গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান দলীয় এক সভায় ‘মুজিবীয় শুভেচ্ছা’ জানানোয় সংগঠনের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল শনিবার তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

ছাত্রদলের গাজীপুর জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সরকার রাকিব হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের দায়িত্বশীল পদে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর (নাহিদ হাসান) বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহাগ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবালের উপস্থিতিতে জেলা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

স্থানীয় ছাত্রদলের কয়েকটি সূত্র দাবি করেছে, নাহিদ হাসান একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপরও তাঁকে প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা তাঁর পুরোনো কিছু ছবি ও ফেস্টুনও ভাইরাল হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে নাহিদ হাসানকে সভাপতি করা হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ৪-৫ মাস আগের বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

সাত সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে মাইক্রোফোনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন নাহিদ হাসান। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে মুজিবীয় শুভেচ্ছা জানাই।’ তখন রফিকুল ইসলাম দ্রুত মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল বলেন, ‘একসময় যখন ছাত্রদলের নেতা-কর্মী পাওয়া যেত না, তখন নাহিদ হোসেন আমাদের পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। তাঁর বক্তব্য নিয়ে সংগঠনে প্রশ্ন উঠেছে, তাই তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দর্শক–সংকটে বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’ আবারও বন্ধ ঘোষণা

আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’। দর্শক–সংকটে লোকসানের কারণে সিনেমা হলটি বন্ধ ঘোষণা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিক আর এম ইউনুস রুবেল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি বন্ধের কথা জানান।

ফেসবুকে আর এম ইউনুস লেখেন, ‘১৯৭৪ সালের কোরবানির ঈদে যাত্রা শুরু করা মধুবন নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়েছে। “ডাকু মনসুর” সিনেমা দিয়ে যাত্রা শুরু করা মধুবনে হাউসফুল চলেছে উত্তমকুমার ও মালা সিনহা অভিনীত “পৃথিবী আমারে চায়”, “গোপী গাইন বাঘা বাইন”, “সূর্যকন্যা”, “সীমানা পেরিয়ে”, “বসুন্ধরা”, “নাগ নাগীনি”, “লাইলী মজনু”, “রসের বাঈদানী”, “গোলাপী এখন ট্রেনে”, “সুজন সখী”সহ দর্শকনন্দিত বহু সিনেমা। এরপর নানা সংকটে ২০০৬ সালে মধুবন প্রথম বন্ধ হয়। ২০১৪ সালে মধুবন পুনরায় চালু হয়। ২০২১ সালে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করে মধুবন। মধুবন সিনেপ্লেক্সকে টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। কারণ, এর প্রতিটি ইটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার বাবার হাতের ছোঁয়া, পরিবারের আবেগ ও অনুভূতি।’

প্রেক্ষাগৃহ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর ‘বাজি’ সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করে মধুবন সিনেপ্লেক্স। ৩৩৬ আসন নিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করা মধুবন রীতিমতো দর্শকজোয়ারে ভাসতে থাকে। প্রদর্শন ব্যবসায় রীতিমতো বাজিমাত করে ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘প্রিয়তমা’, ‘তুফান’, ‘রাজকুমার’, ‘বরবাদ’ সিনেমা। ব্যবসাসফল হয়েছে হিন্দি সিনেমা ‘জওয়ান’ ও ‘পাঠান’। সব শেষ ‘তান্ডব’ সিনেমা প্রদর্শনকালে দর্শক সামাল দিতে নিয়মিত শো ছাড়াও মধ্যরাতে শো চালাতে হয়েছে। এরপর ভালো ছবি মুক্তি না পাওয়ায় দর্শকের অভাবে হলটির প্রদর্শন ব্যবসায় ছন্দপতন ঘটে।

বগুড়া জেলাজুড়ে একসময় সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৩৮। তবে জেলাটি সিনেমার সেই জৌলুশ হারিয়েছে অনেক দিন। ভাঙা পড়েছে ৩১টি হল। শহরে ২টিসহ পুরো জেলায় মোটে ৭টি সিনেমা হল টিকে আছে। শুধু জেলা শহরেই একসময় ১০টি প্রেক্ষাগৃহ ছিল। সবশেষ শহরে চালু ছিল মধুবন সিনেপ্লেক্স ও সোনিয়া হল।

আরও পড়ুনআজ ‘বাজি’ দিয়ে নতুন করে মধুবন সিনেপ্লেক্সের যাত্রা শুরু১৫ অক্টোবর ২০২১

একে একে বন্ধ হয়ে গেছে শহরের সাতমাথায় অবস্থিত মাধু ও মেট্রো সিনেমা, মেরিনা টকিজ, কবি নজরুল ইসলাম সড়কে উত্তরা টকিজ, চারমাথায় বীথি সিনেমা, জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টে সেনা অডিটরিয়াম, মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টে উল্লাস সিনেমা হল, চক সূত্রাপুর মাসুম সিনেমা হল এবং বনানী সিনেমা হল। সর্বশেষ বন্ধ হয়েছে বাম্বি সিনেমা হল। মাধু, মেট্রো ও মেরিনা ভেঙে বহুতল শপিং সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।

মধুবন সিনেপ্লেক্সের মালিক আর এম ইউনুস রুবেল বলেন, কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, রক্ষণাবেক্ষণে গড়ে প্রতি মাসে খরচ দুই লাখ টাকা। গত ঈদুল আজহায় শাকিব খান অভিনীত ‘তান্ডব’ সিনেমার পর ভালো ছবি না থাকায় দর্শক নেই। ধুঁকে ধুঁকে চলছিল সিনেপ্লেক্সটি। ছবি চালিয়েও খরচ ওঠেনি। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। ঋণ করে কর্মচারীদের বেতন শোধ করতে হয়েছে। এভাবে মাসের পর মাস লোকসান গুনতে গুনতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য মধুবন সিনেপ্লেক্স বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এরপর নির্বাচিত সরকার বিদেশি সিনেমা আমদানির উদ্যোগ নিলে চালু করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্র এক ফোনকলেই গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে পারে, কিন্তু করে না কেন?
  • একসময় ছিলেন অবৈতনিক শিক্ষক, এখন সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফি পরিশোধ করেন তিনি
  • দর্শক–সংকটে বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’ আবারও বন্ধ ঘোষণা
  • সুপারিগাছের ফেলনা খোলে থালা–বাটি, তৈজস, বদলাচ্ছে গ্রামটি