‘এটি আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত’
Published: 9th, October 2025 GMT
‘জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু এনআইডি পাইনি। আজ ইউএনও স্যার আমার দোকানে এসে নিজ হাতে কার্ডটি দিয়েছেন। এটি আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। আমি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আজ নিজের এনআইডি পাওয়ায় মনে হচ্ছে জীবনের বড় একটা অর্জন হলো।’
নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার পর আবেগাপ্লুত হয়ে এসব কথা বলেন ফরিদপুরের নগরকান্দার জসিম মাতুব্বর (২৬)।
উপজেলার কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা জসিম মাতুব্বর। জন্ম থেকেই তাঁর দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই উত্তীর্ণ হয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষায়। পড়াশোনার পাশাপাশি হাটে সবজি ও ফল বিক্রি করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালান অদম্য এই তরুণ। তাঁর জীবনের এই কঠিন লড়াইয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এনআইডি না থাকা। আঙুলের ছাপ দিতে না পারায় তিন বছর ধরে আবেদন করেও কার্ড পাননি। অবশেষে তাঁর এনআইডি পাওয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের কালীবাড়ি বাজারে জসিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাঁকে এনআইডি দেন।
জসিম মাতুব্বর বলেন, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি নাই ইউএনও স্যার আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের দোকানে আসবেন। যেখানে কার্ড আনতে আমার যাওয়ার কথা ছিল ইউএনও অফিসে, সেখানে স্যার এসেছেন আমার এই ছোট্ট দোকানে।’
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও দবির উদ্দিনের উদ্যোগে জসিমকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চোখের আইরিশের ছবি ও পায়ের মাধ্যমে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। পরে দ্রুত কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। গত ৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে একটি বার্তা দিয়ে জসিমকে জানানো হয়, ‘অভিনন্দন জসিম মাতুব্বর, এটি আপনার এনআইডি নম্বর।’ পরে ইউএনও জসিমের কার্ডটি ডাউনলোড করে সেটি আজ জসিমকে দেন।
জসিমের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ করতে পেরে খুশি ইউএনও দবির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমেই জসিমের সমস্যার কথাটি আমি প্রথম জানতে পারি। তাঁর মতো একজন মেধাবী তরুণ শুধু এনআইডি না থাকার কারণে যেন পিছিয়ে না পড়েন, সেটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছি। এ কাজটি আমি করতে পেরেছি। এটি সারা জীবন আমার জীবনে আনন্দের ঘটনা হয়ে থাকবে।’
কার্ড বিতরণের সময় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাওন সাগর, নগরকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত আলী শরীফসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ বন জ বন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
টাইটানিক যাত্রীর সোনার ঘড়ি বিক্রি হলো সাড়ে ২৮ কোটি টাকায়
শত বছরের বেশি আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের এক মৃত যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া একটি পকেটঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যে এক নিলামে ১৭ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডে এটি বিক্রি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টাকা (১ পাউন্ড সমান ১৫৯.৯৫ টাকা হিসাবে)।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কগামী টইটানিক জাহাজটি আটলান্টিক মহাসাগরে বিশাল বরফখণ্ডে (হিমশৈল) ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। এতে মারা যান দেড় হাজারের বেশি যাত্রী। তাঁদেরই একজন মার্কিন ধনকুবের ইসিডর স্ট্রাউস। তিনি ছিলেন ওই জাহাজের অন্যতম ধনী যাত্রী। ওই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আইডাও মারা গেছেন।
জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ইসিডর স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।
স্ট্রাউস দম্পতির পরিবারের কাছে থাকা এ ঘড়ি গতকাল যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারে হেনরি অ্যালরিজ অ্যান্ড সন অকশনার্স নামের প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নিলামে বিক্রি হয়েছে।
জার্মান বংশোদ্ভূত ইসিডর স্ট্রাউস ছিলেন একজন মার্কিন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেসি’স ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মালিকদের একজন ছিলেন।
ধারণা করা হয়, টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময় স্ট্রাউসের স্ত্রী আইডা স্বামীকে রেখে একা লাইফবোটে উঠতে রাজি হননি। বলেছিলেন, তিনি স্বামীর সঙ্গেই মরতে চান। পরে আইডা স্ট্রাউসের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুননিলামে ৩ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে টাইটানিকের যাত্রীর চিঠি২৭ এপ্রিল ২০২৫টাইটানিকের আনুষ্ঠানিক কাগজে লেখা এবং জাহাজে থাকা অবস্থায় পাঠানো আইডা স্ট্রাউসের একটি চিঠিও গতকালের নিলামে ১ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া টাইটানিকের যাত্রীদের একটি তালিকা ১ লাখ ৪ হাজার পাউন্ডে এবং উদ্ধারকৃত যাত্রীদের পক্ষ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্রুদের দেওয়া একটি সোনার পদক ৮৬ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
টাইটানিক–সংক্রান্ত স্মারকসামগ্রী নিয়ে আয়োজিত এ নিলামে মোট আয় হয়েছে ৩০ লাখ পাউন্ড।
স্ট্রাউসের পকেটঘড়িটি রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে এসে থেমে গিয়েছিল। মূলত ওই সময়েই টাইটানিক জাহাজটি পানিতে তলিয়ে যায়।
ধারণা করা হয়, ১৮৮৮ সালে আইডা তাঁর স্বামীর ৪৩তম জন্মদিনে ঘড়িটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ঘড়িটির ওপর স্ট্রাউসের আদ্যক্ষর খোদাই করা আছে।
উদ্ধারের পর ঘড়িটি স্ট্রাউসের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘড়িটি সংরক্ষিত থাকে। একপর্যায়ে ইসিডরের প্রপৌত্র কেনেথ হলিস্টার ঘড়িটি মেরামত করান। এটি আবার সচল হয়।
নিলামকারী অ্যান্ড্রু অ্যালড্রিজ মনে করেন, ঘড়িটি রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, টাইটানিকের কাহিনির প্রতি মানুষের এখনো আগ্রহ আছে। তিনি আরও বলেন, ‘নারী, পুরুষ বা শিশু—প্রত্যেক যাত্রীরই একটি গল্প ছিল। আর ১১৩ বছর পরও সে গল্পগুলো স্মারকসামগ্রীর মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।’
টাইটানিক থেকে ৭০০-এর বেশি যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্যাপ্টেনকে উপহার হিসেবে দেওয়া একটি সোনার পকেটঘড়ি গত বছর ১৫ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছিল। দামের দিক থেকে এটি সে সময় রেকর্ড করেছিল।
আরও পড়ুনটাইটানিকের যাত্রী মার্কিন ধনকুবেরের সেই সোনার ঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি২৯ এপ্রিল ২০২৪