জেনেভা ক্যাম্পে বাকরুদ্ধ এক অভিনেতার কান্না
Published: 28th, September 2025 GMT
একসময় সিনেমার পর্দা কাঁপত তার উপস্থিতিতে। না, তিনি নায়ক ছিলেন না, পোস্টারে নাম ছাপা হতো না। কিন্তু সিনেমাপ্রেমীরা তাকে চিনতেন এক ঝলকেই—‘আরে এ তো ফকিরা!’
ইসমাইল হোসেন ফকিরা। নামটা অনেকের কাছে হয়তো অপরিচিত। অথচ সাত শতাধিক সিনেমায় তার পদচিহ্ন। রাজ্জাক থেকে শাকিব খান—সব প্রজন্মের নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কখনো খলনায়কের সহযোগী, কখনো পুলিশ, কখনো ফাইটার। ক্ষুদ্র চরিত্র অথচ অপরিহার্য।
আরো পড়ুন:
নায়িকা মুনমুনের সহকারী মাহি মারা গেছেন
প্রত্যেক নিহতের পরিবার পাবে ২৭ লাখ টাকা: বিজয়
সেই মানুষটি শুয়ে আছেন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ছোট্ট একটি কামরায়। তিন দফা স্ট্রোকে বাকরুদ্ধ, চোখের জলই তার একমাত্র ভাষা। যেন জীবনের শেষ নাট্যমঞ্চ, যেখানে কোনো সংলাপ নেই, কেবল নিঃশব্দ অভিনয়।
সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সনি রহমান দেখতে গিয়েছিলেন ফকিরাকে। তিনি বলেন, “ফকিরা ভাই এক বছর ধরে কথা বলতে পারেন না। শুধু চোখে পানি ফেলেন। মাঝে মাঝে শিশুর মতো আচরণ করেন, তবে মানুষ চিনতে পারেন। মিশা ভাইকে ভিডিও কলে দেখে হাত নাড়িয়েছেন। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করেও উন্নতি হয়নি।”
সিনেমার মানুষ ফকিরার এই অসহায় অবস্থায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এগিয়ে এসেছে। সনি রহমান বলেন, “ফকিরা ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্পী সমিতি। শনিবার সমিতির আয়োজিত সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”
স্মৃতির ভাঁজে এখনো ভেসে ওঠে সাদা মোটরসাইকেলে ফকিরার দাপট। এফডিসির ভেতরে বাইক ছুটিয়ে আসা তার ছিল রুটিন। শোনা যায়, সালমান শাহর সিনেমাতেও সেই মোটরসাইকেল জায়গা পেয়েছিল। আজ বাইক থেমে গেছে, ফকিরার জীবনও থেমে আছে প্রায়।
আমরা দর্শকরা তাকে মনে রাখিনি। আমাদের মনে থাকে কেবল নায়ক-নায়িকাদের। অথচ ফকিরাদের মতো মানুষরাই সিনেমার কাঠামো দাঁড় করিয়েছিলেন। তারা গল্পকে রঙিন করেছিলেন, তারা পর্দার মশলা হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু আলো নিভতেই তারা পরিণত হয়েছেন অন্ধকারে—অলক্ষ্যে, অবহেলায়।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নাকি সহযোগিতা করবে। হয়তো কিছু টাকা আসবে, কিছুদিনের ওষুধ চলবে। তারপর? ফকিরার জীবনযুদ্ধ তো থেমে থাকবে না। সিনেমার সহশিল্পীদের এই অবহেলা আমাদের সমাজের নগ্ন প্রতিচ্ছবি। যতদিন আলোর ঝলকানি আছে, ততদিন প্রশংসা, তালি, সেলফি—পর্দার নায়কেরাও যাকে চিনতেন সেই ফকিরা। অথচ বাস্তবের মঞ্চে তিনি এখন একা।
কথা বলতে পারেন না, কিন্তু মানুষ চিনতে পারেন। সম্প্রতি ভিডিও কলে মিশা সওদাগরকে দেখে হাত নাড়িয়েছেন। হয়তো এ হাত একসময় সিনেমার পর্দায় অস্ত্র ধরেছিল, মারপিট করেছে, নায়ককে বাঁচিয়েছে। আজ সেই হাত কেবল কাঁপে—চেনা মুখ দেখলে কৃতজ্ঞতায়, অভিমানেও হয়তো।
ফকিরার গল্প কেবল একজন শিল্পীর নয়, সিনেমার আড়ালে লুকানো হাজারো নামহীন শিল্পীর গল্প। তারা গড়েছেন সিনেমা, কিন্তু সিনেমা তাদের জীবন গড়তে পারেনি।
জেনেভা ক্যাম্পের ছোট ঘরে বসে ফকিরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন—সিনেমার আলো নিভলে শিল্পীরা আসলে কতটা অন্ধকারে ডুবে যান।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
হোয়াটসঅ্যাপ আসার আগে মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য অ্যাপ বানিয়েছিলাম
তখন হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না। বাইরে থেকে বাংলাদেশে টেলিফোন করাটা ছিল এক বিরাট ঝক্কি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায়ই সময়ে অসময়ে আমাকে বাংলাদেশে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হতো। টেলিফোন করার দু-একটা অ্যাপ আমার আইফোনে ছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল খুব বাজে।
হঠাৎ লাইন কেটে যেত, ক্রেডিট কার্ড থেকে বেশি পয়সা কেটে নিতো। একসময় মনে হলো নিজেই একটা টেলিফোন অ্যাপ বানাই না কেন। যেহেতু আইফোন ব্যবহার করি, তাই নিয়েই শুরু করলাম।
কিছুদিন পড়াশোনা করে বুঝলাম, কাজটা সহজ নয়। আর বেশ সময়সাপেক্ষ। ভয়েসওভার টেলিফোন (ভিওআইপি) অ্যাপ্লিকেশন এমনিতেই বেশ জটিল ধরনের অ্যাপ। আর আমরা যেসব প্ল্যাটফর্মে কাজ করি, সেগুলো কতগুলো নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড ও প্রচলিত প্রটোকল মেনে চলে।
কিন্তু স্টিভ জব আপেলের জন্য সবকিছু নিজস্ব ধারায় করে গেছেন। আপেল তাদের প্ল্যাটফর্মে সব কিছুতে এখনো নিজেদের তৈরি কাস্টম মেনে চলে। তবু কাজ শুরু করলাম, দেখা যাক কতটুকু যাওয়া যায়!
অ্যাপের নাম দিলাম ‘কলকরো’প্রথমে স্ক্রিনের কাজ, যেমন ডায়াল প্যাড ও বিভিন্ন আইকন। যুক্তরাষ্ট্রে এসব গ্রাফিকসের কাজ খুব ব্যয়বহুল। ঠিক করলাম, বাইরের ফ্রিলান্সার দিয়ে করাব। ইন্টারনেটে ফ্রিলান্সারদের ভালো কিছু প্ল্যাটফর্ম আছে। আমার পছন্দ ‘আপওয়ার্ক’। কী কী লাগবে তার বিবরণ দিয়ে একটা ‘প্রয়োজন’ পোস্ট করলাম।
দুই দিনের মধ্যেই সারা দুনিয়ার গ্রাফিকস ডিজাইনার হাজির! দুজনকে বাছাই করে কয়েক দিন ধরে তাঁদের সঙ্গে আমার প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে কথা বললাম। দুজনের মধ্যে ইউক্রেনের ডিজাইনার ছিলেন ব্যয়বহুল।
তাঁকে বাদ দিয়ে ভারতীয় একজন ডিজাইনারকে নিয়োগ দিলাম। এখানে বলে রাখি, ফ্রিলান্সারের পারিশ্রমিক ও টাকাকড়ির লেনদেন সব আপওয়ার্ক ব্যবহার করে করা হয় এবং একটা অংশ তারা কমিশন হিসেবে কেটে নেয়।
গ্রাফিকস ডিজাইন এমন কাজ যে একবারে তৃপ্ত হওয়া যায় না, বারবার আরও ভালো করার চেষ্টা চলতে থাকে। একসময় ডিজাইন শেষ হলো। স্ক্রিন লে–আউট ডিজাইনও বেশ কষ্টসাধ্য। পরের ধাপগুলো ছিল রুটিন—আপেল এপিআই ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড সার্ভিসগুলো তৈরি করে ব্যবহারকারী ও ব্যাকগ্রাউন্ড সার্ভিসের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি।
অ্যাপস্টোরে ‘কলকরো’ অ্যাপ