বাড়িতে হাঁটুপানি, দুর্ভোগে রাজশাহীর বস্তিবাসী
Published: 15th, August 2025 GMT
বাড়ির ভেতরে একহাঁটু পানি। সে কারণে একটি চৌকির ওপর চুলা নিয়ে রান্না করছেন মাজেরা বিবি। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের পঞ্চবটি খড়বোনা এলাকায়। এটি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাতেই। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে মাজেরার মতো আরও অনেকের বাড়িতেই এখন হাঁটুপানি।
মাজেরা বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ ধইরি পানির ভিতরেই আছি। কিছু তো করার নাই। তাকায় আছি যে কবে পানি নামবি। পানিত থাইকি হাত-পাও সব ঘা হয়ে গেল। খালি চুলকায়।’’
শহরের দক্ষিণে পদ্মা নদী পাড়ের বস্তিবাসী ভাবছেন, নদীর পানি কমলেই স্বস্তি পাবেন তারা। কিন্তু শহরের উত্তরপ্রান্তের কিছু বস্তির মানুষের ভয় আকাশের বৃষ্টিতে। একটু বৃষ্টি হলে তাদের বাড়িঘরেও পানি জমে যায়। রাজশাহীতে এবার বৃষ্টি বেশিই হচ্ছে। তাই লম্বা সময় ধরে অসংখ্য বাড়িতে পানি জমে আছে। উন্নয়নের জোয়ারে মধ্যশহরে চাকচিক্য এলেও শহরতলির এই বস্তিগুলোতে ড্রেনও নির্মাণ হয়নি। ফলে বাসিন্দারা আছেন চরম দুর্ভোগে।
নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের পাশের বস্তিতে বাস করে অনেকগুলো পরিবার। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি ঢুকেছে বাড়িঘরে।
বস্তির বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘‘আমরা শহরেই থাকি, কিন্তু বাস করি গ্রামের মতো। নদীতে পানি বাড়লেই ঘরবাড়ি ডুবে যায়। এটা আমাদের প্রতিবছরের দুর্ভোগ।’’
রাজশাহী শহরের জন্য পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত পানির পরিমাপ একই ছিল। নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার মাত্র ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। পদ্মা পাড়ের বস্তিগুলোর মানুষেরা নদীর পানি কমে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, রাজশাহীতে এবার বর্ষা মৌসুমে অন্য বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। গেল মে মাসে এখানে ২৯৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার, জুনে ২১৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং জুলাইয়ে ৩৮০ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চলতি আগস্টে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৬২ দশমিক ৭ মিলিমিটার। এই বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাড়া-মহল্লার মানুষ ও বস্তিবাসীকে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বস্তিশুমারী অনুযায়ী, রাজশাহী নগরে বস্তির সংখ্যা ১০৪টি। প্রায় ৮১ শতাংশ পরিবার ঝুপড়ি বা ছোট টিনের ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করেন। বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে তাদের বেশিরভাগেরই বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। ডুবে যায় চলাচলের রাস্তা।
রাজশাহীতে মধ্যশহরের উন্নয়নে যেভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, সেভাবে গুরুত্ব পায়নি শহরতলির এসব বস্তি ও পাড়ামহল্লা। পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণ না হওয়ায় সেখানে পানি জমে থাকে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে নগরের আমচত্বর সংলগ্ন রায়পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে এলাকার বাতেনের বিল পানিতে ভেসে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের বস্তিতে।
হাঁটু পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয় বস্তিবাসীকে।
কোমরসমান পানি মাড়িয়ে বাড়ি যাতায়াত করেন কুরবান আলী। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় বৃষ্টির পানি কোনো ড্রেন দিয়ে অন্য কোনো দিকে যাওয়ার ব্যবস্থা নাই। সব পানি বিলে নামে। বিল একসময় ভরে যায়। তারপর পানি ঢুকে আটকে থাকে মহল্লায়। বছরের পর বছর আমরা দুর্ভোগের মধ্যে আছি। সিটি করপোরেশনের ভেতরে হলেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না।’’
নগরের বড়বনগ্রাম এলাকাতেও অনেক বাড়িতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সব উন্নয়ন শুধু সাহেববাজার আর রেলগেট এলাকায়। আমরা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হলেও এদিকে কারো খেয়াল নাই। এদিকে লাইট জ্বলে না। ড্রেন নাই। বৃষ্টির পানিতেই আমাদের হাবুডুবু খেতে হয়। ট্যাক্স ঠিকই দিচ্ছি, সেবা পাচ্ছি না। মেয়র-কাউন্সিলরও কেউ নাই যে- কাউকে গিয়ে আমাদের দুর্ভোগের কথা বলে আসব।’’
সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো.
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন ও নির্বাহী প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মাহমুদুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি। জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানও কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ র প ন বস ত ব স র বস ত এল ক য় আম দ র দশম ক নগর র শহর র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বাড়িতে হাঁটুপানি, দুর্ভোগে রাজশাহীর বস্তিবাসী
বাড়ির ভেতরে একহাঁটু পানি। সে কারণে একটি চৌকির ওপর চুলা নিয়ে রান্না করছেন মাজেরা বিবি। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের পঞ্চবটি খড়বোনা এলাকায়। এটি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাতেই। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে মাজেরার মতো আরও অনেকের বাড়িতেই এখন হাঁটুপানি।
মাজেরা বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ ধইরি পানির ভিতরেই আছি। কিছু তো করার নাই। তাকায় আছি যে কবে পানি নামবি। পানিত থাইকি হাত-পাও সব ঘা হয়ে গেল। খালি চুলকায়।’’
শহরের দক্ষিণে পদ্মা নদী পাড়ের বস্তিবাসী ভাবছেন, নদীর পানি কমলেই স্বস্তি পাবেন তারা। কিন্তু শহরের উত্তরপ্রান্তের কিছু বস্তির মানুষের ভয় আকাশের বৃষ্টিতে। একটু বৃষ্টি হলে তাদের বাড়িঘরেও পানি জমে যায়। রাজশাহীতে এবার বৃষ্টি বেশিই হচ্ছে। তাই লম্বা সময় ধরে অসংখ্য বাড়িতে পানি জমে আছে। উন্নয়নের জোয়ারে মধ্যশহরে চাকচিক্য এলেও শহরতলির এই বস্তিগুলোতে ড্রেনও নির্মাণ হয়নি। ফলে বাসিন্দারা আছেন চরম দুর্ভোগে।
নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের পাশের বস্তিতে বাস করে অনেকগুলো পরিবার। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি ঢুকেছে বাড়িঘরে।
বস্তির বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘‘আমরা শহরেই থাকি, কিন্তু বাস করি গ্রামের মতো। নদীতে পানি বাড়লেই ঘরবাড়ি ডুবে যায়। এটা আমাদের প্রতিবছরের দুর্ভোগ।’’
রাজশাহী শহরের জন্য পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত পানির পরিমাপ একই ছিল। নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার মাত্র ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। পদ্মা পাড়ের বস্তিগুলোর মানুষেরা নদীর পানি কমে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, রাজশাহীতে এবার বর্ষা মৌসুমে অন্য বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। গেল মে মাসে এখানে ২৯৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার, জুনে ২১৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং জুলাইয়ে ৩৮০ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চলতি আগস্টে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৬২ দশমিক ৭ মিলিমিটার। এই বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাড়া-মহল্লার মানুষ ও বস্তিবাসীকে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বস্তিশুমারী অনুযায়ী, রাজশাহী নগরে বস্তির সংখ্যা ১০৪টি। প্রায় ৮১ শতাংশ পরিবার ঝুপড়ি বা ছোট টিনের ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করেন। বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে তাদের বেশিরভাগেরই বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। ডুবে যায় চলাচলের রাস্তা।
রাজশাহীতে মধ্যশহরের উন্নয়নে যেভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, সেভাবে গুরুত্ব পায়নি শহরতলির এসব বস্তি ও পাড়ামহল্লা। পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণ না হওয়ায় সেখানে পানি জমে থাকে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে নগরের আমচত্বর সংলগ্ন রায়পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে এলাকার বাতেনের বিল পানিতে ভেসে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের বস্তিতে।
হাঁটু পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয় বস্তিবাসীকে।
কোমরসমান পানি মাড়িয়ে বাড়ি যাতায়াত করেন কুরবান আলী। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় বৃষ্টির পানি কোনো ড্রেন দিয়ে অন্য কোনো দিকে যাওয়ার ব্যবস্থা নাই। সব পানি বিলে নামে। বিল একসময় ভরে যায়। তারপর পানি ঢুকে আটকে থাকে মহল্লায়। বছরের পর বছর আমরা দুর্ভোগের মধ্যে আছি। সিটি করপোরেশনের ভেতরে হলেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না।’’
নগরের বড়বনগ্রাম এলাকাতেও অনেক বাড়িতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সব উন্নয়ন শুধু সাহেববাজার আর রেলগেট এলাকায়। আমরা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হলেও এদিকে কারো খেয়াল নাই। এদিকে লাইট জ্বলে না। ড্রেন নাই। বৃষ্টির পানিতেই আমাদের হাবুডুবু খেতে হয়। ট্যাক্স ঠিকই দিচ্ছি, সেবা পাচ্ছি না। মেয়র-কাউন্সিলরও কেউ নাই যে- কাউকে গিয়ে আমাদের দুর্ভোগের কথা বলে আসব।’’
সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান বলেন, ‘‘রাজশাহীর মধ্যশহরে উন্নয়নের কমতি নেই, কিন্তু শহরলাগোয়া এলাকাগুলো পিছিয়ে আছে। বড় প্রকল্প পড়ে আছে, টাকা পড়ে আছে কিন্তু কেন জানি শহরের আশপাশের এলাকাগুলোর উন্নয়ন করা হয়নি। তারা শুধু ট্যাক্স বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ দিয়ে রেখেছে। এটা তো চলতে পারে না। উন্নয়নটা যেন সুষম হয়, সেটা দেখতে হবে।’’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন ও নির্বাহী প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মাহমুদুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি। জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানও কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
ঢাকা/এস