কথায় বলে, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। আপাতত সেই আশার প্রথম ধাপ ২৭ আগস্ট। ভারত মনে করছে, তার আগে কিছু একটা আশ্বাস এলেও আসতে পারে। জরিমানার ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য থেকে রেহাই মিললেও মিলতে পারে। না হলে ওই দিন থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ধার্যের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

তবে বৈঠকের আগে রাশিয়া যেভাবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিচ্ছে আর ট্রাম্প ইউক্রেন শান্তি আটকে দিলে কঠোর পরিণতির হুমকি দিচ্ছেন, তাতে দোলাচলও কম নয়। আশা যদি মরীচিকার মতো মিলিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি সাপ–লুডো খেলার মতো ঝুপ করে কোথায় যে নেমে যাবে, কেউ জানে না।

এমন ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে ভারতের অর্থনীতি আগে পড়েনি। অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটির (ওইসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের পণ্য আমদানির পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলার। ট্রাম্পের কোপে পড়ে ভারতের এই বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অবস্থা নিমেষের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিতে পৌঁছে যাবে।

ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঝাপটা সামলানোর ক্ষমতা রাখেন। ফিকি বা সিআইআইয়ের মতো ভারতীয় বণিক সংগঠন কোনোদিন কল্পনাও করেনি, দেশীয় রপ্তানিকারকদের কখনো ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির মতো সুনামির মোকাবিলা করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা করেছেন, তা নাকি ঘটি বাটি বেচে বিবাগী হওয়ার মতো!

ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঝাপটা সামলানোর ক্ষমতা রাখেন। ফিকি বা সিআইআইয়ের মতো ভারতীয় বণিক সংগঠন কোনোদিন কল্পনাও করেনি, দেশীয় রপ্তানিকারকদের কখনো ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির মতো সুনামির মোকাবিলা করতে হবে।

ট্রাম্প যখন ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপানোর নিদান দেন, অর্থনীতিবিদদের তখন ধারণা হয়েছিল বার্ষিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৬–এ নেমে আসবে। ভারতের মোট জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ স্রেফ যুক্তরাষ্ট্রের অবদান। মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশেরও অভিমুখ এই দেশ। ৫০ শতাংশ শুল্কহার জিডিপির কী হাল করবে, সেই হিসাব কষতে অর্থনীতিবিদরা হিমশিম খাচ্ছেন।

অথচ, মাত্র ছয় মাস আগে ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বন্ধু ট্রাম্পের সাহচর্যে থেকে বলেছিলেন, আগামী পাঁচ বছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে।

বিনা মেঘে বজ্রপাতের পর এখন কোথায় কত ক্ষতি, কোন ক্ষেত্রের বিপদ কতটা, এসব চিন্তাই বড় হয়ে উঠেছে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) অনুমান, এই সিদ্ধান্তের বদল না হলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

জিটিআরআই জানাচ্ছে, শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকলে ২৭ আগস্টের পর জৈব রাসায়নিক রপ্তানিতে মোট শুল্ক ধার্য হবে ৫৪ শতাংশ, কার্পেটে প্রায় ৫২ দশমিক ৯, বস্ত্রে ৬০ দশমিক ৩, পোশাকে ৬৩ দশমিক ৬, তৈরি পোশাকে ৫৯, আসবাবপত্র ও বিছানায় ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ।

ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস ক্ষেত্র এখনো অতিরিক্ত শুল্কের আওতার বাইরে রয়েছে। কিন্তু অটোমোবাইল, বস্ত্র ও পোশাক এবং জুয়েলারির মতো শ্রমনির্ভর শিল্পে ধাক্কা মারাত্মক হতে পারে। গুজরাটের সুরাত ভারতের ‘হীরা নগরী’ বলে পরিচিত। শুধু এই জেলাতেই হীরা কাটিং ও পালিশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আনুমানিক ১১ লাখ শ্রমিক।

জিটিআরআই জানাচ্ছে, শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকলে ২৭ আগস্টের পর জৈব রাসায়নিক রপ্তানিতে মোট শুল্ক ধার্য হবে ৫৪ শতাংশ, কার্পেটে প্রায় ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ, বস্ত্রে ৬০ দশমিক ৩ শতাংশ, পোশাকে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ, তৈরি পোশাকে ৫৯ শতাংশ, আসবাবপত্র ও বিছানায় ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ।

রাজ্যের আহমেদাবাদ, রাজকোট ও অন্যত্র মিলিয়ে মোট ২০ লাখ দক্ষ–আধা দক্ষ শ্রমিক অনাগত ভবিষ্যতের শঙ্কায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। হীরাশিল্পে এখন দিনদুপুরে আঁধার ছেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বন্ধ হলে বিকল্প বাজারের সন্ধান করতে হবে। কোভিডের ছোবল পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এই মার্কিনি ধাক্কায় হীরাশিল্প টালমাটাল।

জিটিআরআইয়ের মূল্যায়ন অনুযায়ী, শুল্ক অপরিবর্তিত থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমনিবিড় উৎপাদন খাত। যেমন বস্ত্রশিল্প। বস্ত্র রপ্তানির ৪৪ শতাংশ যায় মার্কিন মুলুকে। পোশাকের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গেলে বাজারের বড় অংশ চলে যাবে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে এ ক্ষেত্রে শুল্কহার ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ১৯ শতাংশ।

কার্পেট শিল্পের মোট ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন শুল্ক বহাল থাকলে বাজার কাড়বে তুরস্ক (১৫ শতাংশ), মিসর (১০ শতাংশ) ও কানাডা (০ শতাংশ)। যুক্তরাষ্ট্রে রত্ন ও পাথর রপ্তানি হয় ৪১ শতাংশ। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, শুল্কনীতিতে বদল না এলে অনেকেই উৎপাদনকেন্দ্র ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

চিংড়ি ও সি ফুড ব্যবসার ৩২ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেই বাজার থাইল্যান্ড (১৯ শতাংশ), ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ) ও ইন্দোনেশিয়ায় (১৯ শতাংশ) চলে যেতে পারে।

বাণিজ্য হারালে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সমাজে তার বিরূপ প্রতিফলন ঘটবে। অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে হামাগুড়ি দেবে রাজনৈতিক সংকট। কী হতে পারে, তা এখনো কল্পনাতীত। বিপর্যয় মোকাবিলার কোনো চাবিকাঠি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আস্তিনে লুকোনো আছে কি না, এই মুহূর্তে অজানা।

কার্পেট শিল্পের মোট ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন শুল্ক বহাল থাকলে বাজার কাড়বে তুরস্ক (১৫ শতাংশ), মিসর (১০ শতাংশ) ও কানাডা (০ শতাংশ)। যুক্তরাষ্ট্রে রত্ন ও পাথর রপ্তানি হয় ৪১ শতাংশ। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, শুল্কনীতিতে বদল না এলে অনেকেই উৎপাদনকেন্দ্র ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

শুল্কহার কমানো ও বাণিজ্যচুক্তি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ভারতকে কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা ছাড় দিতে বাধ্য করা হতে পারে, তা–ও এখনো জানা নেই। দুই দেশের মধ্যে সেই আলোচনার নির্যাস পুরোপুরি বাইরে আসেনি।

তবে এটুকু জানা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রবল চাপ দিচ্ছেন কৃষি ও দুগ্ধজাত ক্ষেত্র উন্মুক্ত করার। মোদিও জানেন, চাপে মাথা নোয়ালে সেটা তাঁর শক্তিশেল হয়ে উঠবে। জানেন বলেই ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথনের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে চড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে। সে জন্য তিনি প্রস্তুত আছেন। কিন্তু কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করবেন না।

বিপদটা অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিকও। মোদির তা জানা। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া লিভস ইন ইটস ভিলেজেস।’ আজও তা সত্য। এখনো জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ আসে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাত থেকে। জনসংখ্যার এক বিরাট অংশও কৃষিনির্ভর। গ্রামীণ ভারতের ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র চাষি।

দুগ্ধজাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৮ কোটি মানুষ। জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ এই শিল্পের অবদান। এই দুই ক্ষেত্রে মার্কিন সংস্থার দাপাদাপির অর্থ কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা ছিনিয়ে নেওয়া। কী করে পায়ে কুড়াল মারবেন প্রধানমন্ত্রী?

২৭ আগস্ট আগতপ্রায়। শুল্ক নীতির মোকাবিলা কীভাবে হবে, এখনো অজানা। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তিও অধরা। এ অবস্থায় দ্রুত বদলাচ্ছে ভূরাজনৈতিক মেরুকরণ। ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলন হতে চলেছে পরবর্তী মাইলফলক।

চীন–ভারত–রাশিয়া হাত ধরাধরি করে এগোলে কী হতে পারে, সেদিকে নজর নিবদ্ধ সবার। রাজনৈতিক জীবনের সংকটতম অধ্যায় পার করছেন নরেন্দ্র মোদি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র জন ত ক দশম ক ৬ দশম ক ৩ বস ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে কতটা ক্ষতি হতে পারে ভারতের, মোদিও কি পড়ছেন ঝুঁকিতে

কথায় বলে, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। আপাতত সেই আশার প্রথম ধাপ ২৭ আগস্ট। ভারত মনে করছে, তার আগে কিছু একটা আশ্বাস এলেও আসতে পারে। জরিমানার ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য থেকে রেহাই মিললেও মিলতে পারে। না হলে ওই দিন থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ধার্যের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

তবে বৈঠকের আগে রাশিয়া যেভাবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিচ্ছে আর ট্রাম্প ইউক্রেন শান্তি আটকে দিলে কঠোর পরিণতির হুমকি দিচ্ছেন, তাতে দোলাচলও কম নয়। আশা যদি মরীচিকার মতো মিলিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি সাপ–লুডো খেলার মতো ঝুপ করে কোথায় যে নেমে যাবে, কেউ জানে না।

এমন ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে ভারতের অর্থনীতি আগে পড়েনি। অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটির (ওইসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের পণ্য আমদানির পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলার। ট্রাম্পের কোপে পড়ে ভারতের এই বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অবস্থা নিমেষের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিতে পৌঁছে যাবে।

ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঝাপটা সামলানোর ক্ষমতা রাখেন। ফিকি বা সিআইআইয়ের মতো ভারতীয় বণিক সংগঠন কোনোদিন কল্পনাও করেনি, দেশীয় রপ্তানিকারকদের কখনো ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির মতো সুনামির মোকাবিলা করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা করেছেন, তা নাকি ঘটি বাটি বেচে বিবাগী হওয়ার মতো!

ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঝাপটা সামলানোর ক্ষমতা রাখেন। ফিকি বা সিআইআইয়ের মতো ভারতীয় বণিক সংগঠন কোনোদিন কল্পনাও করেনি, দেশীয় রপ্তানিকারকদের কখনো ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির মতো সুনামির মোকাবিলা করতে হবে।

ট্রাম্প যখন ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপানোর নিদান দেন, অর্থনীতিবিদদের তখন ধারণা হয়েছিল বার্ষিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৬–এ নেমে আসবে। ভারতের মোট জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ স্রেফ যুক্তরাষ্ট্রের অবদান। মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশেরও অভিমুখ এই দেশ। ৫০ শতাংশ শুল্কহার জিডিপির কী হাল করবে, সেই হিসাব কষতে অর্থনীতিবিদরা হিমশিম খাচ্ছেন।

অথচ, মাত্র ছয় মাস আগে ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বন্ধু ট্রাম্পের সাহচর্যে থেকে বলেছিলেন, আগামী পাঁচ বছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে।

বিনা মেঘে বজ্রপাতের পর এখন কোথায় কত ক্ষতি, কোন ক্ষেত্রের বিপদ কতটা, এসব চিন্তাই বড় হয়ে উঠেছে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) অনুমান, এই সিদ্ধান্তের বদল না হলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

জিটিআরআই জানাচ্ছে, শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকলে ২৭ আগস্টের পর জৈব রাসায়নিক রপ্তানিতে মোট শুল্ক ধার্য হবে ৫৪ শতাংশ, কার্পেটে প্রায় ৫২ দশমিক ৯, বস্ত্রে ৬০ দশমিক ৩, পোশাকে ৬৩ দশমিক ৬, তৈরি পোশাকে ৫৯, আসবাবপত্র ও বিছানায় ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ।

ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস ক্ষেত্র এখনো অতিরিক্ত শুল্কের আওতার বাইরে রয়েছে। কিন্তু অটোমোবাইল, বস্ত্র ও পোশাক এবং জুয়েলারির মতো শ্রমনির্ভর শিল্পে ধাক্কা মারাত্মক হতে পারে। গুজরাটের সুরাত ভারতের ‘হীরা নগরী’ বলে পরিচিত। শুধু এই জেলাতেই হীরা কাটিং ও পালিশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আনুমানিক ১১ লাখ শ্রমিক।

জিটিআরআই জানাচ্ছে, শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকলে ২৭ আগস্টের পর জৈব রাসায়নিক রপ্তানিতে মোট শুল্ক ধার্য হবে ৫৪ শতাংশ, কার্পেটে প্রায় ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ, বস্ত্রে ৬০ দশমিক ৩ শতাংশ, পোশাকে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ, তৈরি পোশাকে ৫৯ শতাংশ, আসবাবপত্র ও বিছানায় ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ।

রাজ্যের আহমেদাবাদ, রাজকোট ও অন্যত্র মিলিয়ে মোট ২০ লাখ দক্ষ–আধা দক্ষ শ্রমিক অনাগত ভবিষ্যতের শঙ্কায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। হীরাশিল্পে এখন দিনদুপুরে আঁধার ছেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বন্ধ হলে বিকল্প বাজারের সন্ধান করতে হবে। কোভিডের ছোবল পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এই মার্কিনি ধাক্কায় হীরাশিল্প টালমাটাল।

জিটিআরআইয়ের মূল্যায়ন অনুযায়ী, শুল্ক অপরিবর্তিত থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমনিবিড় উৎপাদন খাত। যেমন বস্ত্রশিল্প। বস্ত্র রপ্তানির ৪৪ শতাংশ যায় মার্কিন মুলুকে। পোশাকের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গেলে বাজারের বড় অংশ চলে যাবে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে এ ক্ষেত্রে শুল্কহার ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ১৯ শতাংশ।

কার্পেট শিল্পের মোট ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন শুল্ক বহাল থাকলে বাজার কাড়বে তুরস্ক (১৫ শতাংশ), মিসর (১০ শতাংশ) ও কানাডা (০ শতাংশ)। যুক্তরাষ্ট্রে রত্ন ও পাথর রপ্তানি হয় ৪১ শতাংশ। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, শুল্কনীতিতে বদল না এলে অনেকেই উৎপাদনকেন্দ্র ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

চিংড়ি ও সি ফুড ব্যবসার ৩২ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেই বাজার থাইল্যান্ড (১৯ শতাংশ), ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ) ও ইন্দোনেশিয়ায় (১৯ শতাংশ) চলে যেতে পারে।

বাণিজ্য হারালে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সমাজে তার বিরূপ প্রতিফলন ঘটবে। অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে হামাগুড়ি দেবে রাজনৈতিক সংকট। কী হতে পারে, তা এখনো কল্পনাতীত। বিপর্যয় মোকাবিলার কোনো চাবিকাঠি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আস্তিনে লুকোনো আছে কি না, এই মুহূর্তে অজানা।

কার্পেট শিল্পের মোট ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন শুল্ক বহাল থাকলে বাজার কাড়বে তুরস্ক (১৫ শতাংশ), মিসর (১০ শতাংশ) ও কানাডা (০ শতাংশ)। যুক্তরাষ্ট্রে রত্ন ও পাথর রপ্তানি হয় ৪১ শতাংশ। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, শুল্কনীতিতে বদল না এলে অনেকেই উৎপাদনকেন্দ্র ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

শুল্কহার কমানো ও বাণিজ্যচুক্তি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ভারতকে কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা ছাড় দিতে বাধ্য করা হতে পারে, তা–ও এখনো জানা নেই। দুই দেশের মধ্যে সেই আলোচনার নির্যাস পুরোপুরি বাইরে আসেনি।

তবে এটুকু জানা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রবল চাপ দিচ্ছেন কৃষি ও দুগ্ধজাত ক্ষেত্র উন্মুক্ত করার। মোদিও জানেন, চাপে মাথা নোয়ালে সেটা তাঁর শক্তিশেল হয়ে উঠবে। জানেন বলেই ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথনের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে চড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে। সে জন্য তিনি প্রস্তুত আছেন। কিন্তু কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করবেন না।

বিপদটা অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিকও। মোদির তা জানা। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া লিভস ইন ইটস ভিলেজেস।’ আজও তা সত্য। এখনো জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ আসে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাত থেকে। জনসংখ্যার এক বিরাট অংশও কৃষিনির্ভর। গ্রামীণ ভারতের ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র চাষি।

দুগ্ধজাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৮ কোটি মানুষ। জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ এই শিল্পের অবদান। এই দুই ক্ষেত্রে মার্কিন সংস্থার দাপাদাপির অর্থ কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা ছিনিয়ে নেওয়া। কী করে পায়ে কুড়াল মারবেন প্রধানমন্ত্রী?

২৭ আগস্ট আগতপ্রায়। শুল্ক নীতির মোকাবিলা কীভাবে হবে, এখনো অজানা। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তিও অধরা। এ অবস্থায় দ্রুত বদলাচ্ছে ভূরাজনৈতিক মেরুকরণ। ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলন হতে চলেছে পরবর্তী মাইলফলক।

চীন–ভারত–রাশিয়া হাত ধরাধরি করে এগোলে কী হতে পারে, সেদিকে নজর নিবদ্ধ সবার। রাজনৈতিক জীবনের সংকটতম অধ্যায় পার করছেন নরেন্দ্র মোদি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ