ঘটকালির উপহার দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে গাছে বেঁধে মারধর
Published: 19th, June 2025 GMT
ঘটকালির উপহার হিসেবে লুঙ্গি দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তিকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সূত্রাপুর গোয়ালপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই ব্যক্তি বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত ব্যক্তির নাম মজিবর শেখ (৬৫)। তিনি সুঘাট ইউনিয়নের ওমরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় মজিবরের ছোট ভাই নজরুল শেখ শেরপুর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, আহত অবস্থায় মজিবর শেখকে গত রোববার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তাঁর শরীরে মারধরের একাধিক চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুঘাট ইউনিয়নের সূত্রাপুর গোয়ালপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের (২১) সঙ্গে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ঘাসুরিয়া গ্রামের মো.
আজ বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মজিবর শেখ বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে জহুরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের লোকজন আমাকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তাঁরা অভিযোগ করেন, বিয়ের পর মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না। এরপর তাঁরা একটি গাছের সঙ্গে আমাকে বেঁধে স্যান্ডেলের সঙ্গে গরুর গোবর লাগিয়ে এবং লাঠি দিয়ে হাতে, পায়ে ও মাথায় মারধর করেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে অন্তত এক ঘণ্টা ধরে মারধর করা হয়। পরে আমার ভাই নজরুল শেখ এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’
এ বিষয়ে কনের বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, ৯ জুন তাঁর মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়েছেন। মেয়েকে তুলে দেওয়ার দুই দিন পর থেকেই মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়ে ও তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের মেনে নিতে পারছেন না। বিয়ের আগে ঘটক মজিবর শেখ জানিয়েছিলেন ছেলের পরিবার খুব ভালো। এ কারণে তাঁর পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে একটু মারধর করেছেন।
মজিবর শেখের ছেলে মো. সোনাউল্লাহ শেখ বলেন, তাঁর বাবা কোনো পেশাদার ঘটক নন; টাকার বিনিময়ে ঘটকালিও করেন না। উপহারের কথা বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা অমানবিক।
শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তে মারধরের সত্যতা মিলেছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র র ল কজন ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামীকে ফিরে পেতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ‘র্যাঞ্চোর’ স্ত্রী গীতাঞ্জলি
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সোনম ওয়াংচুকের মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমো। গতকাল বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে তিনি হেবিয়াস কর্পাস (আসামিকে আদালতে হাজির করা) আবেদন দাখিল করেছেন।
আবেদনে গীতাঞ্জলি বলেছেন, এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনো পর্যন্ত তাঁর স্বামী সোনম ওয়াংচুকের স্বাস্থ্য ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। কেন তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়েও তাঁকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর হিংসাত্মক ঘটনার দুই দিনের মাথায় সোনম ওয়াংচুককে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পরেই তাঁকে লেহ্ থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজস্থানের যোধপুর কারাগারে। সোনমের গ্রেপ্তারি ‘বেআইনি’ দাবি করে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করেন গীতাঞ্জলি।
সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়াও গীতাঞ্জলি চিঠি লিখেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লাদাখের উপরাজ্যপাল কবীন্দ্র গুপ্ত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়ালকে।
প্রতিটি চিঠিতেই গীতাঞ্জলি স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে জানতে চেয়েছেন, জনগণের স্বার্থকে সমর্থন করা অন্যায় ও পাপ কি না। সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়টি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জানিয়েছেন। বলেছেন, এত দিন হয়ে গেলেও স্বামী কেমন আছেন, তা তাঁকে জানানো হয়নি। তাঁর সঙ্গে কথা বলানো হয়নি। বরং বেশ কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো দিয়ে তাঁদের নানাভাবে হয়রান করা হচ্ছে।
সোনমকে নিয়েই আমির খান তৈরি করেছিলেন ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমা। জনপ্রিয় সেই সিনেমায় সোনমের নাম ছিল ‘র্যাঞ্চো’। লাদাখের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছেন সোনম। প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবেশ–বান্ধব উদ্ভাবনী ক্ষমতার মধ্য দিয়ে তিনি সমাজের যে উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, সারা দেশ তার স্বীকৃতি দিয়েছে। উপকৃত হয়েছেন হিমালয়ে দিন ও রাত কাটানো ভারতীয় সেনা সদস্যরা।
কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার সোনমের পরামর্শ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি কিছুদিন আগেও ছিল তাঁর গুণমুগ্ধ। সোনমও সপরিবারে বিজেপিকে সমর্থন করে এসেছেন।
২০১৯ সালে জম্মু–কাশ্মীরকে দুই ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার পর সোনম প্রকাশ্যে সেই সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জয়গান করে লাদাখে মিছিল করেছিলেন। বিবৃতি দিয়েছিলেন।
অথচ সেই ব্যক্তিই ধীরে ধীরে হয়ে গেলেন বিজেপি সরকারের চোখের বালি। এতটাই যে জাতিসংঘের সহযোগিতায় পাকিস্তানের গণমাধ্যম ‘ডন’–এর উদ্যোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামাবাদে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন ‘ব্রিদ পাকিস্তান’–এ অংশ নেওয়ায় সরকারের চোখে তিনি ‘পাকিস্তানি চর’ হয়ে গেছেন।
লাদাখের শীর্ষ পুলিশ কর্তা এসডি সিং জামওয়াল সরাসরি সেই সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়ে দেন, আন্দোলনকারী যুব–জনতাকে সোনমই খেপিয়েছিলেন। হিংসা ছড়ানোর দায় তাঁরই।
শুধু তা–ই নয়, সোনম ওয়াংচুক যে কারণে সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত, তাঁর তৈরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম যে কারণে দেশে–বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সরকারের তদন্তের আওতায় সেগুলোকেও টেনে আনা হয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, সোনমের আন্দোলন এমন কোনো স্বার্থে ঘা দিয়েছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শাসকের নয়নের মণি থেকে তাই তিনি হয়ে উঠেছেন চোখের বালি।
লাদাখের আপামর জনতা পৃথক রাজ্য গঠন, নিজস্ব বিধানসভা এবং গোটা অঞ্চলকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সোনম ওয়াংচুক সেই আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছেন। সে জন্য বারবার গান্ধীজির শেখানো পথে অনশন সত্যাগ্রহ আন্দোলন করছেন।
গত সেপ্টেম্বরেও সোনম এই দাবি পূরণে অনশন করছিলেন। হিংসাত্মক ঘটনার পর তার নিন্দা করে তিনি অনশন প্রত্যাহার করেন। অথচ একদিন পরেই তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোনমের বক্তব্য, লাদাখের পরিবেশ রক্ষার একমাত্র উপায় উপজাতি অধ্যুষিত এই বিস্তীর্ণ এলাকাকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনা। কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতারা ২০১৯ সাল থেকেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। না হলে লাগামছাড়া ও পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের নামে লাদাখের পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট নষ্ট হয়ে যাবে। গোটা দেশের পক্ষে তা হবে মারাত্মক।
যদিও সরকার মনে করে, লাদাখের খনিজ সম্পদ ও নবায়নযোগ্য শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার উন্নয়নের জোয়ার আনবে। বেসরকারি শিল্পপতিরা ইতিমধ্যেই সেখানকার বিপুল সৌর ও তাপবিদ্যুৎ সম্ভাবনা বাস্তবায়িত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। লিথিয়ামের মতো বিরল খনিজ সম্পদের সদ্ব্যবহারে তারা উৎসাহী। লাদাখ ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হলে তা সম্ভবপর না–ও হতে পারে।
সোনমের গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করেছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের লেহ অ্যাপেক্স বডি (এপিএল) ও মুসলিম প্রধান কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। দুই সংস্থা লাদাখের দাবিদাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।
৬ অক্টোবর সেই বৈঠকের পরবর্তী দিন নির্ধারিত। কিন্তু ইতিমধ্যেই দুই সংগঠন আলোচনায় অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, সোনমসহ গ্রেপ্তার সবার নিঃশর্ত মুক্তি ও সব অভিযোগ প্রত্যাহার ও সুপ্রিম কোর্টের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁকে টানা এক বছর বিনা বিচারে আটক রাখা যায়। এনএসএ, ইউএপিএ এবং এ ধরনের বিভিন্ন আইনে ধৃত বহু আন্দোলনকর্মীকে বছরের পর বছর বিনা বিচার ও বিনা জামিনে আটক রাখা হয়েছে। সোনম ওয়াংচুকের ভাগ্যও তেমন হবে কি না, তা শীর্ষ আদালত বিচার করবেন। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের ছুটি। গীতাঞ্জলির আবেদনের বিচার সম্ভবত তারপর।