আরবের অনেক দেশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তারপর…
Published: 29th, June 2025 GMT
দ্য টাইমসের সংবাদদাতা ডেভিড হোল্ডেন এর লেখা থেকে জানা যায়, এক সময় আরবের অনেক দেশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এইতো বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আরব উপদ্বীপের এক-তৃতীয়াংশই ব্রিটিশ ভারত সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। অ্যাডেন থেকে কুয়েত পর্যন্ত ছিল একাধিক 'প্রোটেক্টরেট'।
এগুলো দিল্লি থেকে শাসন করা হতো। জয়পুরের মতো আধা-স্বাধীন ভারতীয় রাজ্যগুলোর যে বর্ণানুক্রমিক তালিকা ছিল, তার মধ্যে প্রথমেই আসে আবু ধাবির নাম। লর্ড কার্জন যখন বড়লাট ছিলেন, সেই সময়ে তো তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘‘কেলাত প্রদেশ (বর্তমানের বালোচিস্তান) বা লুস বেলার মতো ওমানকে ভারতীয় সাম্রাজ্যের একটি দেশীয় প্রদেশ হিসাবে গণ্য করা হোক।’’
অ্যাডেন তখন ছিল ভারতের পশ্চিম প্রান্তের শেষ বন্দর। বোম্বে প্রদেশের অধীন ছিল এই বন্দর শহর। ১৯৩১ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যখন ওই শহরে গিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন:
ইউরোপীয় গুপ্তচর যেভাবে মক্কায় ঢুকেছিলেন
পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, মিনায় হাজিরা
সেখানে অনেক তরুণ আরব নিজেদের ভারতীয় জাতীয়তাবাদী হিসাবে পরিচয় দিতেন।যুক্তরাজ্য বা ভারতের জনসাধারণের মধ্যে খুব কম মানুষই তখন জানতেন যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আরব অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করেছিল।
ভারতীয় সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ মানচিত্র প্রকাশ করা হতো না। মূল মানচিত্র খুব গোপনে প্রকাশ করা হত। প্রথমের দিকে তুরস্ক আর পরে সৌদি আরব যাতে কোনো রকম ইন্ধন না পেয়ে যায়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এ ছাড়া আরব এলাকাগুলোর ব্যাপারে কোনো নথিও জনসমক্ষে আনা হত না।
'রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি'র এক ভাষণে একজন বলেছিলেন, ‘‘একজন ইর্ষাকাতর শিখ যেমন তার প্রিয় পত্নীকে পর্দার আড়াল করে রাখেন, তেমনই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম এতটাই রহস্যে মোড়া ছিল যে কেউ যদি দুরভিসন্ধি নিয়ে এমন কিছু প্রচার করার চেষ্টা করত যে ওখানে ভয়াবহ কিছু একটা হচ্ছে, তার কথা বিশ্বাস করানো কঠিন হত।’’
ব্রিটিশ শাসকেরা মূলত তুর্কি এবং সৌদির চোখে ধুলা দেওয়ার জন্য এই গোপনীয়তা রক্ষা করতো। তবে ভারতের এই বিশাল সম্রাজ্য ভেঙে পড়ে ১৯৪৭ সালে। তার আগেই ১৯২০ নাগাদ রাজনীতি বদলাতে শুরু করে। ভারতের জাতীয়তাবাদীরা তাদের দেশটিকে সাম্রাজ্যবাদীদের গড়া কোনো দেশ নয়, বরং মহাভারতে যে ভৌগলিক অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, তার ওপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটা সাংস্কৃতিক পরিসরের কল্পনা করতে শুরু করেছিলেন। লন্ডনও দেখল যে সীমানা নতুন করে আঁকার সুযোগ এসেছে। অ্যাডেনকে ১৯৩৭ সালের পয়লা এপ্রিল ভারতের থেকে পৃথক করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিভক্তি। এর পর বেশ কয়েকটি বিভক্তি।
ব্রিটিশ রাজ ভেঙ্গে ভারত আর পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাত্রই কয়েক মাস আগে, পয়লা এপ্রিল ১৯৪৭ সালে দুবাই থেকে শুরু করে কুয়েত পর্যন্ত উপসাগরীয় রাজ্যগুলো অবশেষে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।
আরও সময় পরে, যখন ভারতীয় আর পাকিস্তানী কর্মকর্তারা কয়েকশো দেশীয় রাজ্যকে তাদের সদ্য গঠিত নিজ নিজ রাষ্ট্রে সংযুক্ত করার কাজ শুরু করছেন, তখন কিন্তু সেই তালিকায় উপসাগরীয় রাজ্যগুলো আর নেই। খুব কম মানুষই বিস্মিত হয়েছিলেন এবং ৭৫ বছর পরেও যে ভারত অথবা উপসাগরীয় অঞ্চলে ওই ঘটনার গুরুত্ব সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করা গেছে, তা নয়।
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরের ম্যারিনেট গাজা জলসীমা থেকে কত দূরে
দ্য ম্যারিনেট। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের নৌযান। নৌযানটি এখনো ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আজ শুক্রবার আল-জাজিরার অনলাইনে এই তথ্য জানানো হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একমাত্র দ্য ম্যারিনেটকেই এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। বহরের বাকি নৌযানগুলোকে তারা ইতিমধ্যে আটক করেছে।
দ্য ম্যারিনেট পোল্যান্ডের পতাকাবাহী নৌযান। তবে নৌযানটির মালিকের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়, দেখুন লাইভ ট্র্যাকারেনৌযানটিতে ছয়জন আরোহী আছেন। এই আরোহীদের মধ্যে একজন তুরস্কের অধিকারকর্মী সিনান আকিলতু। তিনি আজ নৌযানটি থেকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় প্রবেশ করেছি। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা দুটি মহৎ পরিণতির যেকোনো একটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্যের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, আজ ভোরের দিকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলছিল ম্যারিনেট। এ সময় সূর্যোদয় হচ্ছিল।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৪টার দিকে ম্যারিনেটের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩ দশমিক ৭৮ নট। (ঘণ্টায় প্রায় ৭ কিলোমিটার)। নৌযানটি গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে প্রায় ৪৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল।
আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে জলকামান ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী১৩ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই ম্যারিনেটকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবরোধ ভাঙার যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নৌযানটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। তবে তা ঠিক করা হয়েছে। নৌযানটি গাজা অভিমুখে চলছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বহরের ৪২টি নৌযানকে অবৈধভাবে আটকানো হয়েছে। আরোহীদের আটক হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ম্যারিনেট পিছু হটছে না।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান১৪ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলেছে, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়, ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।
ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত আছে বলে জানিয়েছে ফ্লোটিলা আয়োজকেরা।
আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীরা ২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছতে পারেন২০ ঘণ্টা আগে