একসময় সিনেমার পর্দা কাঁপত তার উপস্থিতিতে। না, তিনি নায়ক ছিলেন না, পোস্টারে নাম ছাপা হতো না। কিন্তু সিনেমাপ্রেমীরা তাকে চিনতেন এক ঝলকেই—‘আরে এ তো ফকিরা!’ 

ইসমাইল হোসেন ফকিরা। নামটা অনেকের কাছে হয়তো অপরিচিত। অথচ সাত শতাধিক সিনেমায় তার পদচিহ্ন। রাজ্জাক থেকে শাকিব খান—সব প্রজন্মের নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কখনো খলনায়কের সহযোগী, কখনো পুলিশ, কখনো ফাইটার। ক্ষুদ্র চরিত্র অথচ অপরিহার্য। 

আরো পড়ুন:

নায়িকা মুনমুনের সহকারী মাহি মারা গেছেন

প্রত্যেক নিহতের পরিবার পাবে ২৭ লাখ টাকা: বিজয়

সেই মানুষটি শুয়ে আছেন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ছোট্ট একটি কামরায়। তিন দফা স্ট্রোকে বাকরুদ্ধ, চোখের জলই তার একমাত্র ভাষা। যেন জীবনের শেষ নাট্যমঞ্চ, যেখানে কোনো সংলাপ নেই, কেবল নিঃশব্দ অভিনয়। 

সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সনি রহমান দেখতে গিয়েছিলেন ফকিরাকে। তিনি বলেন, “ফকিরা ভাই এক বছর ধরে কথা বলতে পারেন না। শুধু চোখে পানি ফেলেন। মাঝে মাঝে শিশুর মতো আচরণ করেন, তবে মানুষ চিনতে পারেন। মিশা ভাইকে ভিডিও কলে দেখে হাত নাড়িয়েছেন। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করেও উন্নতি হয়নি।” 

সিনেমার মানুষ ফকিরার এই অসহায় অবস্থায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এগিয়ে এসেছে। সনি রহমান বলেন, “ফকিরা ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্পী সমিতি। শনিবার সমিতির আয়োজিত সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।” 

স্মৃতির ভাঁজে এখনো ভেসে ওঠে সাদা মোটরসাইকেলে ফকিরার দাপট। এফডিসির ভেতরে বাইক ছুটিয়ে আসা তার ছিল রুটিন। শোনা যায়, সালমান শাহর সিনেমাতেও সেই মোটরসাইকেল জায়গা পেয়েছিল। আজ বাইক থেমে গেছে, ফকিরার জীবনও থেমে আছে প্রায়। 

আমরা দর্শকরা তাকে মনে রাখিনি। আমাদের মনে থাকে কেবল নায়ক-নায়িকাদের। অথচ ফকিরাদের মতো মানুষরাই সিনেমার কাঠামো দাঁড় করিয়েছিলেন। তারা গল্পকে রঙিন করেছিলেন, তারা পর্দার মশলা হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু আলো নিভতেই তারা পরিণত হয়েছেন অন্ধকারে—অলক্ষ্যে, অবহেলায়। 

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নাকি সহযোগিতা করবে। হয়তো কিছু টাকা আসবে, কিছুদিনের ওষুধ চলবে। তারপর? ফকিরার জীবনযুদ্ধ তো থেমে থাকবে না। সিনেমার সহশিল্পীদের এই অবহেলা আমাদের সমাজের নগ্ন প্রতিচ্ছবি। যতদিন আলোর ঝলকানি আছে, ততদিন প্রশংসা, তালি, সেলফি—পর্দার নায়কেরাও যাকে চিনতেন সেই ফকিরা। অথচ বাস্তবের মঞ্চে তিনি এখন একা। 

কথা বলতে পারেন না, কিন্তু মানুষ চিনতে পারেন। সম্প্রতি ভিডিও কলে মিশা সওদাগরকে দেখে হাত নাড়িয়েছেন। হয়তো এ হাত একসময় সিনেমার পর্দায় অস্ত্র ধরেছিল, মারপিট করেছে, নায়ককে বাঁচিয়েছে। আজ সেই হাত কেবল কাঁপে—চেনা মুখ দেখলে কৃতজ্ঞতায়, অভিমানেও হয়তো। 

ফকিরার গল্প কেবল একজন শিল্পীর নয়, সিনেমার আড়ালে লুকানো হাজারো নামহীন শিল্পীর গল্প। তারা গড়েছেন সিনেমা, কিন্তু সিনেমা তাদের জীবন গড়তে পারেনি। 

জেনেভা ক্যাম্পের ছোট ঘরে বসে ফকিরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন—সিনেমার আলো নিভলে শিল্পীরা আসলে কতটা অন্ধকারে ডুবে যান।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

দূষণ শুষে নেওয়া পদ্ম ফুল কেন হারিয়ে যাচ্ছে

পদ্ম জলাভূমিতে শোভা ছড়ায়, এর ফুল মধু বিকোয়, কিছু খাদ্যমূল্যও আছে। তবে বিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিদ ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুগুণে সমৃদ্ধ পদ্ম বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদের একটি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের তুলনায় পদ্ম অনেক বেশি সক্ষম।

শুধু কার্বন শোষণ নয়, সিসা, তামা, ফ্লোরাইড কিংবা নাইট্রেটের মতো ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতাও রাখে পদ্ম। পানির মান কতটা ভালো হতে পারে, তার নির্ণায়ক পদ্ম। বৈশ্বিক নানা গবেষণায় দেখা গেছে, যে জলাশয়ে পদ্মের উপস্থিতি থাকে, সেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ভালো থাকে। খাবার, ওষুধ ও কসমেটিক–সামগ্রী হিসেবে পদ্মের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পদ্মের বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

কার্বনসহ ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতা রাখে পদ্ম। পানির মান নির্ণায়ক পদ্ম। এর বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় প্রেমিকা বরুনার জন্য ‘বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে’ ১০৮টা নীলপদ্ম আনার কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি আমরাও পদ্ম আর পদ্মবিলের খোঁজে বেরিয়েছিলাম। মাঝশরতের সকাল পেরিয়ে দুপুর। টাঙ্গাইলের নানা স্থানে পদ্মবিলের খ্যাতি আছে। একসময় কালিহাতীর বিলগুলোয় ‘পদ্ম’ ফুটত। আমাদের উদ্দেশ্য, পদ্মশোভিত বিল দেখা। তপ্ত রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়ালাম পাইকড়া বিল, চারাণ বিল, নকীল বিল, কুমার বিল, সিংগুলি বিলসহ আরও কত বিল। কোথাও পদ্ম ফুলের দেখা পাওয়া গেল না। কচুরিপানায় ভরা বিলগুলোর একটির নাম সাতবিল। একটি ছোট নৌকার মাঝি মজনু শাহ বলেন, এ বিলে আগে পদ্ম থাকলেও এখন নেই।

ঘুরতে ঘুরতে জানতে পারলাম, কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউনিয়নের ধানগড়া গ্রামের নান্দাই বিলে পদ্মফুল থাকতে পারে। কচুরিপানা আর হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ ভেদ করে মাঝ বিলে গিয়ে দেখলাম, পদ্মপাতা ভাসছে। কিন্তু ফুল খুব কম। নৌকাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিলে মাছে ছাষ অয়। আগে তো ম্যালা জায়গায় পদ্ম হইত। এহন এহানেই টিক্যা আছে। মাছের চাষ করতে গিয়্যা পদ্ম উডাইয়া ফেলে।’

আন্ধাশুরা বিলে ফুটে আছে পদ্ম। একসময় এ বিলে অনেক পদ্ম ফুটত। এখন তা কমে গেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা কি ‘গ্ল্যামার’ হারাচ্ছে?
  • দূষণ শুষে নেওয়া পদ্ম ফুল কেন হারিয়ে যাচ্ছে