কুমারখালীতে বালুঘাট নিয়ে দ্বন্দ্বে গুলিবিদ্ধসহ তিনজন আহত
Published: 18th, October 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বালুঘাট নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে ফরিদ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। শুক্রবার রাতে এ ঘটনার পর আজ শনিবার সকালে হাসপাতালে গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাঁদের বাধা দেন আহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনী এলাকার গড়াই নদে গুলির ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ফরিদ হোসেন একই ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া এলাকার হুজুর আলীর ছেলে। তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বালুঘাট দেখাশোনার কাজে ছিলেন। আহত অন্যরা হলেন একই এলাকার ইদ্রিসের ছেলে সবুজ (৩৮) ও মৃত আশরাফুল ইসলামের ছেলে হাসিবুল হাসান (২৮)। তাঁদেরও একই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের পরিচয় জানতে পেরেছেন তাঁরা। হামলাকারীদের বাড়ি লাহিনীপাড়া এলাকায়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন ইমাম জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছোররা গুলিতে একজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওই ব্যক্তি এখন শঙ্কামুক্ত।
আহত সবুজ বলেন, রাতে লাহিনী এলাকার গড়াই নদে বালু উত্তোলনের কাজ চলছিল। চারজন ঘুমাচ্ছিলেন, আর তিনিসহ তিন শ্রমিক কাজ করছিলেন। রাত তিনটার দিকে পশ্চিম পাশের বাগানের ভেতর থেকে ১০–১২ জন ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজ্ঞাতনামা লোকেরা গুলি ছুড়তে থাকেন। এ সময় ফরিদ নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন।
সবুজ আরও বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁটের আঘাতে আমিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দুর্বৃত্তরা বালুঘাটের ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা ও কয়েকজনের মোবাইল নিয়ে গেছে। হামলাকারীদের মধ্যে দুজনকে চিনতে পেরেছি। প্রশাসনের কাছে তাঁদের নাম জানিয়েছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাসিবুল হাসান বলেন, ‘গুলির শব্দ শুনে আমি জান বাঁচার জন্য দৌড়ে পালাতে গেলে আমাকেও আঘাত করে।’
গত পরশু একই বালুঘাট নিয়ে হামলায় আহত শামীম বলেন, ‘ছেঁউড়িয়া এলাকার সাজেদুর ভাই বালুঘাটের ইজারা পেয়েছেন। লাহিনী এলাকার মজিদ নামে এক ব্যক্তি বালুঘাটের শেয়ার দাবি করেন। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আমাকেও মারধর করে।’
সাজেদুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার জিয়াউর রহমান জানান, তিনি জানতে পেরেছেন লাহিনীপাড়ার কয়েকজন বালুঘাটে গুলির ঘটনা ঘটিয়েছেন। একজন গুলিবিদ্ধসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই বালুর ঘাট বৈধ কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি একজন ইজারা পেয়েছেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহত হয় এল ক র হয় ছ ন ন আহত
এছাড়াও পড়ুন:
শিবিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র মজুত ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের হুমকির অভিযোগ আনল ছাত্রদল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে নানা অভিযোগ করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচন ঘিরে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির অস্ত্র মজুত করেছিল। ছাত্রশিবির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের ভোট না দিতে হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়া একটি কেন্দ্রে এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকার কথা উল্লেখ করে জাল ভোটের আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করেছেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্রার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবহন মার্কেটের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের প্রার্থীরা এসব অভিযোগ করেন। আজ সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ছাত্রদলের প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমরা আনন্দমুখর পরিবেশে রাকসু উদ্যাপন করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমরা সব প্যানেল সৌহার্দ্যমূলক আচরণের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা করেছি। ৩৫ বছর পর যে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে এবং ১৭ বছর আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকারবিহীন। আমরা আশা করেছিলাম চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর চব্বিশের স্পিরিট ধরে রেখে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পরিবেশ পাব। সকালে নির্বাচনের প্রথম দিকে সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল। আমরা সেটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছি। কিন্তু পরক্ষণেই আমাদের ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে অভিযোগ এসেছে, স্টেশন বাজার, বিনোদপুর ফটক, চারুকলা ফটক ও কাজলা ফটক দিয়ে লাল জার্সি পরা “সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট” লেখা অগণিত লোক প্রবেশ করছে। বহিরাগতদের এভাবে তাদের প্যানেলের টি-শার্ট পরিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীতে যে বেতারের মাঠ রয়েছে, সেখানে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও তাঁদের ক্যাডার বাহিনী অস্ত্র মজুত রেখেছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এর সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান জানান ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী।
ছাত্রশিবিরের দিকে ইঙ্গিত করে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘তাদের ভয় ছিল সনাতন ধর্মের ভোট তারা পাবে না। গতকাল রাত থেকে তারা বিভিন্ন মেস ও হোস্টেলে গিয়ে সনাতনী ভাইবোনদের হুমকি দিয়ে এসেছে, তাদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করে এসেছে। যদি সনাতনী কেউ ভোট দিতে আসে, তাহলে তাদের হুমকি দিয়ে এসেছে যে তাদের একাডেমিক জীবন হুমকিতে পড়বে। তা ছাড়া ভুয়া সাংবাদিক সেজে ক্যাম্পাসে অনেকে অবস্থান করছে। তারা প্রশাসনের কাছ থেকে ভুয়া কার্ড নিয়েছে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ইমন কোন সংবাদপত্রের কার্ড নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন, সেই প্রশ্ন তোলেন শেখ নূর উদ্দিন আবির। তিনি বলেন, ‘ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মেয়েরা তাপসী রাবেয়া হলের ভোটকেন্দ্রে কৃত্রিম জটলা তৈরি করে রেখেছিল সকাল থেকে। আমাদের প্যানেলের প্রার্থীরা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েও এর কোনো প্রতিকার পায়নি। রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও শিবিরের হয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা ধরিয়ে দিয়েছি, যার কারণে তাদের কিন্তু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি, রোদে পুড়ে ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের প্যানেলের একজন এজেন্ট আমাকে জানিয়েছে, ওখানে ১০০ ব্যালট পেপার স্বাক্ষর করা হয়েছে, জাল ভোট করার জন্য অপচেষ্টা করা হয়েছিল। সেখানে রোভার স্কাউটের সদস্য ভোট চেয়েছে এবং ভোটারদের ভেতরে যেতে বাধা দিয়েছে।’
এ সময় ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ছবি দেখিয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেন ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এ ব্যাপারে যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়।’
পরে ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন বলেন, ‘শহীদুল্লাহ কলাভবন (জিয়াউর রহমান হলের ভোটকেন্দ্র) কেন্দ্রে দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ভোটাররা ঢুকতে পারেনি। অর্থাৎ এক ঘণ্টা এই ভোট বন্ধ ছিল।’ এই এক ঘণ্টা কেন ভোট বন্ধ ছিল, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে আমরা এটার জবাব চাই। এর কোনো কারণ জানানো হয়নি, ভেতরে অসুবিধা ও চাপের কথা বলা হয়েছে।’
‘১০০ ব্যালট পেপার আগে থেকে স্বাক্ষর করে রাখার কারণ কী?’ভোটের প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসএম হলের (শাহ মখদুম হল) প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি। তাঁরা বারবার শুধু গোপন কক্ষে শিবিরের লিফলেট পাচ্ছিলেন। শিবিরের এজেন্টরা বারবার বলছিল, হয়তো ভুল করে পেপার রেখে গেছে। আমার প্রশ্ন, শিবিরের ভোটাররাই কি বারবার শুধু ভুল করে তাদের লিফলেট রেখে যায়? এই ভুল একইভাবে তাপসী রাবেয়া, রোকেয়া হল ও হবিবুর রহমান হলের কেন্দ্রগুলোতেও করা হয়েছে।’
এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘তারা ১০০ ব্যালট পেপার স্বাক্ষর করে রেখেছিল। এক ঘণ্টা বন্ধ রাখার পরে আমরা গিয়ে ১০০ ব্যালট পেপার পেয়েছি। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, এই এক ঘণ্টার মধ্যে তারা জাল ভোট করেছে। জাল ভোট হয়নি, এটা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, একজন ভোটার যাবে, তাকে ছয়টি ব্যালট পেপার স্বাক্ষর করে দেবে এবং সে ছয়টি ব্যালট পেপারে ভোট দেবে। কিন্তু ভোটার উপস্থিতির আগে কেন আমরা ১০০ ব্যালট পেপার পেলাম? এই ১০০ ব্যালট পেপার আগে থেকে স্বাক্ষর করে রাখার কারণ কী?’
এ ব্যাপারে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম বলেন, ‘বেলা আড়াইটা-তিনটা থেকে কয়েকটা কেন্দ্রে শুধু দীর্ঘ লাইন। এই দীর্ঘ লাইন কেন? ওই যে এক ঘণ্টা মেকানিজম করছে! আমরা আশঙ্কা করছি, ভোট কারচুরি হচ্ছে কি না। আমরা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ঘুরেছি। বিভিন্ন জায়গায় সকালবেলা যে স্বতঃস্ফূর্ত দীর্ঘ লাইন ছিল, সেটা বিকেলে কমে আসার কথা। কিন্তু আমরা দেখেছি, এক ঘণ্টা ধরে দুটি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক লম্বা লাইন। এক ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারেনি।’