ছাত্রদল নেতা ‘মুজিবীয় শুভেচ্ছা’ জানালেন, মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন বিএনপি নেতা
Published: 22nd, June 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান দলীয় এক সভায় ‘মুজিবীয় শুভেচ্ছা’ জানানোয় সংগঠনের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল শনিবার তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
ছাত্রদলের গাজীপুর জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সরকার রাকিব হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের দায়িত্বশীল পদে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর (নাহিদ হাসান) বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহাগ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবালের উপস্থিতিতে জেলা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
স্থানীয় ছাত্রদলের কয়েকটি সূত্র দাবি করেছে, নাহিদ হাসান একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপরও তাঁকে প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা তাঁর পুরোনো কিছু ছবি ও ফেস্টুনও ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে নাহিদ হাসানকে সভাপতি করা হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ৪-৫ মাস আগের বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
সাত সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে মাইক্রোফোনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন নাহিদ হাসান। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে মুজিবীয় শুভেচ্ছা জানাই।’ তখন রফিকুল ইসলাম দ্রুত মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল বলেন, ‘একসময় যখন ছাত্রদলের নেতা-কর্মী পাওয়া যেত না, তখন নাহিদ হোসেন আমাদের পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। তাঁর বক্তব্য নিয়ে সংগঠনে প্রশ্ন উঠেছে, তাই তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের ধনখড়েরাও অপমানিত হয়ে অপসারিত হয়েছিলেন
প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় এক কলামে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় কী পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন, তার বিস্তারিত লিখেছেন। সৌম্য লিখেছেন, এভাবে অসম্মানিত অপসারণ আরও ভয়ংকরভাবে এই বার্তা ছড়িয়ে দিল, ‘কর্তার’ রোষানলে পড়লে কারও রেহাই নেই।
এই বার্তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক আগেই প্রচারিত হয়েছিল। আমাদের দেশেও ধনখড় ছিল। অনেকে হয়তো জানেন না বা ভুলে গেছেন, আমাদের ধনখড়দেরও অনেক অসম্মান করে বিদায় দেওয়া হয়েছিল। তবে ‘কর্তার’ ইচ্ছায় নয়; বরং দুই ‘কর্ত্রীর’ ইচ্ছায়। সেসব ঘটনা ভারতের ধনখড়ের চেয়েও চমকপ্রদ এবং রাজনীতির নাটকে ভরপুর।
ধনখড় একসময় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন। সে সময়টায় রাজ্যের রাজনীতিতে তাঁর অতি সক্রিয়তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অতিষ্ঠ করে তোলে। নিয়তির কী উপহাস, মোদি তাঁকে উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের একটা বড় কারণ ছিল ‘তাঁর অতি সক্রিয়তা’। অন্য বড় কারণটা ছিল ‘প্রটোকলের বিষয়ে স্পর্শকাতরতা’। আশ্চর্য এক মিল—বাংলাদেশের ধনখড়দের অপমান ও অপসারণের কারণও ছিল ঠিক এই দুটি।
বাংলাদেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ‘অতি সক্রিয়তা’ ও ‘প্রটোকলের বিষয়ে স্পর্শকাতরতা’ নিয়ে সুপ্রিম নেতাদের দেওয়া লাইনটা কিছুটা ‘অতিক্রম’ করেছিলেন। প্রতিক্রিয়া ছিল তৎক্ষণাৎ, তাঁদের অপমানিত হয়ে চাকরি হারিয়ে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। এই দুটি ঘটনা একসময় দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় দারুণ ঝড় তুলেছিল।
২.ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা কফিল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন তুখোড় রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের একজন বরেণ্য নেতা। ১৯৭২ সালে বাবার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ চেয়েছিল বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করবেন। কিন্তু তিনি তা চাননি। তিনি একজন শীর্ষ স্থানীয় মেডিকেল শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসক হিসেবে নিজে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে তাঁর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান ‘আপনার ডাক্তার’ ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়।
১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর তিনি জিয়ার উপদেষ্টা হন। পরে রাষ্ট্রপতি জিয়া যখন নিজের রাজনৈতিক দল গঠন করেন ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী হলেন দলের মহাসচিব। সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলেন। যে মানুষটা রাজনীতিকে এত কাছ থেকে দেখার পরও রাজনীতি থেকে এতটা বছর দূরে ছিলেন, হঠাৎ কেন রাজনীতিতে যোগ দিলেন?
খালেদা জিয়া হয়তো মনে করতেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বি চৌধুরী তাঁকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করতেন না। রাষ্ট্রপতির প্রটোকলের প্রতি অবিচল থাকায় চরম শাস্তি পেতে হলো বি চৌধুরীকে। তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেওয়া হয়নি, প্রধানমন্ত্রী একটিবার তাঁর সঙ্গে কথা বললেন না। এই অপমান ধনখড়ের অপমানের চেয়ে কম নয়।রাষ্ট্রপতি জিয়ার সঙ্গে বি চৌধুরীর খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জিয়া খুব বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করতেন বি চৌধুরীকে। জিয়ার মৃত্যুর পর একসময় খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। দলে ও খালেদা জিয়ার সরকারে বদরুদোজ্জা চৌধুরী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি তাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আইন অনুযায়ী তিনি মন্ত্রিত্ব ও বিএনপির সব দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি নেন।
বঙ্গভবনে যাওয়ার পর বি চৌধুরী সরকার ও দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তিনি রাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্সিকে দলের ওপরে স্থান দিতেন এবং প্রেসিডেন্সির স্বাধীন সত্তা ও প্রটোকল বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। দলের ভেতরে এর মধ্যে বিএনপি নেতা সাইফুর রহমান, অলি আহমদ, মতিন চৌধুরী হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়ার পরামর্শদাতা। তাঁরা দলের বাইরে বি চৌধুরীর স্বাধীন সত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কান ভারী করতে থাকেন বলে আলোচনা আছে এবং দলের সংসদ সদস্যদেরও তাঁরা খেপিয়ে তোলেন। নিজের জন্য আলাদা ইমেজ গড়ে তোলার চেষ্টাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন