গাজায় ‘গণহত্যার’ প্রমাণ তুলে ধরার কারণেই কি সাংবাদিক আল-শরিফকে হত্যা করল ইসরায়েল
Published: 12th, August 2025 GMT
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের ফটকে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছিলেন আল-জাজিরা আরবির গাজা প্রতিনিধি আনাস আল-শরিফ ও মোহাম্মদ কুরেইকেহ। এই দুই সাংবাদিকের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের ক্যামেরাম্যান ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া।
গত রোববার রাতে ইসরায়েল আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের কাছে সাংবাদিকদের থাকার জন্য ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে ড্রোন হামলা চালায়। হামলায় আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মীসহ সাতজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মোহাম্মদ আল-খালদি নামে আরেকজন স্থানীয় ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিকও রয়েছেন।
নিহত সাংবাদিকেরা ২২ মাস ধরে গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং সেখানকার বাসিন্দাদের ওপর যুদ্ধের কী প্রভাব পড়ছে, তার প্রামাণ্য দলিল সংগ্রহ করছিলেন। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের সম্ভাব্য গণহত্যার প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়েই এই সাংবাদিকদের প্রাণ হারাতে হয়েছে।
‘এই উন্মত্ততা যদি না থামে, গাজা পরিণত হবে ধ্বংসস্তূপে, এখানকার মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে, তাঁদের মুখগুলো মুছে যাবে আর ইতিহাস আপনাদের মনে রাখবে সেই নির্বাক সাক্ষী হিসেবে, যাঁরা এই গণহত্যা বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছেন।আনাস আল-শরিফ, গাজায় নিহত আল–জাজিরার সাংবাদিকরোববার রাতের ওই হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, আনাস আল-শরিফকে নিশানা করেই তারা ওই হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের একটি সন্ত্রাসী সেলের প্রধান ছিলেন আল-শরিফ।
ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার কয়েক মিনিট আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘এক্স’–এ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন আল-শরিফ। সর্বশেষ ওই পোস্টে তিনি বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পরিকল্পনা অবরুদ্ধ এ অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠ সম্পূর্ণ রুদ্ধ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
শরিফ লেখেন, ‘এই উন্মত্ততা যদি না থামে, গাজা পরিণত হবে ধ্বংসস্তূপে, এখানকার মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে, তাঁদের মুখগুলো মুছে যাবে আর ইতিহাস আপনাদের মনে রাখবে সেই নির্বাক সাক্ষী হিসেবে, যাঁরা এই গণহত্যা বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছেন।’
রোববার রাতের ওই হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, আনাস আল-শরিফকে নিশানা করেই তারা ওই হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের একটি সন্ত্রাসী সেলের প্রধান ছিলেন আল-শরিফ।২০২৪ সালের মার্চে আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার সময় মোহাম্মদ কুরেইকেহর মা নিহত হন। তিনি তাঁর মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন। কুরেইকেহ দুই সপ্তাহ খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালের একটি সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় মায়ের মৃতদেহ খুঁজে পান, তত দিনে সেটিতে পচন ধরে গিয়েছিল।
পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে কুরেইকেহ জানতে পারেন যে তাঁর মাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
ব্যক্তিগত শোক ও অসহনীয় পরিস্থিতি সত্ত্বেও আল-শরিফ ও কুরেইকেহ গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছিলেন। বিশ্বজুড়ে ক্রমেই এ যুদ্ধ গণহত্যা বলে বিবেচিত হওয়ার দাবি বাড়ছে।
ত্যাগ ও সাহস
গাজার বাকি সব ফিলিস্তিনির মতো আল-শরিফ ও কুরেইকেহ ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যেই জন্ম নিয়েছিলেন এবং বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁরা জীবনের বেশির ভাগ সময় দেখেছেন, ইসরায়েল গাজার স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথ সম্পূর্ণ অবরোধ করে রেখেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষায়, গাজা কার্যত খোলা আকাশের নিচে এক উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে।
এই অবরোধ ফিলিস্তিনিদের জীবিকা, যাতায়াত, পারিবারিক সম্পর্কসহ জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে। আল-শরিফ ও কুরেইকেহ ইসরায়েলের নির্মম দখলের অধীনে তাঁদের জনগণের জীবনসংগ্রামের গল্প বিশ্বকে জানাতে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
‘(সে সময় উত্তরাঞ্চলে) ইসরায়েলি হামলার কারণে তাঁর জীবন ঝুঁকিতে ছিল। তবু তিনি ইসরায়েলের প্রতিটি হামলার পর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেতেন, ইসরায়েলের অপরাধের মুখোশ উন্মোচন করার জন্যইয়াসের আল-বান্না, গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক।আল-শরিফ গাজার আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া স্টাডিজে লেখাপড়া করেছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযান নিয়ে নিজের প্রতিবেদনের জন্য তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। তিনি সেখানে যুদ্ধের মানবিক ও অসামরিক প্রভাব নিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছিলেন।
গাজার ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইয়াসের আল-বান্না বলেন, যখন ইসরায়েল ২২ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল, তখনো আল-শরিফ ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান ও কার্যক্রম নথিভুক্ত করতে গাজার উত্তরাঞ্চলে রয়ে যান।
কয়েকজন ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি জায়গা দেখছেন। এ জায়গাটিতেই আনাস আল–শরিফসহ আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। ১১ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ম হ ম মদ আল জ জ র ছ ল ন আল করছ ল ন গণহত য স গ রহ
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান
ইসরায়েলের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌযান আটককে ‘জলদস্যুর কাজ’ আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। নিজের দল একে পার্টির এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ধরনের পদক্ষেপ প্রমাণ করে, এই গণহত্যাকারীরা গাজায় নিজেদের অপরাধ ঢাকতে পাগল হয়ে গেছে।
এরদোয়ান আরও বলেন, ‘গণহত্যাকারী (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহু সরকার শান্তির ন্যূনতম সুযোগ আসুক, সেটাও সহ্য করতে পারে না। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আবারও বিশ্ববাসীর সামনে গাজায় নির্মমতা ও ইসরায়েলের খুনি চেহারা তুলে ধরেছে। আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের ছেড়ে যাব না। যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা আমাদের সব ক্ষমতা দিয়ে কাজ করে যাব।’
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান অংশ নেয়। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষ যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক আছেন।
গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে ছেড়ে আসা এই নৌবহর বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে গাজার কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছায়। ২০০৭ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরের ওই জলসীমা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল মাধ্যরাতে নৌবহরের জাহাজে জাহাজে উঠে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা অধিকারকর্মীদের আটক করে নিজেদের দেশের বন্দরে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি সেনারা।
আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েল৩ ঘণ্টা আগেইতিমধ্যে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে বাকি সব জাহাজ আটক করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করা বা আইনসম্মত নৌ অবরোধ লঙ্ঘন করার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার ২৪ জাহাজ এগিয়ে যাচ্ছে, একটি গাজার জলসীমায়: দেখুন লাইভ ট্র্যাকারে৮ ঘণ্টা আগে