যখন ডিজিটালাইজেশন হয়ে যাবে, তখন মামলার প্রতিকার পাওয়া সম্ভাবনা বাড়বে। আর সে সময় অনেকে মামলা করবেন। এ উদ্যোগ সফল করার জন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা চান আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আজ সোমবার সকালে মহানগর দায়রা জজ আদালতের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ই–পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম’ উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন আসিফ নজরুল।

অনলাইনের পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, ‘পারিবারিক আদালতে অনলাইনে মামলা করা যাবে। মামলা দায়ের, নথি ব্যবস্থাপনা, শুনানি, রায়—সবকিছুই অনলাইনে পাওয়া যাবে। এটাকে আমরা একটা পেপারলেস কোর্ট বলতে পারি। এটা ভোগান্তি কমাবে, সময় বাঁচাবে, দুর্নীতি কমবে, খরচ কমাবে। এটা নিয়ে আমাদের কারও কোনো সন্দেহ নেই।’

আইনজীবীদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা ল ইয়াররা (আইনজীবীরা) এটার গার্ডিয়ান হন। এনসিওর (নিশ্চয়তা দেন) করেন, এটাকে যাতে কেউ পলিউট (কলুষিত) করতে না পারে। এটাকে কেউ যেন ডিস্টেবিলাইজ (স্থিতিশীলতা নষ্ট করা) করতে না পারে। যাত্রা শুরু হয়ে যেন থেমে না থাকে। দেখেন, ডিজিটালাইজেশন সুবিধাটা কী? আমরা সবাই বিকাশ ইউজ (ব্যবহার) করি। এটা আমাদের আমাদের জীবন কত সহজ করে দিয়েছে।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দুটি বড় অফিস আছে। সবচেয়ে বড় অফিস হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। আমি উনাকে বক্তৃতা লিখে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে সেই বক্তৃতা এডিট করে আমাকে পাঠিয়েছেন। আমরা কেন সবাই পারি না? হোয়াটসঅ্যাপই তো আপনার অফিস হতে পারে।’ এরপর ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা বোঝাতে মোবাইল ফোনের উদাহরণও ব্যবহার করেন।

ডিজিটালাইজেশনের সুবিধার ব্যাপারে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘যেসব দেশ ডিজিটালাইজেশন হয়েছে, পেপারলেস হয়েছে, সেখানে বেকার বেশি? নাকি যেসব দেশ ম্যানুয়াল পর্যায়ে আছে, সেখানে বেকার বেশি? আমাদের অহেতুক ভীতি কাজ করে, ডিজিটালাইজেশন হলে হয়তো আমার ইনকাম কমে যাবে। কাজ কমে যাবে। কখনোই কমবে না। যখন দেখবেন, ডিজিটালাইজেশন হয়ে গেছে। মামলার প্রতিকার পাওয়া সম্ভাবনা বাড়লে, আরও অনেকে মামলা করবেন। অনেক বেশি লোক মামলা করলে কোনোভাবেই আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘আমরা অনলাইনে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সাক্ষ্যর অভাবে দিনের পর দিন মামলা ঝুলে থাকে। এর ফলে আমাদের অনেক সময় বাঁচবে। আমরা আইন মন্ত্রণালয় থেকে ২১টি রিফর্মের কাজ করেছি। এসব টিকবে না, যদি আমরা এগুলো কন্টিনিউ করতে না চান।’

সংস্কারের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে সংস্কারের ব্যাপারে বলেন, কই সংস্কার? কোনো কিছুই দৃশ্যমান হচ্ছে না। প্রতিদিন আইসিটিতে বিচার দেখায়। এরপরও বলে, বিচার দৃশ্যমান হচ্ছে না৷ আমাদের এখানে যে বিচার, সংস্কার হচ্ছে না, সেটা নিয়ে হাহাকার, আকাঙ্ক্ষা থাকবে। কিন্তু যেগুলো হচ্ছে, সেটাকে তো অ্যাপ্রিসিয়েট (উৎসাহিত) করতে হবে। আপনাকে মামলা করতে হবে না। আমরা আইন করে দিয়েছি, পারিবারিক আদালতে আপনার প্রথমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বিনা খরচে, বিনা সমস্যায় লিগ্যাল এইডে গিয়ে আপনি সেই সুবিধা পাবেন। পারিবারিক সমস্যার ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইডকে আমরা মেন্ডেটরি (আবশ্যকীয়) করে দিয়েছি।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘যাওয়ার আগে ৬৪টি জেলায় লিগ্যাল এইড করে দিয়ে যাব। যখন আমরা অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করব, যখন এটা পুরোপুরি ফাংশনাল (কার্যকর) হবে। বাংলাদেশে যত মামলা হয়, তার ওয়ান থার্ড (তিন ভাগের এক ভাগ) কমে যাবে। পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট ৫০ শতাংশ কমে যাবে।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘অনেকের চিন্তা হচ্ছে, সংস্কার মানে সংবিধান পরিবর্তন করা। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক খাতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে ভ্যাট চালু করে। ভ্যাট কী সংবিধান পরিবর্তন করে হয়েছে? এটা তো আইনের মাধ্যমে হয়েছে। বাংলাদেশে পরিবেশগত যতটুকু পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আইনের মাধ্যমে হয়েছে। আমাদের এখানে অ্যাসিড–সন্ত্রাস একসময় ভয়াবহ ব্যাপার ছিল, এটা এখন নেই বললেই চলে।’

মহানগর দায়রা জজ আদালতের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ই-পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম দ র আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খানের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. সাব্বির ফয়েজের আদালত এ আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রিয়াজ হোসেন জানান, দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপপরিচালক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন লুৎফুল তাহমিনা খানের আয়কর নথি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। আদালত সেটি মঞ্জুর করেন।

আবেদনে বলা হয়, আসামি লুৎফুল তাহমিনা খান ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে লুৎফুল তাহমিনার অপরাধে সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া আসামি লুৎফুল তাহমিদা খানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, নিজ এবং তাঁর আংশিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ১০টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত মোট ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই অর্থের স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২–এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁর সব আয়কর রিটার্নসহ সংযুক্ত রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ