ইসরায়েলের হামলায় আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সিপিজের উদ্বেগ
Published: 11th, August 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন সিপিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
গতকাল গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ, মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া নিহত হয়েছেন। আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে তাঁদের সংবাদকর্মীদের ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে এই হামলা চালানো হয়।
সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ।সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একটি প্রবণতা হলো, তারা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে, কিন্তু তার পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখায় না। শরিফের মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তিনি হামাসের একটি সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানোর কাজে সহযোগিতা করছিলেন।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ বলেন, ইসরায়েল কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখানো ছাড়াই সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করছে। আর এতে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সারা আরও বলেন, সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।সারা কুদাহ, সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালকসিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ। খুব সম্প্রতি শরিফ গাজার মানুষের অনাহারে থাকা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা অনাহারে ভুগছেন।
গত ২৪ জুলাই এক ভিডিওতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি অভিযোগ করেন, আল-শরিফ ২০১৩ সাল থেকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসামের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, যুদ্ধ চলাকালে শরিফ ‘সবচেয়ে অপরাধমূলক আক্রমণাত্মক চ্যানেল’-এর জন্য কাজ করছেন।
জুলাইয়ে আল-শরিফ সিপিজেকে বলেছিলেন, আদরায়ির এ প্রচার শুধু গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি বা সুনাম নষ্ট করাই নয়, এটি বাস্তব জীবনের জন্য একটি হুমকি।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার আগে কী লিখে গেছেন সাংবাদিক শরীফ১ ঘণ্টা আগেআল–শরিফ তখন আরও বলেন, ‘আমি এসব কিছু করছি, কারণ আমার প্রতিবেদন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদারদের অন্যায় কাজগুলো তুলে ধরছে, যা তাদের জন্য ক্ষতির। তারা আমাকে সন্ত্রাসী বলছে, কারণ দখলদারেরা আমাকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করতে চাইছে।’
সিপিজে বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে মোট ১৮৬ জন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৭৮ জনই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। তাঁরা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল জ জ র র প ইসর য় ল র স ব দকর ম র জন য ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বাদ দিন: জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পূর্ণ সামরিক দখলদারি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা থেকে অবিলম্বে সরে আসতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।
আজ শুক্রবার ফলকার টুর্ক সতর্ক করে বলেন, এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করবে এবং আরও ব্যাপক ভোগান্তির জন্ম দেবে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের জারি করা এক বিবৃতিতে টুর্ক বলেন, এ পরিকল্পনা ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সেই রায়ের পরিপন্থী; যেখানে বলা হয়েছে ইসরায়েলকে যত দ্রুত সম্ভব দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে।’
মানবাধিকারপ্রধান আরও বলেন, এ পদক্ষেপ ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ও ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারেরও পরিপন্থী।
টুর্ক বলেন, ‘এ পর্যন্ত পাওয়া সব প্রমাণ বলছে, এ নতুন উত্তেজনা আরও ব্যাপকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, আরও হত্যাযজ্ঞ, অসহনীয় কষ্ট, অযৌক্তিক ধ্বংসযজ্ঞ ও যুদ্ধাপরাধ ডেকে আনবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজায় যুদ্ধ এখনই শেষ হতে হবে এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ‘শান্তিতে পাশাপাশি বসবাসের সুযোগ দিতে হবে।
টুর্ক ইসরায়েল সরকারকে যুদ্ধ বাড়ানোর বদলে গাজায় মানবিক সহায়তার ‘পূর্ণ ও বাধাহীন প্রবাহ’ নিশ্চিত করে স্থানীয় জনগণের জীবন রক্ষায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক সব জিম্মিকে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি’ দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের হাতে অবৈধভাবে আটক ফিলিস্তিনিদেরও মুক্তির দাবি জানান জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় এই কর্মকর্তা।
ফলকার টুর্ক সতর্ক করে বলেন, ‘এ যুদ্ধ আরও তীব্র করার বদলে ইসরায়েল সরকারকে গাজার বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। সংঘাত বাড়তে থাকলে তা শুধু ভোগান্তি ও ধ্বংসযজ্ঞ দীর্ঘায়িত করবে।’
আরও পড়ুনগাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা৬ ঘণ্টা আগে