গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক শুক্রবার  (১০ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) থেকে নতুন করে কেউ উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসেনি।

অ্যানথ্রাক্স হলো, ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের স্পোর গঠনকারী ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। প্রাণি থেকে এ রোগ মানুষে ছড়ায়। যে প্রাণিরা জাবর কাটে, যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া—এরা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত পশু থেকে ও দূষিত পশুজাতপণ্য থেকে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। অ্যানথ্রাক্স সাধারণত প্রাণি থেকে প্রাণিতে বা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।

আরো পড়ুন:

শরীয়তপুরে ৪ লাখ শিশু টাইফয়েড টিকা পাবে: সিভিল সার্জন

ফরিদপুরে ৫ লাখ ২৮ হাজার শিশু পাবে টাইফয়েডের টিকা

সুন্দরগঞ্জে মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ বৃদ্ধির পাশাপাশি গবাদি পশুর মৃত্যু যখন বাড়ছে, ঠিক তখন গবাদি পশুর টিকাদানে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ হাজার গবাদি পশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। চাহিদা তিন লাখ থাকলেও বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২৮ হাজার ৯০০। পশুর মালিক ও খামারিরা এ কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি  ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গরু, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদি পশু রয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬০৮টি। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৩৭ হাজার। ছাগল ও ভেড়া আছে ১ লাখ ৬০ হাজার। গবাদি পশুর তুলনায় টিকা দেওয়া হয়েছে খুবই কম। সরকারি তথ্য অনুযায়ী,  উপজেলায় ১৩টি গবাদি পশু মারা গেছে। যদিও কৃষক, খামারি ও স্থানীয়দের ভাষ্য, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গত এক মাসে  প্রায় শতাধিক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে বেলকা ইউনিয়নে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে মাহাবুর রহমানের একটি রোগাক্রান্ত গরু জবাইয়ের পরই মূলত একযোগ ১১ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হন। এরপর রোগাক্রান্ত ছাগল জবাই করে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলায়। এরপর মূলত নড়েচড়ে বসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। 

দক্ষিণ বেলকা গ্রামের খামারি জামিল রহমান বলেন, ‘‘গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আমাদের এলাকায় পশুর টিকা দেওয়া হয়। টিকার সরবরাহ কম বলে অনেকের পশু বাদ পড়েছে। আমার নিজের ছোট-বড় ৫টি গরুকে টিকা দিতে খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। যদিও প্রতিটি ভ্যাক্সিনের দাম ৮০ পয়সা করে হলে আমার ব্যয় হওয়ার কথা ৪ টাকা।’’  

একই ইউনিয়নের খাজা বেপারী বলেন, ‘‘হাট থেকে কেনা ৪টি গরুর মধ্যে একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় গরুর চিকিৎসককে ১২০ টাকা দিয়ে টিকা দিয়েছি। পরে শুনেছি, এ সব টিকা ৮০ পয়সায় দিচ্ছে সরকার।’’ 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচজন দিয়ে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলায় তা ব্যাঘাত ঘটছে। পার্শ্ববর্তী সাদুল্লাপুর উপজেলা থেকে দুইজন মাঠ কর্মীকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে ক্যাম্পেইন করে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে টিকার সংকট থাকলেও বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ২ লাখ ৫০ হাজার টিকা পাওয়া গেছে।’’  

টিকা প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘৮০ পয়সার বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। বাজারে খুচরা পয়সা না থাকার অজুহাতে অনেকে টিকার দাম ১০/২০ টাকা বেশি নিয়েছে। যেটা অন্যায়।’’ 

বিপ্লব কুমার দে আরো বলেন, ‘‘অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য গত বুধবার (৮ অক্টোবর) উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের আমজাদ হোসেন নামে এক স্বেচ্ছাসেবীকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’’ বর্তমানে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও তিনি জানান। 

গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা.

মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মারা যাওয়া গরু মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গরু জবাই না করে চিকিৎসা দিতে হবে। ব্যাকটেরিয়া চলে গেলে সংক্রমণ কমে যাবে। সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’  

গাইবান্ধা আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘মৃত পশুর নমুনা পরীক্ষা করে দুটি গরুর শরীরে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু পাওয়া গেছে। অসুস্থ পশু যাতে কেউ জবাই না করে, সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’’

ঢাকা/মাসুম/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গর স ন দরগঞ জ উপজ ল য় স ক রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্পসহ বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম দেশে নেই

ভূমিকম্পসহ বড় কোনো দুর্যোগে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম দেশে নেই। গত ১৯ বছরে কেনা সরঞ্জামগুলোর অর্ধেকই মেয়াদোত্তীর্ণ বা অচল হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় ধাপে সরঞ্জাম সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, ৪ বছরে তার মাত্র ২০ শতাংশ কিনতে পেরেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহে অধিদপ্তর ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ২০২১ সালে। এর আগে ২০০৬ সাল থেকে দুই ধাপে ২১২ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। সংগৃহীত সরঞ্জামগুলো সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া ২০ শ্রেণির ৮০৭টি সরঞ্জাম অচল হয়ে পড়েছে।

৩৩ শ্রেণির ১৯১টি সরঞ্জাম মেরামতের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অচল হয়ে পড়া গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে স্প্রেডার, র‍্যাম জ্যাক, ব্রিদিং অ্যাপারেটাস, ক্রেন, এক্সকাভেটর, কংক্রিট কাটার, পাওয়ার চেইন স, ম্যানুয়াল ড্রিল মেশিন, হাইড্রোলিক এক্সকাভেটর ও হুইল ডোজার।

জমে থাকা কংক্রিটের স্তূপ সরানো, ভেঙে পড়া দেয়াল অপসারণ, সামনের বাধা অপসারণ করা, দেয়াল বা লোহার রড কাটা, আটকে পড়া মানুষের অক্সিজেনের সংকট হলে অক্সিজেন পৌঁছানোর কাজে এসব সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়।

ফায়ার সার্ভিসের মতে, ভূমিকম্পের সময় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে আছে গ্যাস ডিটেকটর, আটকে পড়া মানুষ শনাক্ত করতে লাইভ ডিটেক্টর, কংক্রিট কাটার, ক্রেন, ফর্কলিফ্টার, রোটারি হ্যামার ড্রিল, ব্রিদিং অ্যাপারেটাস, র‍্যাম জ্যাক, লক কাটার, সার্চ ভিশন ক্যামেরা, হাইড্রোলিক কাটার, রোটারি হ্যামার ড্রিল, চিপিং হ্যামার, হাইড্রোলিক এক্সকাভেটর।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র থেকে জানা গেছে, ৭ শ্রেণিতে ৩৫ ধরনের যন্ত্রপাতি তাদের প্রয়োজন। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ফায়ার ফাইটার স্যুট, কেমিক্যাল স্যুট, হিট প্রোটেকটিভ স্যুট, রেসকিউ স্যুট, কনফাইনড প্রোটেকটিভ স্যুট। এ ছাড়া ব্রিদিং অ্যাপারেটাস, কেমিক্যাল প্রোটেকশন ডিভাইস, ফায়ার ফাইটিং ড্রোন, রিফ্লেক্টিং হোস, মনিটর নোজল, পোর্টেবল গ্রাউন্ড মনিটর, হাই প্রেশার হোস, পোর্টেবল পেনিট্রেটর।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি মহাপরিচালক থাকাকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে আমরা কিছু সরঞ্জাম পেয়েছিলাম। এগুলোর অধিকাংশ এখন পুরোনো বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এসব সরঞ্জাম রাখা দরকার। এক জায়গায় থাকলে সেটা বড় দুর্যোগের সময় কোনো কাজে আসবে না।

আলী আহমদ খান আরও বলেন, সরঞ্জাম কেনা হলেও এগুলো চালানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। ফায়ার সার্ভিসের কোনো প্রশিক্ষণ একাডেমি নেই। বড় কোনো দুর্যোগ হলে বিদেশি অনেক উদ্ধারকারী দল আসবে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হলে ইন্টারন্যাশনাল অপারেশন অ্যান্ড রেসকিউ ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে হয়। সে ধরনের প্রশিক্ষণেও কেউ অংশ নেয় না। প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব পূরণ করতে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক তৈরির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই স্বেচ্ছাসেবকদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।

সরঞ্জাম সংগ্রহে কেন ধীরগতি

২০০৬ সালে ‘ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার, অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প’ নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের প্রথম ধাপ। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৯ কোটি টাকা। পরের ধাপে (২০১৩-২০১৭) ১৪৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকার এ প্রকল্পের অধীনে গত ৪ বছরে লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশ সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।

সরঞ্জাম সংগ্রহে ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কাজী শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান প্রকল্পের শুরুতে সরাসরি ক্রয়ের সুযোগ রাখা হয়েছিল। পরে তা পরিবর্তন করে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত হয়। পুরো প্রক্রিয়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসতে সময় লেগেছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও দুটি অর্থবছর আছে। বাকি সময়ে ৮০ শতাংশ সরঞ্জাম সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের কী ধরনের সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেটা স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আগে নির্ধারণ করতে হবে। আর যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আমাদের এখানে সরঞ্জাম সংরক্ষণ করার কথা, সেটা করা হয় না। আর যন্ত্রপাতির পাশাপাশি আমাদের অন্যতম ঘাটতি আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। আমাদের অনেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু দেখা যায় প্রশিক্ষিত জনবল নেই। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভূমিকম্পসহ বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম দেশে নেই