বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির ‘ইগো সমস্যাই’ জাতীয় ঐক্যের অন্তরায়
Published: 8th, October 2025 GMT
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ‘সরকার যে তিন দলকে নিজেদের অংশ মনে করে এবং সঙ্গে করে নিউইয়র্ক সফরে নিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে তাদের ইগো সমস্যাই (অহংবোধ) এখন জাতীয় ঐক্যের অন্তরায়।’
জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভিন্ন অবস্থানে রাজনীতিতে একধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। আজ বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে এই তিন দলের প্রতি ইঙ্গিত করে মজিবুর রহমান এ কথা বলেন।
বৈঠকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের মানুষ চায় শান্তি ও ঐকমত্য। কিন্তু সীমান্তের ওপারের চাওয়া হলো বিভেদ, সংঘাত ও বিভক্তি। গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে ঐকমত্য হলেও গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হবে নাকি একই দিনে দুটি নির্বাচন হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্তি দেখা যাচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন বা সরকারের উচিত হবে দুই পক্ষের কথা শুনে গণভোট কবে হবে, এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া।
পরে ব্রিফিংয়ে দলের মজিবুর রহমান বলেন, জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? তা কি ‘সংবিধান আদেশ’, ‘অধ্যাদেশ’ নাকি ‘জুলাই সনদ আদেশ’ নামে জারি হবে, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অর্থাৎ এখানেও পদ্ধতি বা শব্দ নিয়ে বিতর্ক।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ বিতর্ক দেখে মনে হচ্ছে, পরোক্ষভাবে আমরা কেউ কেউ সীমান্তের ওপারের চাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। চূড়ান্তভাবে ঐকমত্য না হলে সরকার বা ঐকমত্য কমিশনের উচিত হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে যেকোনো একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া।’
জুলাই সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত প্রসঙ্গে এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, জুলাই সনদের প্রতিটি বিষয়ে যেহেতু সবগুলো রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি, গণভোটের রায়ের মাধ্যমে তা সুরাহা হওয়ার রাস্তা খুলে যাবে। কারণ, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের ইতিবাচক রায়। গণভোট পাস হলে যেসব দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তা জনরায়ের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যাত বলে বিবেচিত হবে। জনগণ জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অভিপ্রায় নিয়েই গণভোটে পাস করবে বলে জাতির প্রত্যাশা।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে এবি পার্টির পক্ষে অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ ঐকমত য গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই বলে দাবি করেছেন কমিশনের সাবেক সহসভাপতি এবং সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘আর্থিক দুর্নীতির প্রশ্নটা আপনি (প্রশ্নকর্তা) তুলেছেন, সেটি তথ্যগতভাবে ভুল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কোনো মিথ্যাচার করে থাকে, তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।’
বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন সম্মেলনের একটি পর্বে বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথাগুলো বলেন। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। সরকারের বরাদ্দকৃত সাত কোটি টাকার মধ্যে দুই কোটি টাকার কম খরচ করা হয়েছে এবং কীভাবে খরচ করা হয়েছে, সেটা চিফ অ্যাডভাইজারের (প্রধান উপদেষ্টা) অফিস থেকে এবং কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’
অভিযোগকে মিথ্যাচার উল্লেখ করে কমিশনের সাবেক এই সহসভাপতি বলেন, ‘আপনি যে মিথ্যাচারটা রিপিট (পুনরাবৃত্তি) করেছেন, সেটার জন্য আপনাকে আমি আরেকবার শুধু স্মরণ করিয়ে দেব, যেকোনো তথ্যের সর্বশেষ ভাষ্যটি লক্ষ করা খুব জরুরি। কেননা যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যাঁরা এই প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁরা কিন্তু এই হিসাবের পরে আর কোনো কথা বলেননি।’
এ ছাড়া আলী রীয়াজের কাছে জানতে চাওয়া হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের বিষয়ে। জবাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন, এমন পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি একে মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশটার খানিকটা হলো কথাবার্তা বলার, চর্চার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেকোনো রকম কাজ করলে তাদের সমালোচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পেরেছে। এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা করছি।’
জনগণের সমর্থনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে কাঠামোগত এবং সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব হবে—এমন আশাবাদ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘ফলে যদি কেউ মনে করেন যে সংস্কারের প্রশ্নটি ইতিমধ্যে মারা গেছে এবং যাঁরা অবিচ্যুয়ারি লিখতে চান, তাঁরা লিখতে পারেন। কারণ, অবিচ্যুয়ারি লেখার অভ্যাস তাঁদের আছে এবং অন্যরা অবিচ্যুয়ারি লিখতে পারেন।’
‘বাংলাদেশের একটা ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে’ এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যখন জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়, সেই অনুষ্ঠানে সুস্পষ্টভাবে বলেছিলাম যে একটি দলিল দিয়ে আসলে সমস্ত রকম সংস্কার সম্ভব নয়। এটি সূচনা মাত্র এবং জাতীয় সনদের যে শিরোনাম করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে—ভবিষ্যতের পথরেখা। আশা করি, সেটা আপনাদের সবারই নজরে থাকবে।’
এর আগে সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক দেশেই ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। কর্তৃত্ববাদীরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করলেও গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারায় বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, সরকারের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে অথবা রাষ্ট্রগুলো দমনমূলক হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, নজরদারির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সরকার সংকটকে টিকিয়ে রাখছে। আবার তার বিপরীতে প্রায়ই রাষ্ট্র নিজেও বহিরাগত শক্তির চাপে ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সমসাময়িক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতি।