অবশেষে এনআইডি পেলেন দুই হাতহীন জসিম
Published: 9th, October 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দার বাসিন্দা জসিম মাতুব্বরের (২৬) দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই এইচএসসি পাস করেছেন তিনি। কিন্তু, হাতের আঙ্গুলের ছাপ দিতে না পারায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাচ্ছিলেন না জসিম মাতুব্বর। অবশেষে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। বহুল প্রত্যাশিত এনআইডি পেয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে নগরকান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন লস্করদিয়া ইউনিয়নের কালীবাড়ি বাজারে জসিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তার কাছে এনআইডি হস্তান্তর করেছেন।
জসিম মাতুব্বর বলেছেন, “জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু এনআইডি পাইনি। আজ ইউএনও স্যার আমার দোকানে এসে কার্ডটি দিয়েছেন। এটা আমার জীবনে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। আমি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় এতদিন পড়াশোনা, ব্যবসা ও সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হতো জসিম মাতুব্বরকে। ইউএনও’র উদ্যোগে সে সমস্যার সমাধান হলো।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও দবির উদ্দিনের উদ্যোগেই জসিম মাতুব্বরকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার চোখের আইরিশের ছবি এবং পায়ের মাধ্যমে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। পরে দ্রুত কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়।
জন্ম থেকেই দুই হাতবিহীন জসিম অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে পা দিয়েই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
ঢাকা/তামিম/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে গরুচোর সন্দেহে পিটুনিতে একজন নিহত, তিনজন আহত
ফরিদপুরের নগরকান্দায় গরুচোর সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনিতে শাহীন মিয়া (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের ভোজেরডাঙ্গী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহীন মিয়া রামনগর ইউনিয়নের গজগাহ গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে। আহতরা হলেন একই ইউনিয়নের মাশাউজান গ্রামের পারভেজ মিয়া (২৪), সুমন শেখ (২২) এবং কুঞ্জনগর গ্রামের ইনামুল সরদার (২৬)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনায় মাশাউজান গ্রামের বাসিন্দা মাহিন্দ্রাচালক সবুজ মোল্লা (২৬) পালিয়ে গেছেন। আহত তিনজনকে পুলিশ পাহারায় নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোজেরডাঙ্গী গ্রাম মূলত নির্জন এলাকা এবং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গত তিন মাসে গ্রামের বাসিন্দা মিনা ফকিরের দুটি, সাহাজান মাতুব্বরের দুটি এবং লাল মিয়ার দুটি গরুসহ মোট ছয়টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। গ্রামবাসী পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন। গতকাল গভীর রাতে মাহিন্দ্রায় চড়ে পাঁচজন গ্রামে ঢোকেন। তাঁদের নিয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। গ্রামবাসী তাঁদের ধাওয়া দিয়ে চারজনকে আটক করেন। তবে একজন পালিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ সময় অন্তত দুই শতাধিক মানুষ জড়ো হয়। তারা ওই চার ব্যক্তিকে পিটুনি দেয়। আধা ঘণ্টা ধরে চলে পিটুনি। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা চারজনকে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে গ্রামীণ সড়কের ওপর ফেলে রাখে।
ভোজেরডাঙ্গী এলাকায় গ্রাম পুলিশের সদস্য বায়েজিদ মোল্লা বলেন, আজ ভোর পাঁচটার দিকে তিনি আহত শাহীনকে নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পরে নগরকান্দা থানা-পুলিশ লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ গিয়াসউদ্দিন বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে খবর পেয়ে তিনি গ্রাম পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠান এবং নিজেও যান। পাশাপাশি থানা-পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে নেয়।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘গত কয়েক মাসে এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। এ জন্য গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত ছিল। রাতে ওই ব্যক্তিদের এমন অবস্থায় দেখে তারা চোর ভেবে মারধর করেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চারজনকে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পাই। তখন তাদের আশপাশে কেউ ছিলেন না। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’