গকসুর নামে আদায় করা টাকার ‘হদিস নেই’
Published: 10th, November 2025 GMT
গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) চতুর্থ নির্বাচনের ১ মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো সংসদের নামে কোনো আলাদা তহবিল গঠন হয়নি, খোলা হয়নি ব্যাংক হিসাবও।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি সেমিস্টারে গকসুর নামে ২০০ টাকা করে ফি নেওয়া হলেও সেই টাকা সংসদের হাতে আসে না। জমা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাজেটেই।
আরো পড়ুন:
ফ্রেন্ডলি খাবারের দুই নায়ক শুভ ও মারুফ
শিক্ষার্থী পরিবহন সেবা চালু করতে ব্যর্থ গণ বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী থেকে প্রতি সেমিস্টারে ২০০ টাকা করে গকসু ফি আদায় করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকতে পারে না। সেই নিয়মেই এই অর্থ জমা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল হিসাবেই।
প্রশাসনের দাবি, ‘ছাত্র সংসদ ফি’ এর সব খরচের হিসাব সংরক্ষিত থাকে। কোন সেশনে কত টাকা উঠেছে, কোথায় ব্যয় হয়েছে- সবই বাজেটে উল্লেখ থাকে।
তবে বাস্তবে সেই বাজেটে গকসুর কোনো স্বাধীনতা নেই। সংসদের নামে নেওয়া টাকায় তারা সরাসরি কোথাও খরচ করতে পারেনি এখনো। গকসু কার্যালয়ের কাগজ-কলম থেকে অফিসের সরঞ্জাম কেনা কিংবা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলেও প্রশাসনের অনুমোদন ও বাজেট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে।
গকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ইয়াসিন মৃদুল দেওয়ান বলেন, “নির্বাচিত হয়ে শপথ নেওয়ার পরপরই প্রশাসনের উচিত ছিল, সংসদের সব দায়িত্ব ও তহবিল বুঝিয়ে দেওয়া। কিন্তু প্রশাসন তা করেতে পারেনি। আমরা তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। দীর্ঘ ৭ বছরের হিসাব সংরক্ষিত রয়েছে এবং প্রশাসন দ্রুত তা বুঝিয়ে দিতে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “গকসুর নিজেস্ব ব্যাংক হিসাব ও নির্দিষ্ট বাজেটের খসড়া প্রদানের কাজ মোটামুটি শেষ দিকে। ছাত্র সংসদের সতন্ত্র তহবিল হলে কার্যক্রম দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে। বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।”
গকসুর নবনির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আব্দুর রহিম বলেন, “গকসুর নিজস্ব অ্যাকাউন্ট চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রশাসনের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকাউন্ট থেকেই ব্যয় পরিচালিত হচ্ছে। তবে নিজস্ব হিসাব খোলার কাজ প্রায় শেষের দিকে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান অবস্থায় আর্থিক স্বাধীনতা খুব সীমিত। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে গকসু যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায়, সেখানে বাধা আসছে। তহবিল গঠন ও নিজস্ব ব্যাংক হিসাব সচল হলে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা দুটোই নিশ্চিত হবে।”
গকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক মো.
তিনি জানান, সম্প্রতি লালন স্মরণোৎসবের আয়োজনের সময় প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল অর্থ সঙ্কট। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট থেকে খুব সীমিত অর্থের অনুমতি মেলে। ফলে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
মারুফ বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিসর এখনো নাজুক। অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণব্যবস্থা না থাকায় টেকসই সাংস্কৃতিক বিকাশে বাধা তৈরি হচ্ছে। নিজস্ব তহবিল সচল হলে এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন সম্ভব।”
গকসুর সমাজকল্যাণ ও ক্যান্টিন সম্পাদক মনোয়ার হোসেন অন্তর বলেন, “আমরা শুরুতে ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অভিযান চালিয়ে অনেক পরিবর্তন এনেছি। রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা, খাবার ঢেকে রাখা, কর্মীদের হাইজিন মানা—এসব এখন অনেকটাই উন্নত।”
“শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও কল্যাণই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রশাসনও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে,” বলেন অন্তর।
নির্বাচনের পর মাত্র এক মাসেই গকসু আয়োজন করেছে তিনটি কার্যক্রম। এর মধ্যে ‘এশিয়া কাপ কোয়ালিফায়ারে বাংলাদেশ বনাম হংকং ফুটবল ম্যাচ প্রদর্শন’, ‘লালন স্মরণোৎসব’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে অভিযান পরিচালনা।
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী মো. মেজবান নবী সিফাত বলেন, “আমরা প্রতি সেমিস্টারে গকসুর নামে ২০০ টাকা দেই। কিন্তু সংসদের তহবিলই যদি না থাকে, তাহলে এই টাকা কার কাছে যায়? গকসু যদি প্রশাসনের বাজেটের দয়ায় চলে, তাহলে তার অস্তিত্বই বা কোথায়?”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে না। তাই ছাত্র সংসদের ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অ্যাকাউন্টেই জমা রাখা হয়। এজন্য গকসুর জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে।”
তবে এই টাকা কোথায় ও কীভাবে ব্যয় হয়, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি কোষাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “প্রতি বছরের জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হয়। বাজেট দেখে বিস্তারিত বলা যাবে। বর্তমানে আমার কাছে এর নির্দিষ্ট তথ্য নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “ইউজিসির নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হিসাবই থাকবে। ৭ বছর ধরে যে ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া হয়েছে, তা সেই ফান্ডেই আছে। গকসুর জন্য নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হবে এবং সংসদকে ২ বছরের জন্য বাজেট দেওয়া হবে।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গকস অ য ক উন ট গকস র ন র জন য তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চাইলেন রাকসুর প্রতিনিধিরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পদত্যাগের দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। আজ সোমবার বিকেলে রাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান রাকসুর প্রতিনিধিরা।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের রেজিস্ট্রারের কক্ষে ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সভা করছিলেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ইফতিখারুল আলম। পরে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সভা করছেন অভিযোগ তুলে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সালাহউদ্দিন আম্মার। সেখানে তাঁরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ)। তিনি বলেন, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে ২৩ দিন ধরে ক্লাস, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে অচলাবস্থা অতিক্রম করেছে। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনে রাকসুর প্রতিনিধিদল উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত সমাধানের অনুরোধ জানায়। উপাচার্য বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অপসারণের নির্দেশে স্বাক্ষর করেন এবং ফাইলটি রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠান। প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী, রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একই দিনে চিঠি ইস্যু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল দুপুর পর্যন্ত রেজিস্ট্রার দপ্তর সেই চিঠি ইস্যু করেনি। এতে বিভাগটির ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থেকে শিক্ষার্থীরা আরও একদিন একাডেমিক ক্ষতির মুখে পড়ে।
মোস্তাকুর রহমান আরও বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রাকসুর জিএস ও সিনেট সদস্য সালাহউদ্দিন আম্মার রেজিস্ট্রার দপ্তরে উপস্থিত হন। পরে দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান যে রেজিস্ট্রার তখন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ব্যস্ত আছেন এবং পরে আসতে বলেছেন। প্রশাসনিক দায়িত্বের সময় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেমন নীতিগতভাবে অনুচিত, তেমনি এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশাসনের পরিপন্থী। পরে রেজিস্ট্রার মহোদয়ের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে বিষয়টির অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন।
এ ঘটনায় রাকসুর অবস্থান তুলে ধরে ভিপি মোস্তাকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সংকটকে উপেক্ষা করে প্রশাসনিক পদক্ষেপ বিলম্বিত করা দায়িত্বহীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবের দৃষ্টান্ত। একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির সঙ্গে এমন আচরণ রাকসুর মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নীতিমালার পরিপন্থী। রাকসুর দাবিÑভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদের এই অশোভন আচরণের তদন্ত করে তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘একজন শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব ভুলে চেম্বারে রাজনৈতিক আলোচনা করছিলেন। এই জায়গায় শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান না করে রাজনৈতিক আলাপ করার কোনো অধিকার নেই। রাকসুর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাঁর আচরণ ছিল বিমাতাসুলভ।’