তৃতীয় দিনেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল কলম্বো টেস্টের সাম্ভাব‌্য ফল। বাংলাদেশ আরেকটি ইনিংসটি ব‌্যবধানে হারের দ্বারপ্রান্তে। শনিবার চতুর্থ দিন কতটুকু লড়াই করতে পারে, পরাজয়ের ব‌্যবধান কমাতে পারে সেটাই ছিল দেখার। 

এজন‌্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি অবশ‌্য। অসহায় আত্মসমর্পণে শ্রীলঙ্কাকে সাত সকালেই জিতিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। লিটন, নাঈম, ইবাদত, তাইজুলদের আসা-যাওয়ার মিছিলে শ্রীলঙ্কা তুলে নিয়েছে টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্রের প্রথম সাফল‌্য। মাত্র ৩৪ বলেই ম‌্যাচের ফল নিজেদের করে নেয় শ্রীলঙ্কা। 

বাংলাদেশ পেয়েছে আরেকটি ইনিংস ব‌্যবধানে হারের বিব্রতকর অভিজ্ঞতা। দুদিন আগেই বাংলাদেশের টেস্ট স্ট‌্যাটাস প্রাপ্তির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বড় আয়োজনে টেস্ট স্ট‌্যাটাস প্রাপ্তির রজতজয়ন্তী উদযাপন করেছে। 

আরো পড়ুন:

শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে দল ঘোষণা, চমক হিসেবে নতুন মুখ

চতুর্থ দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ

দুদিন পরই বিব্রতকর হারকে সঙ্গী করলেন শান্ত, মুশফিকুর, লিটনরা। সব মিলিয়ে ২৫ বছরে এটি বাংলাদেশের ৪৭তম ইনিংস ব‌্যবধানে হার। ইনিংস ব‌্যবধানে তিনটি জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। 

টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির প্রথম ২৫ বছরে বাংলাদেশের জয় মাত্র ২৩টি। এখন পর্যন্ত ১৫৫ ম্যাচে ১১২টিই হেরেছে তারা। জয়-পরাজয়ের বিচারে বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক। সেখানে ইনিংস ব‌্যবধানে হার এখন ৪৭টি। 

ইনিংস ব‌্যবধানে পরাজয়ের তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে চারটি দেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৮, নিউ জিল‌্যান্ড ৫০ এবং ইংল‌্যান্ড ৬৬ ম‌্যাচে ইনিংস ব‌্যবধানে হেরেছে। বাংলাদেশের উপরে আছে ছয় দেশ। জিম্বাবুয়ে ৩০, পাকিস্তান ৩৪, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯, শ্রীলঙ্কা ৪২, অস্ট্রেলিয়া ৪৬ এবং ভারত ৪৬ ম‌্যাচে ইনিংস ব‌্যবধানে হেরেছে।

টেস্ট খেলুড়ে ১১টি প্রতিপক্ষের মধ্যে নয়টির বিপক্ষেই ইনিংস ব্যবধানে হারের নজির আছে বাংলাদেশ দলের। শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ নয়বার ইনিংস ব‌্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে সংখ‌্যাটা গিয়ে ঠেকেছে আটে।

এছাড়া পাকিস্তানের কাছে ছয়বার ও ভারতের কাছে পাঁচবার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিনবার করে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে একবার বাংলাদেশকে ইনিংস ব‌্যবধানে হারিয়েছে। কেবল দুই নতুন সদস্য আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপরীতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা নেই তাদের।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২৫ বছর যবধ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪৭তম বিসিএস প্রিলিতে কম উত্তীর্ণে কী বার্তা দিল পিএসসি

সদ্য প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফলাফলে অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বলা যায়। প্রিলিমিনারিতে মাত্র ১০ হাজার ৬৪৪ জন উত্তীর্ণের বিষয়টি কল্পনাতীত ছিল, যেখানে জেনারেল, শিক্ষা ও কারিগরি মিলিয়ে মোট ক্যাডার পদসংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৪০০। অনেকে বলছেন, এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারে অনেক পদ পূরণ হবে না। কিন্তু বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বিষয়টি নিয়ে খুব বিচলিত বলে মনে হচ্ছে না। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, অতীতে এর থেকে কম পদসংখ্যা থাকলেও পদের তুলনায় সাত-আট গুণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ করা পিএসসির এবার এত কম উত্তীর্ণের পেছনে কৌশলগত কারণ কী হতে পারে? সেই বিষয়গুলোতে একটু আলোকপাত করা যাক।

পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা কমানো

পদের তুলনায় কম উত্তীর্ণের একটা উল্লেখযোগ্য কারণ—বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা কমানো। অনেক বছর ধরেই আলোচনায় ছিল পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বল্পতম সময়ে শেষ করার জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ। বিগত ৪১তম বিসিএসের সার্কুলার থেকে শুরু করে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের কর্মে যোগদানের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। এতে পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র—সবাই বঞ্চিত হয়েছে। ১২ হাজার ৭৮৯ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশে সোয়া এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে ৪৫তম বিসিএসের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। প্রিলিমিনারিতে কম পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন দ্রুততর হওয়া সম্ভব। সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কমবে, তাই মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও ফলাফল তৈরিও দ্রুততম সময়ে হবে।

নন-ক্যাডার আন্দোলনের প্রভাব

গত বেশ কয়েকটি বিসিএস ফলাফলের পর নন-ক্যাডারে নিয়োগ নিয়ে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। অনেক চাপ সৃষ্টিকারী গ্রুপ দাবি করছে যাতে প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা পাস করলে পরীক্ষার্থীদের কোনো না কোনো পদে যাতে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা এত বেশি নয় যে সবাইকে সুপারিশ করা সম্ভব। অধিকাংশই তৃতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম পরীক্ষার্থী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ করা পিএসসির জন্য সুবিধাজনক বলা চলে।

আরও পড়ুনস্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে নিয়োগ, পদ ১২৭৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খাতা মূল্যায়নে নৈর্ব্যক্তিকতা বৃদ্ধি করা

খাতা মূল্যায়নে পিএসসি বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। পরীক্ষকদের পিএসসিতে ডেকে নিয়ে এসে সার্কুলার সিস্টেমে প্রতি পরীক্ষককে দিয়ে একটি মাত্র প্রশ্নের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এতে খাতা দেখার গতি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রত্যেক শিক্ষক একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়ন করলে তাতে পরীক্ষকদের একই খাতা মূল্যায়নে নম্বরের বিচ্যুতি দূর হবে। এই সিস্টেমে খাতার সংখ্যা যত কম হবে, মূল্যায়ন ততই ভালো হবে বলা যায়।

পদ খালি থাকার চ্যালেঞ্জের সমাধান

পিএসসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, এক বছরের ভেতরে ফলাফল প্রকাশ করতে পারলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি ক্যাডারে পদ খালি থাকলেও তাতে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয় চূড়ান্ত যোগদানে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে। এতে দীর্ঘদিন মন্ত্রণালয়, মাঠপর্যায়ে জনবলসংকট বিরাজ করে। বরং এক বছরের রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে এক বিসিএসে কোনো ক্যাডার পদে নিয়োগ আশানুরূপ না হলেও সে সংকট কাটাতে সর্বোচ্চ পরবর্তী ২ বিসিএস, অর্থাৎ দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে। সর্বোপরি দীর্ঘ মেয়াদে এটি লাভজনকই বটে।
পিএসসি ইতিমধ্যেই তার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইতিবাচক সূচনা করেছে। সর্বশেষ ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফলাফল ৯ দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষাও দুই মাস পরই শুরু করবে বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরাও এই ইতিবাচক পরিবর্তন ও নতুনত্বকে স্বাগত জানাই।

লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিএস পরীক্ষার্থী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৭তম বিসিএস প্রিলিতে কম উত্তীর্ণে কী বার্তা দিল পিএসসি