স্লিপ ট্যুরিজম: ভ্রমণে কেন জনপ্রিয় হচ্ছে নিদ্রাবিলাস
Published: 9th, October 2025 GMT
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ভ্রমণ মানেই ধরে নেওয়া হয় নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার, ঘোরাফেরা, খাওয়াদাওয়া, ছবি তোলা আর নতুন মুহূর্ত তৈরি করে স্মৃতির পাতায় রেখে দেওয়া। তবে কখনো কি ভেবে দেখেছেন, নিদ্রাবিলাসের খাতিরেও হতে পারে ভ্রমণ! আজকালের দ্রুতগতির জীবনে ঘুম যেন এক বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ, কাজের চাপ, ডিজিটাল স্ক্রিনের ওপর নির্ভরতা—সব মিলিয়ে আমাদের ঘুম যেন কোথাও উড়েই গেছে! ফলাফল, নিদ্রাহীনতা বা অনিদ্রা এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসমস্যা। এ কারণেই এখন অনেকেই ছুটিতে ঘুরতে যাচ্ছেন শুধু প্রকৃতি উপভোগ করতে নয়, বরং ভালোভাবে ঘুমাতে। এই নতুন ভ্রমণধারাকেই বলা হচ্ছে ‘স্লিপ ট্যুরিজম’।
ঘুমের জন্য ভ্রমণ
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ‘স্লিপ ট্যুরিজম’ এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বের নামকরা হোটেল ও রিসোর্টগুলোও এখন রাখছে নিদ্রাবিলাসের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, যেখানে অতিথিদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্রাম, প্রশান্তি ও গভীর ঘুমের নিশ্চয়তা। সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, জাপান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বিলাসবহুল রিসোর্টে চালু হয়েছে এমন প্যাকেজ, যেখানে ঘুমই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ।
এসব রিসোর্টে ঘুমের মান বাড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশেষ প্রযুক্তি ও পরিবেশ, যেমন সাউন্ডলেস রুম, ঘুম উপযোগী আলো, অ্যারোমাথেরাপি, মেডিটেশন, সাউন্ড থেরাপি এমনকি ঘুম বিশেষজ্ঞের পরামর্শও। অনেক রিসোর্ট আবার অতিথির ঘুম বিশ্লেষণের জন্য ‘স্লিপ ট্র্যাকার’ সরবরাহ করে, যা ঘুমের মান, হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি পরিমাপ করে।
কেন জনপ্রিয় হচ্ছে স্লিপ ট্যুরিজম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া গবেষণা বলছে, শুধু যুক্তরাজ্যেই ৭৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনিদ্রায় ভুগছেন, ৫ থকে ৭ শতাংশ মানুষ সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন ঘুমজনিত অবসাদ ও ক্লান্তি নিয়ে। আধুনিক জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ, শহরের কোলাহল, অতিরিক্ত কাজ ও মুঠোফোন–নির্ভরতা মানুষকে গভীর ঘুম থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাই এখন ছুটি মানেই অনেকের কাছে বিশ্রাম ও রিস্টার্টের সুযোগ। স্লিপ ট্যুরিজম সেই চাহিদারই প্রতিফলন। এ ছাড়া কোভিড-পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মানুষের সচেতনতা বেড়েছে বহুগুণে। ফলে ‘ওয়েলনেস ট্রাভেল’ বা সুস্থতাকেন্দ্রিক ভ্রমণের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। অনেকেই এখন এমন জায়গা বেছে নিচ্ছেন, যেখানে শরীর ও মন দুটোই পাবে প্রশান্তি।
স্লিপ ট্যুরিজম কীভাবে কাজ করে
স্লিপ ট্যুরিজম প্যাকেজগুলো সাধারণত কয়েকটি ধাপে সাজানো হয়। প্রথমে ভ্রমণকারীর ঘুমের অভ্যাস ও সমস্যার মূল্যায়ন করা হয়। এরপর নির্ধারিত হয় তার জন্য উপযুক্ত ঘুমের পরিবেশ—যেমন কক্ষের তাপমাত্রা, আলো-আঁধারির ভারসাম্য, আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ, ঘুমের আগে হালকা যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন সেশন। কিছু রিসোর্ট প্রাকৃতিক আবহে ঘুমের অভিজ্ঞতা দিতে পাহাড়, জঙ্গল বা সাগরপাড়ে তৈরি করেছে নিস্তব্ধ কটেজ ও কেবিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতের ভ্রমণধারায় শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাই হবে মূল অগ্রাধিকার। তাই স্লিপ ট্যুরিজম শুধু একটি ট্রেন্ড নয়, বরং আধুনিক জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন হয়ে উঠছে। মানুষ এখন ধীরে ধীরে অনুধাবন করছে, ভালো ঘুমই হলো এই সময়ের সবচেয়ে বড় বিলাসিতা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনপ র য় র জন য ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
স্লিপ ট্যুরিজম: ভ্রমণে কেন জনপ্রিয় হচ্ছে নিদ্রাবিলাস
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ভ্রমণ মানেই ধরে নেওয়া হয় নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার, ঘোরাফেরা, খাওয়াদাওয়া, ছবি তোলা আর নতুন মুহূর্ত তৈরি করে স্মৃতির পাতায় রেখে দেওয়া। তবে কখনো কি ভেবে দেখেছেন, নিদ্রাবিলাসের খাতিরেও হতে পারে ভ্রমণ! আজকালের দ্রুতগতির জীবনে ঘুম যেন এক বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ, কাজের চাপ, ডিজিটাল স্ক্রিনের ওপর নির্ভরতা—সব মিলিয়ে আমাদের ঘুম যেন কোথাও উড়েই গেছে! ফলাফল, নিদ্রাহীনতা বা অনিদ্রা এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসমস্যা। এ কারণেই এখন অনেকেই ছুটিতে ঘুরতে যাচ্ছেন শুধু প্রকৃতি উপভোগ করতে নয়, বরং ভালোভাবে ঘুমাতে। এই নতুন ভ্রমণধারাকেই বলা হচ্ছে ‘স্লিপ ট্যুরিজম’।
ঘুমের জন্য ভ্রমণ
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ‘স্লিপ ট্যুরিজম’ এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বের নামকরা হোটেল ও রিসোর্টগুলোও এখন রাখছে নিদ্রাবিলাসের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, যেখানে অতিথিদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্রাম, প্রশান্তি ও গভীর ঘুমের নিশ্চয়তা। সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, জাপান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বিলাসবহুল রিসোর্টে চালু হয়েছে এমন প্যাকেজ, যেখানে ঘুমই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ।
এসব রিসোর্টে ঘুমের মান বাড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশেষ প্রযুক্তি ও পরিবেশ, যেমন সাউন্ডলেস রুম, ঘুম উপযোগী আলো, অ্যারোমাথেরাপি, মেডিটেশন, সাউন্ড থেরাপি এমনকি ঘুম বিশেষজ্ঞের পরামর্শও। অনেক রিসোর্ট আবার অতিথির ঘুম বিশ্লেষণের জন্য ‘স্লিপ ট্র্যাকার’ সরবরাহ করে, যা ঘুমের মান, হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি পরিমাপ করে।
কেন জনপ্রিয় হচ্ছে স্লিপ ট্যুরিজম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া গবেষণা বলছে, শুধু যুক্তরাজ্যেই ৭৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনিদ্রায় ভুগছেন, ৫ থকে ৭ শতাংশ মানুষ সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন ঘুমজনিত অবসাদ ও ক্লান্তি নিয়ে। আধুনিক জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ, শহরের কোলাহল, অতিরিক্ত কাজ ও মুঠোফোন–নির্ভরতা মানুষকে গভীর ঘুম থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাই এখন ছুটি মানেই অনেকের কাছে বিশ্রাম ও রিস্টার্টের সুযোগ। স্লিপ ট্যুরিজম সেই চাহিদারই প্রতিফলন। এ ছাড়া কোভিড-পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মানুষের সচেতনতা বেড়েছে বহুগুণে। ফলে ‘ওয়েলনেস ট্রাভেল’ বা সুস্থতাকেন্দ্রিক ভ্রমণের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। অনেকেই এখন এমন জায়গা বেছে নিচ্ছেন, যেখানে শরীর ও মন দুটোই পাবে প্রশান্তি।
স্লিপ ট্যুরিজম কীভাবে কাজ করে
স্লিপ ট্যুরিজম প্যাকেজগুলো সাধারণত কয়েকটি ধাপে সাজানো হয়। প্রথমে ভ্রমণকারীর ঘুমের অভ্যাস ও সমস্যার মূল্যায়ন করা হয়। এরপর নির্ধারিত হয় তার জন্য উপযুক্ত ঘুমের পরিবেশ—যেমন কক্ষের তাপমাত্রা, আলো-আঁধারির ভারসাম্য, আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ, ঘুমের আগে হালকা যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন সেশন। কিছু রিসোর্ট প্রাকৃতিক আবহে ঘুমের অভিজ্ঞতা দিতে পাহাড়, জঙ্গল বা সাগরপাড়ে তৈরি করেছে নিস্তব্ধ কটেজ ও কেবিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতের ভ্রমণধারায় শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাই হবে মূল অগ্রাধিকার। তাই স্লিপ ট্যুরিজম শুধু একটি ট্রেন্ড নয়, বরং আধুনিক জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন হয়ে উঠছে। মানুষ এখন ধীরে ধীরে অনুধাবন করছে, ভালো ঘুমই হলো এই সময়ের সবচেয়ে বড় বিলাসিতা।