প্রথম আলো :

ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি বরাবরই সমাজের অসংগতি ও ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন—এই ভাবনা কীভাবে তৈরি হয়েছিল?

হানিফ সংকেত: টেলিভিশনের আগে স্কুল এবং কলেজজীবনে আমি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। একসময় জাতীয় পত্রিকায় ছোটদের পাতায়ও লিখতাম। তখনো আমি চারপাশের অসংগতি নিয়ে লিখতে চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, অসংগতি-অনিয়ম দূর হলেই সমাজ শুদ্ধ হবে। এই ভাবনা থেকেই ইত্যাদিতেও অনিয়ম ও অসংগতি তুলে ধরি এবং এর বিপরীতে বিভিন্ন আলোকিত মানুষদের তুলে আনি।
ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চেয়েছেন?
হানিফ সংকেত: ইত্যাদির প্রতিবেদন যেমন বহুমুখী তেমনি সমাজসচেতনতায়ও বহুমাত্রিক। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক ক্ষেত্রে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিবেদিতপ্রাণ মানুষের অনুসন্ধানে আমরা ছুটে বেড়াই সারা দেশে। তুলে আনি প্রচারবিমুখ, সৎ, সাহসী ও জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পেয়েছেন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্মান। অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরার ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যার প্রতি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি পড়ে। ফলে এগিয়ে আসে সমস্যার সমাধানে। এ ছাড়া ইত্যাদির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অনেক সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রথম আলো :

আপনি প্রায়ই সামাজিক বার্তা দেন। বর্তমান সমাজে কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে সবচেয়ে উদ্বেগজনক?

হানিফ সংকেত: ভয়ংকর সব সামাজিক ব্যাধি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধপ্রবণতা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরিবেশ ও সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানো নিয়েও সবাই উদ্বিগ্ন। আমরা চাই এমন একটি দেশ, যার পরিবেশ হবে দূষণমুক্ত। বাতাস হবে নির্মল। পানি হবে স্ফটিক স্বচ্ছ। মাটি হবে সজীবতায় উর্বর।

প্রথম আলো:

আপনার জীবনে কোনো ঘটনা কি আপনাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে রেখেছে?

হানিফ সংকেত: কোনো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা পাই, ইত্যাদির মাধ্যমে উপকৃত হওয়া অসহায় মানুষ ও তাঁদের পরিবারের মুখে যখন হাসি দেখি, ইত্যাদি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কেউ যখন জনকল্যাণে এগিয়ে আসেন, তখন আমিও অনুপ্রাণিত হই। যেমন বাজিতপুরের হাওরের ভাসমান স্কুলে একসময় জীবন বাজি রেখে ছোট একটি নৌকায় করে স্কুলে আসত শিক্ষার্থীরা। ইত্যাদির মাধ্যমে একটি বড় ইঞ্জিনবোট পেয়ে সেই কিশোর-কিশোরীরাই যখন আনন্দে গান গাইতে গাইতে স্কুলে আসে কিংবা মিরসরাইয়ের পাহাড়ি এলাকা তালবাড়িয়া ত্রিপুরাপাড়ায় তিন যুগ ধরে পানির সংকটে থাকা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ইত্যাদির মাধ্যমে গভীর নলকূপ পেয়ে যখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, তখন অনুপ্রাণিত হই। এমন শত শত অনুপ্রেরণার ঘটনা রয়েছে ইত্যাদির দীর্ঘ যাত্রায়।

এন্ড্রু কিশোর ও হানিফ সংকেত। হানিফ সংকেতের ফেসবুক থেকে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন প র ণ ত

এছাড়াও পড়ুন:

একসময় ঘড়ি আর ক্যালকুলেটর মানেই ছিল ক্যাসিও

নব্বই বা আশির দশকের তরুণ-কিশোরদের কাছে ‘ক্যাসিও’ শব্দটি বেশ পরিচিত। নব্বইয়ের দশকে ক্যাসিও ছিল হাতের কবজি বা স্কুল ব্যাগের এক অপরিহার্য অংশ। ঘড়ি আর ক্যালকুলেটর মানেই ছিল ক্যাসিওর নাম। স্মার্টওয়াচ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিড়ে ক্যাসিওর সেই জৌলুশ আর নেই। ইতিহাস বলে, জাপানের এই ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান কেবল ঘড়ি বা ক্যালকুলেটরে সীমাবদ্ধ ছিল না।

ক্যাসিওর বেশ পুরোনো কাজ আছে। ১৯৪৬ সালে কাজুও কাসিওর হাত ধরে জাপানের টোকিওতে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। প্রথম দিকে এটি ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের মাধ্যমে শুরু করলেও ক্যাসিও তাদের দুটি প্রধান পণ্যের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫৭ সালে ক্যাসিও বিশ্বের প্রথম কমপ্যাক্ট ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর ১৪ বাজারে আনে। এর আগের ক্যালকুলেটর ছিল যান্ত্রিক ও বিশাল আকারের। ক্যাসিও গণনার প্রক্রিয়াটিকে কেবল দ্রুতই করেনি, বরং এটিকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তোলে। নব্বইয়ের দশকে ক্যাসিওর সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এক অপরিহার্য সরঞ্জাম। এফএক্স–৮২ বা এফএক্স–৯৯১ সিরিজের মতো মডেল জটিল গাণিতিক সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য জনপ্রিয় ছিল। তখন নির্ভরযোগ্যতা ও সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে প্রভাবশালী ব্র্যান্ডে পরিণত হয় ক্যাসিও।

১৯৭৪ সালে ক্যাসিও তাদের প্রথম ডিজিটাল হাতঘড়ি ক্যাসিওট্রন বাজারে আনে। ঘড়িটি কেবল সময় দেখাত না, বরং ক্যালেন্ডারও প্রদর্শন করত। এটি ছিল জাপানিজ কোয়ার্টজ প্রযুক্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ১৯৭৭ সালে ক্যাসিও এফ–১০০ নামের একটি রেট্রো-ফিউচারিস্টিক হাতঘড়ি বাজারে আনে। এই ঘড়ি ছিল বিশ্বের প্রথম হাতঘড়িগুলোর মধ্যে একটি, যা মূলত রেজিন দিয়ে তৈরি।

১৯৮৯ সালে ক্যাসিও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাতঘড়ি বাজারে আনে। এফ–৯১ ডব্লিউ বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত হাতঘড়ি ছিল একসময়। বার্ষিক উৎপাদন ৩০ লাখ ইউনিট। ক্যাসিওর এফ–৯১ ডব্লিউ মডেলের ঘড়ি সাশ্রয়ী মূল্যের পাশাপাশি সরলতা, স্থায়িত্ব ও ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতার জন্য বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ক্যাসিওর এফ-৯১ ডব্লিউ ঘড়ি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অলিপুরা রাবারড্যাম ধ্বংসের মুখে, বালু সন্ত্রাসীদের দাপটে কৃষির হৃদস্পন্দন নিভে যাচ্ছে
  • পুরান ঢাকায় গুলিতে নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন, বলছে পুলিশ
  • একসময় ঘড়ি আর ক্যালকুলেটর মানেই ছিল ক্যাসিও