দুর্গাপূজায় ৮০ হাজার ভলেন্টিয়ার থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 21st, September 2025 GMT
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও দুর্গাপূজা ২০২৫ উপলক্ষে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। পূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন শুরু হবে এবং কোনো জেলাকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে না।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আসন্ন পূজার বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পূজার নিরাপত্তার জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বপালন করবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন-গ্রাউন্ড ডিপ্লয়মেন্ট ২৪ তারিখ থেকে শুরু হবে।। বর্তমানে থানা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আনসার টহল দিচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৮০,০০০ ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকবে, যাতে পূজা খুব ভালোভাবে উদযাপিত হয়। পূজা কমিটি তাদের মণ্ডপে সাতজন করে গার্ড রাখবে।”
উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, “এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হওয়ায় এর পবিত্রতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। মণ্ডপে জুতা বা স্যান্ডেল নিয়ে ওঠা যাবে না। এই বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, যেন কোনোভাবেই এর পবিত্রতা ভঙ্গ না হয়।”
একটি সংগঠন ২৯টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করেছে এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে সব জায়গার জন্যই এবার পূজা নির্বিঘ্ন হবে। কোনো জায়গায় কোনো ওরকম ঝুঁকিপূর্ণ নাই। ছোটখাট দুই একটি ঘটনা ঘটলে সাথে সাথেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মণ্ডপগুলিতে যেখানে সিটিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, সেখানে যারা ভাঙচুর করছে, তাদেরও ধরা হচ্ছে।”
ঢাকা/এএএম/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বর ষ ট র উপদ ষ ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
আজ মহালয়া। সনাতন ধর্মের ভাষ্যমতে, দিনটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনার প্রতীক। মহালয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন, তাঁদের শান্তি কামনা করেন এবং একই সঙ্গে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানান।
মহালয়াকে কেবল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়; বরং সনাতনী সমাজের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সামাজিক সংহতির এক গভীর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ভোরের আলো আর শিশিরসিক্ত প্রভাতে এ মহালয়ার আচার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রত্যেক প্রজন্মকে অতীতের শিক্ষার আলো ধরে সমাজের নৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে উদ্যাপিত হবে। এ উৎসবের মর্যাদা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অশুভ চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে প্রতিমা ভাঙচুরের মাধ্যমে অনৈতিক প্ররোচনা সৃষ্টি করছে। গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে, যেটি উদ্বেগজনক। এ কর্মকাণ্ড শুধু ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না; বরং সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংহতিতেও ক্ষতি করে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের ৫টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তাই দুর্গাপূজায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎপরতা এ প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। কমিশনারের নেতৃত্বে ডিএমপি ইতিমধ্যে ২৫৮টি মণ্ডপে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মণ্ডপভিত্তিক পাহারা, পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক তৎপরতা, সিসিটিভি স্থাপন, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রতিরোধে নজরদারি। এটি প্রমাণ করে, সামাজিক ন্যায় ও আইনশৃঙ্খলার অটল ভিত্তি রক্ষায় রাষ্ট্র সচেতন ও সংবেদনশীল ভূমিকা গ্রহণ করছে।
একইভাবে সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশি পাহারা, সিসিটিভি নজরদারি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, জরুরি সেবা সংযোগ ও দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের একক তৎপরতা যথেষ্ট নয়, স্থানীয় কমিউনিটি, পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ সমানভাবে অপরিহার্য। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
দার্শনিকভাবে ভাবলে দুর্গাপূজা কেবল দেবীর আরাধনা নয়, এটি মানবসমাজের নৈতিক সংহতি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক জীবন্ত প্রতীক। প্রতিমা ভাঙচুর বা অশুভ প্ররোচনার বিরুদ্ধে সক্রিয় তৎপরতা মানে কেবল আইন রক্ষা নয়; বরং সমাজের নৈতিক ক্ষেত্রও রক্ষা করা। নাগরিকের সচেতনতা ও রাষ্ট্রের সংহত তত্ত্বাবধানের সমন্বয় নিশ্চিত করলে উৎসবের মর্যাদা ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট থাকবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সুস্পষ্ট। সেটি হলো কেউ যেন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পবিত্রতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূক্ষ্ম সূত্রকে বিপন্ন করতে না পারে। রাষ্ট্রের নীতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম যদি জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলিত হয়, তবেই আমরা দেখতে পাব উৎসবমুখর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার চিত্র। তখন এটি কেবল ধর্মীয় উৎসবের মহিমা বহন করবে না; বরং মানবসমাজের নৈতিক সংহতি, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সামাজিক সুষমতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।