আপনি রোগী নন, তাহলে হাসপাতালে কেন? আপনি ও আপনার মতো মানুষ হাসপাতালে ভিড় করার ফলে কোনো রোগীর বিন্দুমাত্র কোনো লাভ হয়েছে? আপনি কোনো রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পেরেছেন? পারেননি। আপনি কোনো রোগীকে বাঁচাতে পেরেছেন? পারেননি। তাহলে আপনি হাসপাতালে কেন?

দগ্ধ শিশুরা, শিক্ষার্থীরা আগুনে ঝলসে গেছে। অনেকে মারা গেছে। অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। চিকিৎসকদের ভাষায় কারও শরীর ১০০, কারও ৯০, কারও ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। কারও পুড়েছে ৫০ শতাংশ। এদের ক্ষতকে বলা হয় ‘ওপেন উন্ড’ বা খোলা ক্ষত।

অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই রোগীরা। খুব সহজেই এঁরা সংক্রমণের শিকার হন। এমন রোগীর প্রাণ বাঁচাতে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যেখানে যুদ্ধ করছেন, সেই যুদ্ধক্ষেত্রে আপনার কী কাজ? আপনি একবারও ভেবেছেন, আপনার উপস্থিতি মানেই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া।

আপনি যে–ই হোন, আপনি জানেন না আপনার সীমা কত দূর, অধিকার কতটুকু। আপনি হতে পারেন উপদেষ্টা (অতীতের মন্ত্রী সমতুল্য), আমলা, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, ছাত্রনেতা অথবা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কোনো মানুষ। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রে আপনাদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু জরুরি রোগীর চিকিৎসায় আপনার কী ভূমিকা আছে?

আমরা দেখলাম, রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অগ্নিদগদ্ধদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়ার পর দেখতে ভিড় করেছেন উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ ও তাঁদের অনুসারী, উৎসুক জনতা এবং সাংবাদিক ও ইউটিউবাররা। তাঁদের ভিড়ে রোগীদের আনা–নেওয়া ও চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল। একপর্যায়ে হাসপাতাল থেকে তাঁদের বের করে দেওয়ার দাবিও ওঠে।

বার্ন ইনস্টিটিউট ছাড়া অন্য হাসপাতালেও ভিড় করেন বহু লোক।

একজন উপদেষ্টা বা একজন রাজনৈতিক দলের নেতা যখন হাসপাতালে যান, তখন তো আপনি একা যান না। আপনার সঙ্গে থাকে আরও অনেকে। এই অনেককে নিয়ে যখন হাসপাতালে ঢোকেন, তখন আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হন সাংবাদিকেরা। হাসপাতালে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়—নিজেরা একবারও টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন? অথবা নিজেরা কখনো ভেবেছেন?

আগুনে পোড়া রোগীদের ‘পোস্ট বার্ন সেপসিস’ হতে দেখা দেয়। এটি আর কিছু নয়, এটি সংক্রমণ সমস্যা। আপনার হাতে–পায়ে, আপনার জামাকাপড়ে জীবাণু থাকতে পারে। আপনি যখন হাসপাতালে যান তখন আপনি সঙ্গে করে রোগজীবাণু নিয়ে যান। আপনার কি একবারও মনে হয়েছে, আপনি ও আপনার সঙ্গে যাঁরা হাসপাতালে ঢুকলেন, তাঁরা কী নিয়ে ঢুকলেন?

বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণের একটি বড় উৎস আপনার মতো বহিরাগতরা। আপনারা শুধু সংক্রণের জন্য দায়ী, তা নয়। আপনারা জরুরি কাজের বাধাও বটে।

জরুরি রোগীদের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনি হাসপাতালে হাজির হন। আপনার উপস্থিতির কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ব্যবস্থাপকেরা আপনাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আপনি আইসিইউতে ঢোকেন, হাসপাতাল ঘুরে দেখেন, রোগীদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন, সবশেষে পরিচালকের কক্ষে বসেন চা পানের জন্য। আপনি যদি না যেতেন, ব্যবস্থাপকেরা সময়টুকু রোগীর জন্য ব্যয় করতেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিকেরা কি হাসপাতালে ঢুকতে পারবেন? ঢুকলে কত দূর যেতে পারবেন? তাঁরা কি আইসিইউর মধ্যেও ঢুকতে পারবেন? এবার প্রশ্ন উঠতে পারে, সাংবাদিকেরা কি রোগীর বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারবেন? এর অধিকাংশ উত্তর হবে না–সূচক।

সাংবাদিকেরাও সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন, সাংবাদিকেরাও চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটান। সাংবাদিকদের মোক্ষম যুক্তি হচ্ছে, মন্ত্রী–মিনিস্টার উপদেষ্টা বা আমলারা বা রাজনৈতিক নেতারা ঢুকতে পারলে সাংবাদিকের কী দোষ। অবাঞ্ছিত অন্য সবার ঢোকা বন্ধ হলে সাংবাদিকের ঢোকাও বন্ধ হবে। যুক্তি পরিষ্কার।

অবশ্য সাংবাদিকদের জন্য অবাধ তথ্যপ্রবাহ রাখতে হবে। নিয়মিত তথ্য জানাতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দ্রুত ও নিয়মিত দিতে হবে।

আবেগ আর চোখে পানি নিয়ে মা–বাবা, ভাই–বোন বা আত্মীয়স্বজন ভিড় জমান হাসপাতালে। একজন রোগীর জন্য কত বেশিসংখ্যক স্বজন হাসপাতালে আসা সম্ভব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেন তার প্রতিযোগিতা চলে। অন্যদের মতো আত্মীয়স্বজনেরা স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। তাঁরাও প্রত্যেকে রোগীর কাছে যেতে চান, যত বেশি কাছে যাওয়া সম্ভব। রোগীর সঙ্গে কথা বলতে চান, যত বেশি কথা বলা সম্ভব। রোগীকে ছুঁয়ে দেখতে চান, রোগীর শয্যায় উঠে বসেন। দল বেঁধে রেখে আসেন সংক্রমণ।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই লেখককে বলেছেন, সংক্রমণ এড়ানো জরুরি। সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় মানুষ যত কম আসবেন, রোগীর জন্য তত ভালো।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট স ক রমণ র জন য প রব ন র জন ত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন

যমুনা ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. বেলাল হোসেন সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দেশের একজন সফল উদ্যোক্তা। খবর বিজ্ঞপ্তি

যমুনা ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, মো. বেলাল হোসেন ১৯৫৬ সালে নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে তাঁর পরিবারের দেশ-বিদেশে সুনাম আছে। পরিবারের মালিকানাধীন বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে নানা ধরনের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ খাদ্যশস্য শিল্প। তিনি একজন বিশিষ্ট আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক। বর্তমানে তিনি বেলকন কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, বিএইচ হাইটেক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, নাদিয়া ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড ও বিএইচ স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বেলাল হোসেন নওগাঁ, দিনাজপুর ও হিলি অঞ্চলের বিভিন্ন ক্রীড়া ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদের এডিজিপি ফেলো মেম্বারশিপ সম্মাননা লাভ করেন। ২০০৫ সালে এফএনএস বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে সেরা কৃষিভিত্তিক শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।

বেলাল হোসেন নওগাঁ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, নওগাঁ এবং বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতি, ঢাকার কার্যনির্বাহী সদস্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১
  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি
  • মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন
  • যমুনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন