ফাঁস হওয়া ফোনালাপে সংকটে থাই সরকার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমাপ্রার্থনা
Published: 19th, June 2025 GMT
কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপ ঘিরে থাইল্যান্ডে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন। আলোচিত ওই ফোনালাপের জেরে তাঁর সরকার পতনের মুখে পড়েছে।
ফোনালাপ ফাঁসের জেরে পেতংতার্নের প্রধান জোটসঙ্গী রক্ষণশীল ভুমজাইথাই পার্টি বুধবার জোট ত্যাগ করে। পেতংতার্নের পদত্যাগ অথবা নির্বাচন ঘোষণার দাবিও জোরালো হচ্ছে। এতে থাইল্যান্ড নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়েছে।
এই রাজনৈতিক সংকট শুরু হলো এমন এক সময়ে যখন থাইল্যান্ড তার ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্কের চাপ এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভুমজাইথাই পার্টির অভিযোগ, ফাঁস হওয়া ফোনালাপে পেতংতার্নের আচরণ দেশের মর্যাদা ও সেনাবাহিনীর সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে।
চাপের মুখে সেনাপ্রধান ও নিজের পেউ থাই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চান থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন। থাকসিন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
সংবাদ সম্মেলনে পেতংতার্ন বলেন, ‘কম্বোডিয়ার এক নেতার সঙ্গে আমার কথোপকথনের অডিও ফাঁস জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে তাঁকে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে চলমান সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়। ২০২৩ সালে পদ ছাড়লেও হুন সেন এখনো দেশটির রাজনীতিতে প্রভাবশালী।
সেখানে পেতংতার্ন হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন এবং থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেনা কমান্ডারকে নিজের ‘প্রতিপক্ষ’ বলে উল্লেখ করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
আরও পড়ুনযেভাবে ফ্যাশন ও স্টাইলে নজর কেড়েছেন থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা১৯ আগস্ট ২০২৪ভুমজাইথাই পার্টির ৬৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন হারানোর ফলে পেতংতার্নের পক্ষে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে ২০২৩ সালের মে মাসের নির্বাচনের মাত্র দুই বছর পরই থাইল্যান্ডে আবারও আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পেতংতার্নের দুই বাকি জোটসঙ্গী—ইউনাইটেড থাই নেশন ও ডেমোক্র্যাট পার্টির পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আলাদাভাবে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
পেতংতার্ন আশা করছেন, তাঁর প্রকাশ্য ক্ষমাপ্রার্থনা ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঐক্য প্রদর্শনের মাধ্যমে হয়তো এই দলগুলোকে জোটে রাখা যাবে।
তবে এই দুই দলের যেকোনো একটি জোট ছাড়লেই ক্ষমতাসীন সরকার পতনের মুখে পড়বে। ফলে হয় আগাম নির্বাচন না হয় নতুন করে জোট গঠনের রাজনৈতিক উদ্যোগ শুরু হতে পারে।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডের নতুন ও সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী কে এই পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা১৭ আগস্ট ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ১ শতাংশ ধনকুবেরের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বেড়েছে
ভারতের সবচেয়ে ধনী মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির সম্পত্তি গত প্রায় আড়াই দশকে দেড় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ‘জি২০’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটাই দেখা গিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ ব্যক্তির সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর আনন্দবাজার অনলাইন।
স্বতন্ত্র অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তৈরি জি২০ গোষ্ঠীর ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি কমিটি অব ইনডিপেনডেন্ট এক্সপার্টস অন গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি’ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগ্লিট্জ়। এ ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন জয়তী ঘোষ, উইনি ব্যানয়িমা, ইমরান ভালোদিয়াসহ অন্যেরা। তাদের প্রতিবেদনে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ রয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত আড়াই দশকে (২০০০-২০২৪) বিশ্বে যত নতুন সম্পত্তি তৈরি হয়েছে, তার ৪১ শতাংশই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের কব্জায়।
কমিটির নেতৃত্বে থাকা স্টিগ্লিট্জ় এই বিশ্বব্যাপী বৈষম্য নিয়ে সতর্ক করে করে দিয়েছেন। তার মতে, এই বৈষম্য ‘জরুরি’ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জলবায়ুগত দিক থেকে উদ্বেগজনক।
জি২০ গোষ্ঠীর ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই একই সময়ে চীনেও সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সম্পত্তির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য কখনো কাম্য নয়। এটি ঠেকানো যায় এবং রাজনৈতিক ভাবে এটিকে বদলানো যেতে পারে।”
এতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র দূরীকরণ মন্থর হয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় প্রায় থেমে গিয়েছে দারিদ্র দূরীকরণ। কোথাও কোথাও দারিদ্র বৃদ্ধি পেতেও শুরু করেছে। যে দেশগুলোতে আর্থিক বৈষম্য বেশি, সেখানে গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের আশঙ্কাও তুলনামূলকভাবে বেশি।
ঢাকা/শাহেদ