আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনাম‌লে মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।

তি‌নি ব‌লে‌ন, “মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামল জনগণ দেখেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু দেশ, দল ও নেতা পরিবর্তন করে শান্তি আসবে না। শান্তি তখনই আসবে, যখন আমরা নীতি-আদর্শের পরিবর্তন আনতে পারব এবং ইসলামের সুমহান আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।”

শনিবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘স্বাধীনতার পথরেখা–৪৭, ৭১, ২৪: প্রেক্ষিত আগামীর বাংলাদেশ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফয়জুল করীম বলেন, “১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা ভৌগোলিক মুক্তি পেলেও মানুষের মুক্তি ও কল্যাণ এখনো সুদূর পরাহত। দেশের স্বাধীনতা এখনও পূর্ণতা পায়নি। স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও চাঁদাবাজ, দখলবাজ, জুলুমবাজদের কারণে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন না হলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।”

ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমদ সাকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর আবদুল মোমেন, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ইফতেখার তারিক, ব্র্যাকের এইচ আর অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট প্রাক্টিশনার ফারহান বাশার।

বক্তব্য রাখেন বংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মুফতি জাহিদুজ্জামান, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, ইসলামী যুব সমাদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ খান, যুব মজলিসের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাব্বির আহমদ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আহমদ রফিক: বর্ণাঢ্য সৃষ্টিভুবনের অধিকারী

‘স্বদেশ এখন মানচিত্রে আঁকা/ সুশ্রী রঙিন পতাকায় লেখা,/ তবু খুঁজে ফিরি সবার স্বদেশ/ জানি না সে চাওয়া কবে হবে শেষ।’—বাঙাল স্বদেশ, আহমদ রফিক

ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। আগস্টের ১৭ তারিখ থেকে প্রথমে ল্যাবএইডে প্রায় তিন সপ্তাহ, পরে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ১৬ দিন এবং শেষে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ২ অক্টোবর তিনি প্রয়াত হন। বাঙালির গড়পড়তা বয়সের হিসাবে তিনি পরিপূর্ণ বয়সে জগতের মায়া কাটালেন।

ভাষা আন্দোলন সংঘটনে তাঁর যে অবদান, তাতে ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক আহমদ রফিক কিন্তু কেবল একজন সংগঠক নন, স্রষ্টাও। বিপুল এবং বিচিত্র তাঁর সৃষ্টিজগৎ। ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট যেকোনো পেশায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। বাল্যকাল থেকে বামপন্থী রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত আহমদ রফিক সে পথে যাননি। তিনি বেছে নিয়েছেন জটিল এক পথ—লেখালেখি।

এখানে বলে রাখা ভালো, আহমদ রফিক ভালো ফল নিয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক করলেও তিনি চিকিৎসক হতে পারেননি। ভাষা আন্দোলনে যুক্ততার ‘অপরাধে’ তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইন্টার্নশিপের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। ফলে পেশাদার চিকিৎসক তিনি হতে পারেননি।

তাই তাঁর সামনে দুটো পথ খোলা ছিল। এক. পূর্ণকালীন রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা। দুই. পূর্ণকালীন লেখালেখি করার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে শাণিত করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে স্বাক্ষর রাখা। কঠিন হলেও তিনি দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়েছিলেন। সেই তাগিদ থেকেই পঞ্চাশের দশকে রচনা করেন শিল্প সংস্কৃতি জীবন–এর মতো সাহিত্য-সমালোচকমূলক গ্রন্থ। সমকালের আর কোনো লেখকের প্রবন্ধের বই পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে অ্যাকটিভিস্ট আহমদ রফিক ভাষা আন্দোলনের সংগঠক পরিচয়ে নিজেকে আর সীমাবদ্ধ রাখেননি, নিজেকে নিয়োজিত করেছেন আরও বিস্তৃত পথে।

বিপুল এবং বিচিত্র তাঁর সৃষ্টিজগৎ। ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট যেকোনো পেশায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। বাল্যকাল থেকে বামপন্থী রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত আহমদ রফিক সে পথে যাননি। তিনি বেছে নিয়েছেন জটিল এক পথ—লেখালেখি।

ভাষা আন্দোলনের অনালোকিত ইতিহাস রচনা, তাত্ত্বিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ, শহরকেন্দ্রিকতার বাইরে ভাষা আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার কথা এবং ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস রচনার মতো গবেষণামূলক কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। এখানেও তিনি নিজের জ্ঞানচর্চা ও লেখালেখিকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। আমৃত্যু প্রগতিশীল চিন্তার এই মানুষের জ্ঞানপিপাসা ছিল বিপুল। তাই ভাষা আন্দোলনের একজন সৈনিক নয়, নিজেকে সংগ্রামী মনে করতেন তিনি।

সৈনিকের কাজ লড়াই শেষে ফলাফল যা–ই হোক, তা সমাপ্ত করা। একজন সংগ্রামীর কাজ জীবনভর চলতে থাকে। তাই ভাষাকে ঘিরে তাঁর যে সাহিত্যচর্চা, তাতে রয়ে গেছে সংগ্রামের তেজ, সমাজ বিনির্মাণের নিরন্তর সাধনা। সুতরাং ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাঁর নিজস্ব গবেষণার বাইরে তিনি বিচিত্র এক সৃষ্টিভুবন নির্মাণ করতে সমর্থ হয়েছেন। এমন অনেক কাজ তিনি করে গেছেন, যে কাজগুলো মূলত বিদ্যায়তনিক অধ্যাপক-গবেষকদের কাজ। এর বাইরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য নিয়ে রচনা করে গেছেন বিশের অধিক গ্রন্থ, যা দুই বাংলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

রবীন্দ্র-সাহিত্যের ভুবন যেমন বিচিত্র, তেমনি রবীন্দ্র-সাহিত্য নিয়ে তাঁর গবেষণার জগৎও বিচিত্র। যেমন ১৯৭৭ সালে আহমদ রফিক রচিত প্রথম রবীন্দ্রসাহিত্য-বিষয়ক গ্রন্থ আরেক কালান্তরে দিয়েই বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে তাদের রবীন্দ্র–সাহিত্যবিষয়ক বই। কুষ্টিয়া, শাহজাদপুরের পাশাপাশি নওগাঁর পতিসরেও ছিল রবীন্দ্র-কুঠিবাড়ি। তাঁর রবীন্দ্রভুবনে পতিসর গ্রন্থ প্রকাশের আগে বাংলাদেশের খুব কম মানুষের কাছেই তা পরিচিত ছিল। এভাবে পদ্মাপারের সেই গাল্পিক জাদুকর, ছোটগল্পের শিল্পরূপ: পদ্মাপর্বের রবীন্দ্রগল্প, রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তা ও বাংলাদেশ, রবীন্দ্রভাবনায় গ্রাম: কৃষি ও কৃষক, রবীন্দ্রসাহিত্যের নায়িকারা দ্রোহে ও সমর্পণে প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণয়ন।

তাই তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে বলতে রবীন্দ্রনাথের শরণ নিয়ে বলাই যায়, ‘যে-পথ দেখায়/ সে যে তার অন্তরের পথ,/ সে যে চিরস্বচ্ছ,/ সহজ বিশ্বাসে সে যে/ করে তারে চিরসমুজ্জ্বল।’

রবীন্দ্র-সাহিত্যচর্চার একক নৈপুণ্যের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে রবীন্দ্রচর্চারও পথিকৃৎ তিনি। আশির দশকে একঝাঁক তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী রবীন্দ্র–অনুরাগীকে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র। যার মধ্য দিয়ে দুই বাংলায় সেমিনার, গবেষণামূলক প্রবন্ধপাঠসহ নানা আয়োজন করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। পরে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দের কবিতা নিয়ে যেমন তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন, তেমনি বাংলাদেশের পঞ্চাশের দশকের বাংলা কবিতা থেকে শুরু করে শূন্য দশকের কবিদের কবিতা নিয়েও তাঁর প্রবন্ধ-আলোচনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি রচনা করেছেন বাংলাদেশের কবিতা: দশকভাঙা বিচার, কবিতার বিচিত্র ভাষ্য, কবিতা আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা প্রভৃতির মতো সমৃদ্ধ বই।

সমাজ-রাজনীতিবিষয়ক লেখালেখিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সংগত কারণে আশি–উত্তীর্ণ বয়সে রচনা করতে পারেন দেশ বিভাগ: ফিরে দেখা, কিংবা বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল কলেবরের বই। তাই কেবল ভাষা আন্দোলনের একনিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে নয়, ভাষামাধ্যমে সৃষ্টিশীল ও স্বকীয় ভুবন গড়ার কারণেও আহমদ রফিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক-পাঠকের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে বিশ্বাস করি। তাই তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে বলতে রবীন্দ্রনাথের শরণ নিয়ে বলাই যায়, ‘যে-পথ দেখায়/ সে যে তার অন্তরের পথ,/ সে যে চিরস্বচ্ছ,/ সহজ বিশ্বাসে সে যে/ করে তারে চিরসমুজ্জ্বল।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য ২৫৬ প্রার্থীর নাম ঘোষণা
  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিককে বিনম্র শ্রদ্ধা, মরদেহ দান
  • আহমদ রফিক: বর্ণাঢ্য সৃষ্টিভুবনের অধিকারী
  • আহমদ রফিকের প্রয়াণে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শোক
  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের মরদেহ আগামীকাল শহীদ মিনারে নেওয়া হবে
  • আহমদ রফিকের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক
  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক মারা গেছেন
  • ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই
  • গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা: ধর্ম উপদেষ্টা