দেশের বাজারে জুতার ব্যবসায় বহুজাতিক কোম্পানি বাটাকে ক্রমেই পেছনে ফেলছে দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। দেশের জুতা বিক্রিতে বড় হিস্যা এখন অ্যাপেক্সের। বাটার চেয়ে অ্যাপেক্সের ব্যবসা বেড়ে এখন প্রায় তিন গুণ হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের কোম্পানি দুটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ব্যবসা করেছে ৪৮৪ কোটি টাকার। একই সময়ে বাটা শু ব্যবসা করেছে ১৮৪ কোটি টাকার। সেই হিসাবে বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেছে। অর্থাৎ বাটার চেয়ে অ্যাপেক্সের ব্যবসা প্রায় তিন গুণ বেশি।

গত প্রান্তিকে আমাদের বিক্রি বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ২৬ সেপ্টেম্বরে ‘ফাউন্ডারস ডে’র বিক্রি। তাতে সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে। নাসিম মঞ্জুর, এমডি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার

এদিকে চলতি বছরের শুরুতেও মুনাফার দিক থেকে অ্যাপেক্সের তুলনায় এগিয়ে ছিল বাটা শু। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি–মার্চ) বাটা শু মুনাফা করেছিল ৩৭ কোটি টাকা। আর অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা ছিল ৯৭ লাখ টাকা। কিন্তু বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) এসে বছরের শুরুর এই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার যেখানে আড়াই কোটি টাকা মুনাফা করেছে, সেখানে বাটা শু লোকসান করেছে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বশেষ জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফায় অ্যাপেক্সের চেয়ে বাটা শুর পিছিয়ে পড়ার প্রধান কারণ প্রশাসনিক ও পণ্য বিপণন, বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ বেশি খরচ। উল্লিখিত সময়ে ১৮৪ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে বাটা শুর প্রশাসনিক, বিপণন ও সরবরাহ বাবদ খরচ হয়েছে সাড়ে ৭৯ কোটি টাকার বেশি। সেখানে ৪৮৪ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে অ্যাপেক্সের এ খাতে খরচ হয়েছে ৮২ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে ১৮৪ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয়ের বিপরীতে বাটা শুর পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৬১ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে। আর জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে অ্যাপেক্সের ৪৮৪ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ছিল ৩৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৭৩ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে। এ তুলনায় দেখা যায়, ১০০ টাকা আয় করতে বাটার উৎপাদন খরচ যেখানে ৬১ টাকা, সেখানে অ্যাপেক্সের ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ৭৩ টাকা। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার পরও বাটার চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। যার প্রধান কারণ প্রশাসনিক ও বিপণন খরচ বাটার তুলনায় অ্যাপেক্সের কম।

আয় ও মুনাফার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক প্রান্তিকে প্রথম আমরা বাটার চেয়ে মুনাফা বেশি করেছি। ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে গত প্রান্তিকে আমাদের বিক্রি বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ২৬ সেপ্টেম্বরে ‘ফাউন্ডারস ডে’র বিক্রি। এ উপলক্ষে দেওয়া বিশেষ ছাড়ে পণ্য বিক্রিতে অবিশ্বাস্য সাড়া পেয়েছি। তাতে সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে। যার সুফল ওই প্রান্তিকে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আমরা পরিচালন খরচ কমাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদনশীলতাও অনেক বাড়িয়েছি। পাশাপাশি মানবসম্পদে আমরা বিনিয়োগ করেছি। যার সুফলও ব্যবসায় পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি মানবসম্পদে বিনিয়োগ ছাড়া ব্যবসায় ভালো করা কঠিন। আমাদের কর্মীরাই আমাদের ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। পাশাপাশি সব বয়সের সব মানুষের পছন্দ ও সামর্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা পণ্য ডিজাইন, মূল্য নির্ধারণ ও বাজারজাত করার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী। 

দেশে জুতার বাজারে বর্তমানে শীর্ষ দুই কোম্পানি অ্যাপেক্স ও বাটা। জুতার বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে বহুজাতিক বাটাকে অনেক আগেই পেছনে ফেলেছে অ্যাপেক্স। তবে এত দিন মুনাফায় বাটার চেয়ে পিছিয়ে ছিল অ্যাপেক্স। বাটা শু তাদের আর্থিক বছরের হিসাব করে পঞ্জিকা বছরের (জানুয়ারি–ডিসেম্বর) সঙ্গে মিলিয়ে। আর অ্যাপেক্সের আর্থিক বছর হিসাব হয় অর্থবছরের (জুলাই–জুন) সঙ্গে মিলিয়ে। সেই হিসেবে অ্যাপেক্সের সর্বশেষ হিসাব বছর ছিল ২০২৪–২৫ অর্থবছর। ওই অর্থবছরে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ব্যবসা করেছে ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার। গত অর্থবছর শেষে অ্যাপেক্সের কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। আর বাটা শু ২০২৪ সালে ব্যবসা করেছে ৯২৭ কোটি টাকার। তাতে গত বছর শেষে বাটা মুনাফা করেছিল সাড়ে ২৯ কোটি টাকার বেশি। 

কোম্পানি দুটির পুরো বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায়ও দেখা যায়, বাটার চেয়ে ৮৪৬ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেও মুনাফায় পিছিয়ে ছিল অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। কারণ, বাটার চেয়ে অ্যাপেক্সের পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি। ২০২৪–২৫ হিসাব বছরে অ্যাপেক্সের ১০০ টাকা আয় করতে পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে ৭১ টাকা। সেখানে বাটার ১০০ টাকা আয়ের পেছনে উৎপাদন খরচ ছিল ৫৩ টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই স প ট ম বর প র ন ত ক অ য প ক স ফ টওয় য র খরচ হয় ছ র ব পর ত র আর থ ক ব যবস র ১০০ ট ক র ব যবস আম দ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

পণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের কাছে ইয়াংওয়ান, অর্ধবিলিয়ন ছাড়িয়ে হা-মীম, মণ্ডল ও ডিবিএল

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানটি দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়ী কিহাক সাংয়ের মালিকানাধীন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের মালিকানাধীন হা-মীম গ্রুপ।

ইয়াংওয়ান ও হা-মীম ছাড়াও রপ্তানিতে সেরা দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা বাকি আট শিল্প গ্রুপ হচ্ছে মণ্ডল গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, অনন্ত, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, পলমল গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ ও মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ।

সেরা দশে থাকা নয়টি শিল্প গ্রুপের রপ্তানির ৯০ থেকে ১০০ শতাংশই তৈরি পোশাক। এই তালিকায় ব্যতিক্রম শুধু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে শুরু করে জুতা, আসবাব, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল পণ্য—প্রায় সবই আছে শিল্প গ্রুপটির রপ্তানির তালিকায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রথম আলো বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর এই তালিকা তৈরি করেছে। এনবিআরের পরিসংখ্যান থেকে স্থানীয় বা প্রচ্ছন্ন রপ্তানি ও নমুনা রপ্তানি বাদ দিয়ে প্রকৃত রপ্তানির হিসাব নেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশ থেকে মোট ৪৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ দশ গ্রুপের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ৫২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১১ শতাংশ।

গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের কাছে ইয়াংওয়ান, অর্ধবিলিয়ন ছাড়িয়ে হা-মীম, মণ্ডল ও ডিবিএল
  • টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে