কন্যাসন্তান ও বোন প্রতিপালনের ফজিলত
Published: 10th, October 2025 GMT
সন্তান আল্লাহর দান। পুত্র ও কন্যা সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের অন্তর্গত। আল্লাহ তাআলা কাউকে কন্যাসন্তান দান করেন, আবার কাউকে পুত্রসন্তান; কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তা–ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন অথবা তাদের উভয়কেই দান করেন—পুত্র ও কন্যা। আর যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)
কন্যাসন্তান মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.
নবীজি (সা.) বলেন, ‘ওই নারী বরকতময়ী ও সৌভাগ্যবতী, যঁার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়।’ কেননা কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড: ১৬, পৃষ্ঠা: ৬১১)
‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে এবং সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের কারণে নিজেকে অসম্মানিত মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ট হওয়া জাহেলি যুগের কাফির-মুশরিকদের মনোভাব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে প্রচণ্ড দুঃখভারাক্রান্ত হয়। সে এই সুসংবাদ পাওয়ার লজ্জায় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায় এবং চিন্তা করে—হীনতা সত্ত্বেও কি সে সন্তানকে রেখে দেবে, নাকি মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে? সতর্ক হও! তারা যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা কতই না নিকৃষ্ট!’ সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)
প্রিয় নবীজি (স.) কন্যাসন্তানের প্রতি সম্মান, স্নেহ ও মহব্বতের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে এবং সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের কারণে নিজেকে অসম্মানিত মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি: ১৯১২) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দুটি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে ও সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১১৪০৪; আদাবুল মুফরাদ, বুখারি: ৭৯) নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে লালন-পালন করেছে এবং বিয়ের সময় হলে তাদের সুপাত্রে বিয়ে দিয়েছে, সে এবং আমি জান্নাতে এভাবে একসঙ্গে থাকব।’ এরপর তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন। (তিরমিজি: ১৯১৪; মুসলিম: ২৬৩১; মুসনাদে আহমাদ: ১২০৮৯)
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধারণ করে, তাদের ওপর ব্যয় করে, তাদের বিয়ে দেয় অথবা মৃত্যু পর্যন্ত দেখাশোনা করে, তাহলে সেই কন্যাসন্তানেরা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি দুজন হয়?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘দুজন হলেও।’ লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি একজন হয়?’ তিনি বললেন, ‘একজন হলেও।’ (বায়হাকি, শু’আবুল ইমান: ৮৩১১ ও ৮৩১৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পন্ন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড়ালস্বরূপ হবে।’ (তিরমিজি: ১৯১৩) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘যাকে কন্যাসন্তান দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা হয়, আর সে তাদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে, তবে তা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী হবে।’ (মুসলিম: ৬৮৬২; মুসনাদে আহমাদ: ২৪৬১৬)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল প ত রসন ত ন ম সন দ বল ছ ন আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
অক্সিজেনের বহুরূপী আচরণ
পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের জন্য অক্সিজেনের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন না থাকলে পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে যাবে। তবে অক্সিজেনের অণু একই সঙ্গে আমাদের জীবনধারণের জন্য বন্ধু ও কোষের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে কাজ করে। নতুন এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সেই প্রক্রিয়া উন্মোচন করেছেন। অক্সিজেন নানাভাবে তার বন্ধুত্বপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক রূপের মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়।
বিজ্ঞানীরা একই অক্সিজেন অণুর দুটি ভিন্ন স্পিন অবস্থাকে আলাদা করার জন্য সিঙ্গলেট অক্সিজেন ও ট্রিপলেট অক্সিজেনের কথা জানিয়েছেন। ট্রিপলেট অক্সিজেন শান্ত ও স্থিতিশীল রূপ, যা আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি। আর সিঙ্গলেট অক্সিজেন অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল ও ক্ষণস্থায়ী রূপ। এটি কোষ ও ব্যাটারির উপাদানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। এই সিঙ্গলেট অক্সিজেনের পূর্বসূরি সুপার অক্সাইড। এটি একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রনসহ অক্সিজেন। যখন দুটি সুপার অক্সাইড একত্র হয়, তখন ডিসপ্রোপোরশনেশন প্রক্রিয়ায় একটি পার অক্সাইডে ও অন্যটি অক্সিজেন গ্যাসে পরিণত হয়। অস্ট্রিয়ার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা কোন পরিস্থিতিতে ট্রিপলেট অক্সিজেন প্রভাবশালী থাকবে ও কখন ক্ষতিকারক সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরি হয়, তা বের করেছেন। এ পরিবর্তনের মূল নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান বিক্রিয়ার চালিকা শক্তি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, যখন চালিকা শক্তি বাড়তে থাকে, তখন ট্রিপলেট অক্সিজেন তৈরির গতি প্রথমে বাড়ে, তারপর অপ্রত্যাশিতভাবে কমতে শুরু করে। এ গতি কমে যাওয়ার ফলেই সিঙ্গলেট অক্সিজেন দ্রুত তৈরি হয়। উচ্চ চালিকা শক্তিতে বিক্রিয়ার এই বিপরীতধর্মী মন্থরতা মার্কাস তত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যায়। এই তত্ত্ব অনুসারে, বিক্রিয়ায় ধাক্কা খুব বেশি বেড়ে গেলে বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হওয়ার স্বাভাবিক অঞ্চলের পরে একটি ওলটানো অঞ্চলে প্রবেশ করে, যেখানে গতি কম হয়। এ গবেষণা প্রমাণ করে চালিকা শক্তি কমিয়ে বা মাধ্যমের পুনঃসংগঠন শক্তি বাড়িয়ে তুললে নিরাপদ ট্রিপলেট অক্সিজেনের পথ তৈরি করা যায়।
আরও পড়ুনঅক্সিজেন কমে যাবে পৃথিবীতে২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রাণী কোষের পিএইচ অক্সিজেনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী স্টেফ্যান এ ফ্রুনবার্গার বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না খারাপ সিঙ্গলেট অক্সিজেন কীভাবে তৈরি হয়। কোষের অভ্যন্তরে পিএইচ বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন হয়। লাইসোসোম অ্যাসিডিক আর মাইটোকন্ড্রিয়া সামান্য ক্ষারীয় হয়। পিএইচয়ের এ পরিবর্তন সুপার অক্সাইড বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী চালিকা শক্তিকে স্থানান্তর করে মাইটোকন্ড্রিয়াতে উচ্চ পিএইচ চালিকা শক্তিকে কম রাখে। সেখানে সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরি হতে বাধা পায়। বিপরীতে অ্যাসিডিক অঙ্গাণুতে সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। পিএইচয়ের ছোট পরিবর্তন বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুনপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি কেন০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে সিঙ্গলেট অক্সিজেনের প্রভাব দেখা যায়। অক্সিজেন ব্যাটারি চার্জ ও ডিসচার্জের সময় সুপার অক্সাইড ও পার অক্সাইড তৈরি করে। বিভিন্ন ডিভাইসে সিঙ্গলেট অক্সিজেনকে প্যারাসাইটিক বিক্রিয়ার প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ধরনের অক্সিজেন ইলেকট্রোলাইট ক্ষয় করে। কিছু ইলেকট্রোলাইট ও লবণের ব্যবহার সিঙ্গলেট অক্সিজেন নির্গমনের সম্ভাবনা বাড়াতে বা কমাতে পারে। অক্সিজেনের বহুরূপী এ আচরণের নিয়ে এ গবেষণা ফলাফল নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম