বিতর্কিত ৩ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ইসিতে বিএনপির অভিযোগ, থানায় মামলা
Published: 22nd, June 2025 GMT
বিএনপি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোট পরিচালনাকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
আজ রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসিরুদ্দিনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খানের (মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক) নেতৃত্বে একটি প্রতনিধি দল আবেদন নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আসে। এ সময় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে মো.
মামলার আবেদনের কপি নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল প্রথমে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এরপর তারা শেরেবাংলা থানায় মামলার আবেদন করবেন বলে জানান বিএনপির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।
তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরেও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আশা করি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ভাইদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি।’
যেহেতু নির্বাচন ভবন আগারগাঁও এলাকায়, সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। আজ সকাল সোয়া ১০ টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগপত্র হস্তান্তর করে প্রতিনিধি দল।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিইসি, ইসি ও সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনে অন্তবর্তী সরকারের উদ্যোগের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার পদক্ষেপ এলো।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দেয় ভোট বর্জন করা বিএনপি।
কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নীশিরাতের নির্বাচন’।
কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের সদস্য ছিলেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। সবশেষ গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে সরকারপ্রধানের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া ‘বিতর্কিত’ তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ অবসরপ র প ত জ ২০২৪ স ল র ব এনপ র সদস য আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্কনীতি নিয়ে ট্রাম্পের হুমকিকে ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’ বলল ভারত
রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘অপরাধের’ শাস্তি হিসেবে ভারতের রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ শুল্ক ও অনির্দিষ্ট জরিমানার ঘোষণা ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করল ভারত। গতকাল সোমবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলা হয়, জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারত সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন অনেক দিন থেকেই অসন্তুষ্ট। অনেকবার এ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পাশাপাশি অনির্দিষ্ট জরিমানার কথা গত মাসের শেষ দিনে তিনি জানিয়েও দেন। ৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল আরও একবার ভারতকে হুঁশিয়ারি দিলেন। তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত তা আন্তর্জাতিক খোলাবাজারে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে। সেই অপরাধে ভারতের ওপর আরও শুল্ক চাপানো হতে পারে। ট্রাম্পের ওই হুঁশিয়ারির পরেই গতকাল রাতে ভারতের ওই বিবৃতি; যদিও বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিবৃতিতে ভারত বলেছে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তেল কেনার দরুন ভারতকে নিশানা করা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনতে বাধ্য হয়, কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারের যাবতীয় সরবরাহ ইউরোপমুখী হয়ে গিয়েছিল। সে সময় জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিকে যুক্তরাষ্ট্র উৎসাহও জুগিয়েছিল।
ওই বিবৃতিতে ভারত বলেছে, যেসব দেশ ভারতের সমালোচনা করছে, দেখা গেছে, তারাও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। তাদের সেই বাণিজ্য ভারতের মতো জরুরি বা বাধ্যবাধকতামূলক ছিল না।
কারা সেই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, সেই খতিয়ানও ভারত ওই বিবৃতিতে দিয়েছে। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই ইইউ ও রাশিয়ার মধ্যে ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি ইউরোর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এর এক বছর আগে ২০২৩ সালে পরিষেবার ক্ষেত্রে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ২০০ কোটি ইউরো। ভারত ও রাশিয়ার মোট বাণিজ্যের চেয়ে ইইউর বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বেশি। ২০২৪ সালে রাশিয়া থেকে ইইউ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করেছে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টন, যা কিনা ২০২২ সালের আমদানির চেয়েও বেশি। শুধু জ্বালানিই নয়, রাশিয়া থেকে ইইউ সার, রাসায়নিক, লোহা, ইস্পাত, মেশিন, পরিবহন যন্ত্রাংশ ও খনিজ পদার্থও আমদানি করে।
যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া বাণিজ্যিক বহরের কথাও ওই বিবৃতিতে ভারত উল্লেখ করেছে। কোনো রকম মন্তব্য না করে বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার পারমাণবিক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, ইলেকট্রিক গাড়ি শিল্পের জন্য প্যালাডিয়াম, নানা ধরনের সার ও রাসায়নিক কিনেই চলেছে। এরপরই ভারত জানায়, তার ওপর এই ধরনের আক্রমণ অন্যায্য ও অযৌক্তিক। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মতো ভারতও তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গতকাল ভারতীয় সময় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে নতুনভাবে ওই হুমকি দেন। তাতে তিনি লেখেন, ভারত যে রাশিয়া থেকে শুধু তেল কিনছে তা নয়, সেই তেল আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে মুনাফাও লুটছে। রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনে কত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তার পরোয়াও করছে না। এ কারণে ভারতের পণ্যের ওপর আরও শুল্ক চাপানো হবে।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা ও সেই তেলের কিছুটা খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করেননি। ভারতের বিবৃতিতে ট্রাম্পের নীতি নিয়ে এত কিছু বলা হলেও রাশিয়ার তেল খোলাবাজারে বিক্রি নিয়েও কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মারফত এর একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। সেই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে কেনা অশোধিত তেল ভারত বিশ্বের খোলাবাজারে বিক্রি করে না। সেই তেল শোধন করে যে জ্বালানি তৈরি হয়, যেমন পেট্রল, ডিজেল বা বিমানের জ্বালানি, ভারত তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে।
ট্রাম্পের নতুন হুমকির পরিণাম কী হয়, ভারতে আপাতত চলছে সেই প্রতীক্ষা। শুল্ক আরও বৃদ্ধি হয় কি না, সেই শঙ্কার পাশে রয়েছে জরিমানার পরিমাণ কত হয়। ট্রাম্পের আগের ঘোষণায় সেই পরিমাণ জানানো হয়নি।