সন্তান আল্লাহর দান। পুত্র ও কন্যা সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের অন্তর্গত। আল্লাহ তাআলা কাউকে কন্যাসন্তান দান করেন, আবার কাউকে পুত্রসন্তান; কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তা–ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন অথবা তাদের উভয়কেই দান করেন—পুত্র ও কন্যা। আর যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)

কন্যাসন্তান মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলেন, ‘যার গৃহে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করল, অতঃপর সে তাকে কষ্ট দেয়নি, তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়নি এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ওই কন্যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২২৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘ওই নারী বরকতময়ী ও সৌভাগ্যবতী, যঁার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়।’ কেননা কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড: ১৬, পৃষ্ঠা: ৬১১)

‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে এবং সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের কারণে নিজেকে অসম্মানিত মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’

কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ট হওয়া জাহেলি যুগের কাফির-মুশরিকদের মনোভাব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে প্রচণ্ড দুঃখভারাক্রান্ত হয়। সে এই সুসংবাদ পাওয়ার লজ্জায় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায় এবং চিন্তা করে—হীনতা সত্ত্বেও কি সে সন্তানকে রেখে দেবে, নাকি মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে? সতর্ক হও! তারা যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা কতই না নিকৃষ্ট!’ সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)

প্রিয় নবীজি (স.) কন্যাসন্তানের প্রতি সম্মান, স্নেহ ও মহব্বতের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে এবং সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের কারণে নিজেকে অসম্মানিত মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি: ১৯১২) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দুটি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে ও সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১১৪০৪; আদাবুল মুফরাদ, বুখারি: ৭৯) নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে লালন-পালন করেছে এবং বিয়ের সময় হলে তাদের সুপাত্রে বিয়ে দিয়েছে, সে এবং আমি জান্নাতে এভাবে একসঙ্গে থাকব।’ এরপর তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন। (তিরমিজি: ১৯১৪; মুসলিম: ২৬৩১; মুসনাদে আহমাদ: ১২০৮৯)

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধারণ করে, তাদের ওপর ব্যয় করে, তাদের বিয়ে দেয় অথবা মৃত্যু পর্যন্ত দেখাশোনা করে, তাহলে সেই কন্যাসন্তানেরা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি দুজন হয়?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘দুজন হলেও।’ লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি একজন হয়?’ তিনি বললেন, ‘একজন হলেও।’ (বায়হাকি, শু’আবুল ইমান: ৮৩১১ ও ৮৩১৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পন্ন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড়ালস্বরূপ হবে।’ (তিরমিজি: ১৯১৩) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘যাকে কন্যাসন্তান দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা হয়, আর সে তাদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে, তবে তা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী হবে।’ (মুসলিম: ৬৮৬২; মুসনাদে আহমাদ: ২৪৬১৬)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল প ত রসন ত ন ম সন দ বল ছ ন আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় প্রযোজকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মুখ খুললেন তিশা

কলকাতার সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে অগ্রিম পারিশ্রমিক নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে অভিনেত্রী তানজিন তিশার বিরুদ্ধে। শরীফ খান নামে এক প্রযোজক এমন গুরুতর অভিযোগ করেছেন। 

এম. এন. রাজ পরিচালিত ‘ভালোবাসার মরশুম’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন তানজিন তিশা। কিন্তু এই অভিনেত্রীর অসহযোগিতা ও বারবার মিথ্যা বলার কারণে বাধ্য হয়ে তাকে সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়ার পর তিশা অগ্রিম নেওয়া পারিশ্রমিকের অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ প্রযোজকের। তবে এসব অভিযোগকে ‘ফালতু’ বলে মন্তব্য করেছেন তিশা।  

আরো পড়ুন:

তিশার বিরুদ্ধে ভারতীয় প্রযোজকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

‘সোলজার’-এ শাকিবের বিপরীতে তানজিন তিশার ফার্স্টলুক প্রকাশ

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তানজিন তিশা বলেন, “এই অভিযোগ ফালতু। আমাকে চুক্তির সময় এক তৃতীয়াংশ পেমেন্ট দেয়া হয়েছিল। এই সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায় দেড়মাস কোনো কাজ করিনি। চুক্তিতে উল্লেখ আছে, শুটিং ক্যানসেল হলে এই অর্থ ফেরত যাবে না।” 

প্রযোজকের অপেশাদার আচরণের ঘটনা উল্লেখ করে তিশা বলেন, “শরীফ (শরীফ খান) নামে একজন আমার সঙ্গে মধ্যরাতে ফোন করে কথা বলতে চেয়েছে, এত রাতে আমি কেন কথা বলব? এটা তো পেশাদার আচরণ হতে পারে না। আমি অবশ্য দিনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। আর উনি তো এই সিনেমার প্রযোজকই নন। এর বেশি কিছু বলতে হলে আমার আইনজীবী বলবেন।” 

তিশার আইনজীবী জসীম উদ্দিন বলেন, “তানজিন তিশা চুক্তি অনুযায়ী তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পালন করেছেন। তিনি শিডিউল প্রদান করেছেন এবং কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু ডিরেক্টর ভিসা এবং শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে চুক্তির সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ অনুযায়ী ডিরেক্টরের ডিফল্ট (অপরাধ) স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিশার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্টিস্ট ডিফল্ট ঘটেনি। বরং ভিসা বিলম্ব ও শিডিউল বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে তিশাই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।” 

প্রযোজক দাবি করেছেন, প্রথমে ৩০ হাজার রুপি পরে তিশার বোনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশি ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা পাঠানো হয়। এরপর থেকেই গড়িমসি শুরু করেন তিশা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সমাজ কিংবা ব্যক্তিজীবনে সবচেয়ে কঠিন বিষয় শান্তি অর্জন করা: উপদেষ্টা
  • ভারতীয় প্রযোজকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মুখ খুললেন তিশা
  • পশুপাখিরা কী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়?
  • পোকামাকড় ও পশুপাখি কি সত্যিই ভূমিকম্পের আগাম তথ্য জানতে পারে