবসর-সুবিধার জন্য মাসে প্রয়োজন হয় ১২০ ও বছরে এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে ঘাটতি ৪৮০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষকের আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন এখন নিষ্পত্তি করতে হলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এরপর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিলে কাউকে আর অবসর-সুবিধার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ৪ শতাংশ চাঁদার অর্থে পরিচালিত সরকারের আর্থিক এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। যার জন্য এককালীন তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা দরকার। এরপর প্রতি বছর সরকার ২০০ কোটি টাকা দিলে তা স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক বন সংরক্ষক মোশাররফের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  • সাবেক বন সংরক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করল দুদক
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারা কারাগারে
  • এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে ২২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
  • অবসর প্রসঙ্গে রহস্যময় ধোনি