দৈহিক স্থূলতা বা ওবেসিটি আজকের যুগে এক বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসমস্যা। এটি কেবল অতিরিক্ত ওজনের বিষয় নয়; বরং শরীর, মন ও সমাজ—সবকিছুর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে স্থূলতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে ঘনিষ্ঠ দ্বিমুখী সম্পর্ক রয়েছে। একদিকে মানসিক সমস্যা স্থূলতার কারণ হতে পারে, অন্যদিকে স্থূলতা নিজেই বিভিন্ন মনোরোগ ও মানসিক অস্বস্তির জন্ম দেয়।

বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন

স্থূল ব্যক্তিদের মধ্যে বিষণ্নতা সবচেয়ে সাধারণ মানসিক সমস্যা। অতিরিক্ত ওজনের কারণে আত্মসম্মানবোধ কমে যায়, সামাজিকভাবে উপহাস বা বৈষম্যের শিকার হতে হয়। অনেকেই নিজের শরীর নিয়ে লজ্জিত বোধ করেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে চান না। ফলে একাকিত্ব ও মনমরা ভাব তৈরি হয়। এ অবস্থায় তাঁরা আরও বেশি করে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা অতিরিক্ত ভোজনের দিকে ঝুঁকে পড়েন, যা ওজন আরও বাড়িয়ে এক ‘দুষ্টচক্র’ তৈরি করে।

উদ্বেগ ও সামাজিক চাপ

স্থূল ব্যক্তিরা প্রায়ই সমাজের সৌন্দর্যের মানদণ্ডে নিজেদের অযোগ্য মনে করেন। কাজের জায়গা, স্কুল বা পারিবারিক পরিসরে উপহাস বা নেতিবাচক মন্তব্য তাঁদের সামাজিক উদ্বেগ বাড়ায়। অনেকেই জনসমক্ষে যেতে বা কথা বলতে ভয় পান, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বৃদ্ধি করে, যা আবার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

খাদ্যাভ্যাসজনিত মানসিক ব্যাধি

স্থূলতার সঙ্গে বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার প্রায়ই সম্পর্কিত, যেখানে মানসিক চাপ বা বিষণ্নতা কাটাতে রোগী একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলে। পরে অপরাধবোধ দেখা দেয়। কিছু রোগীর মধ্যে ইমোশনাল ইটিং প্রবণতাও দেখা দেয়, যেখানে আবেগগত অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে খাওয়াকে আশ্রয় করা হয়।

আত্মসম্মান ও দৈহিক সৌন্দর্য-ভাবনার সমস্যা

স্থূলতা শরীরের চেহারা ও আকারে পরিবর্তন আনে, যা অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়। বিশেষত তরুণী ও কিশোরীদের মধ্যে দেহ-ভাবনা বিকৃতি এবং আত্মসম্মানহীনতা দেখা যায়। এর ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়।

স্থূলতা শুধু শারীরিক সমস্যা নয়। এর সঙ্গে আচরণগত, মানসিক— সব ধরনের সমস্যা জড়িত।

নিদ্রার সমস্যা ও মানসিক ক্লান্তি

স্থূলতার সঙ্গে স্লিপ অ্যাপনিয়া ও নিদ্রাহীনতা প্রায়ই যুক্ত থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও মুডের পরিবর্তন ঘটে। সারা দিন ক্লান্তি, বিরক্তি ও মনোযোগহীনতা মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে।

চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা

স্থূলতা চিকিৎসায় শুধু ওজন কমানোই লক্ষ্য নয়—বরং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ ও কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি কার্যকর পদ্ধতি।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, মাইন্ডফুলনেস ট্রেনিং ও গ্রুপ থেরাপি আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।

রিবার ও সমাজের সহায়ক মনোভাব রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা করে।

মনে রাখতে হবে যে স্থূলতা শুধু শারীরিক সমস্যা নয়। এর সঙ্গে আচরণগত, মানসিক সব ধরনের সমস্যা জড়িত। তা ছাড়া মানসিক সুস্থতা ও শক্তি ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই প্রতিটি স্থূলতার চিকিৎসায় শারীরিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মানসিক মূল্যায়ন ও সহায়তা জরুরি।

ডা.

শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক সমস য র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

কপ-৩০ সম্মেলনের দাবি পৌঁছাতে খুলনায় ফ্ল্যাশমব

জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় সমস্যা ও তরুণদের দাবি ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য কপ-৩০ সম্মেলনের বৈশ্বিক মঞ্চে পৌঁছে দিতে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী এক ফ্ল্যাশমব।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) নগরের গল্লামারী লিনিয়ার পার্কের সামনে এই আয়োজন করে জাগো ফাউন্ডেশন ও টুওয়ার্ডস সাস্টেইনেবিলিটি ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানটি জাগো ফাউন্ডেশনের দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন ‘ভয়েস অব ক্লাইমেট: আওয়ার ক্লাইমেট, আওয়ার ফিউচার’ এর অংশ।

আরো পড়ুন:

বাবার বিরুদ্ধে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের অভিযোগ দুই কন্যার

‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তরের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে’

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আচরণগত পরিবর্তনের আহ্বান ও তরুণদের কণ্ঠস্বরকে বৈশ্বিক আলোচনায় যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ফ্ল্যাশমবটি অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় স্থানীয় তরুণরা অভিনব পরিবেশনা, বার্তা ও পোস্টারের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, স্থানীয় সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান তুলে ধরেন। আয়োজনটি ব্যাপক সাড়া ফেলে।

টুওয়ার্ডস সাস্টেইনেবিলিটি ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি কারিনা সিদ্দিকা বলেন, “বাংলাদেশের উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কণ্ঠস্বর প্রায়ই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছায় না। এই ফ্ল্যাশমবের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় বাস্তবতাকে জীবন্তভাবে তুলে ধরা, যাতে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকরা তরুণদের বার্তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান নাসিম ও নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী পলি সরকার বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সচেতনতা দেশের পরিবেশ আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করবে। এ ধরনের উদ্যোগ পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে।

দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি যুব নেতৃত্বাধীন সংগঠনের সহযোগিতায় ‘ভয়েসেস অব ক্লাইমেট’ ক্যাম্পেইনটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফ্ল্যাশমব ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন ও আচরণগত পরিবর্তন বিষয়ে ১১২টির বেশি শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে।

তরুণদের সম্মিলিত দাবিগুলো সংকলন করে একটি ‘ক্লাইমেট ক্যাপসুল’ তৈরি করা হবে, যা কপ-৩০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গিলডান এই ক্যাম্পেইনে সহযোগিতা করছে এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ নলেজ পার্টনার হিসেবে যুক্ত রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তরুণদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনে নতুন গতি আনবে।

ঢাকা/হাসিব/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কপ-৩০ সম্মেলনের দাবি পৌঁছাতে খুলনায় ফ্ল্যাশমব