‘আমার জন্মের আগে আমার নানির একটি পুত্রসন্তান জন্মেছিলেন। কিন্তু জন্মের পরপরই তিনি মারা যান। নানি সারা দিন কান্নাকাটি করতেন। আমার বাবা দেখলেন যে তাঁকে আর অন্য কোনোভাবে থামানো যাবে না। বাবা তখন বলেছিলেন যে ঠিক আছে, মা, এই ছেলেকে আপনাকে দিয়ে দিলাম। এটা আপনার।’
জীবনের গল্প শুনছিলাম সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর মুখে। ‘ক্রাউন সিমেন্ট অভিজ্ঞতার আলো’ শীর্ষক প্রথম আলোর ভিডিও সাক্ষাৎকারমালার অংশ হিসেবে।
আরও পড়ুনজীবন সুন্দর এবং জীবন হলো কাজ করার জায়গা, আনন্দ করার জায়গা০৬ অক্টোবর ২০২৫বাংলাদেশের পথিকৃৎ সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। ১৯৪০ সালে আগরতলায় জন্ম। ৮৫ পেরিয়েছেন। পাকিস্তান হওয়ার পর, ক্লাস ফোরে পড়ছেন যখন, পিতা তাঁকে তাঁর কর্মস্থল সিলেটে নিয়ে আসেন। শৈশবের আগরতলা ভুলতে পারেন না। প্রথম স্কুল ছিল উমাকান্ত একাডেমি। তারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আব্দুল হাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই গায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সিনেমায় গান করেন ১৯৬০ সালে, কুড়ি বছর বয়সে, ২২ বছর বয়সে রেডিওতে। ১০ টাকা পেয়েছিলেন, সেটা দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কাটলেট খাওয়া আর সিনেমা দেখার পরও কিছু টাকা পকেটে রয়ে গিয়েছিল।সৈয়দ আব্দুল হাদীর মুখে শোনা যাক, ‘আমাদের শহর তো গানবাজনার জন্য বিখ্যাত ছিল—ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পরিবার সেখানেই ছিল। আমার চেয়ে বয়সে একটু বড় কিন্তু খুব বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল রাজা হোসেন খানের সঙ্গে। খুবই গুণী একজন সুরকার ছিলেন। আমার বাসার কয়েকটা বাসা পরেই ওঁদের বাসা ছিল। ওখানে তিনি রেওয়াজ করতেন, সেতার। আমি স্কুলে যেতাম ওই রাস্তা দিয়ে। শুনে আমার প্রচণ্ড আকর্ষণ হলো এটা একটু শিখতেই হবে। তাঁকে গিয়ে ধরলাম ভাই, এটা তুমি আমাকে শেখাও। উনি আমাকে পাঠিয়ে দিলেন ওস্তাদ ইসরাইলের কাছে। আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আমি তো এটা শিখতে চাই। তো উনি একটু সন্দেহ প্রকাশ করলেন যে আমি কি শিখতে পারব এটা? অসম্ভব। তবু তিনি বললেন, আচ্ছা, ঠিক আছে, এসো। তো কয়েক দিন অনুশীলন করলাম। শিখলাম। এরপর হাতের আঙুলে তারের ঘষায় ফোসকা পড়ে গেল। আমি বললাম, ওস্তাদজি, আমি পারছি না তো। উনি হাসতে হাসতে বললেন, বাবা, এটা তোমার কাজ না। তুমি বরং গান করো। অনেক ভালো করবে।’
ওস্তাদ ইসরাইলের পরামর্শে সেতার থেকে এলেন গানে।
সেখানে গান করেন। রেডিওর প্রথম গান, টেলিভিশনের প্রথম গান, দুটোই ছিল কবি শামসুর রাহমানের লেখা।আব্দুল হাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই গায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সিনেমায় গান করেন ১৯৬০ সালে, কুড়ি বছর বয়সে, ২২ বছর বয়সে রেডিওতে। ১০ টাকা পেয়েছিলেন, সেটা দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কাটলেট খাওয়া আর সিনেমা দেখার পরও কিছু টাকা পকেটে রয়ে গিয়েছিল। জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করেন। তারপর টেলিভিশন চালু হলে তাতে যোগ দেন তিনি। সেখানে গান করেন। রেডিওর প্রথম গান, টেলিভিশনের প্রথম গান, দুটোই ছিল কবি শামসুর রাহমানের লেখা।
এরপর হাতের আঙুলে তারের ঘষায় ফোসকা পড়ে গেল। আমি বললাম, ওস্তাদজি, আমি পারছি না তো। উনি হাসতে হাসতে বললেন, বাবা, এটা তোমার কাজ না। তুমি বরং গান করো। অনেক ভালো করবে।’আমজাদ হোসেনের ছবিতে গান গেয়ে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ‘আছেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার’ তো কিংবদন্তি হয়ে গেছে। ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’ গানটা তাঁকে গাইতে হয়েছে ভাঙা গলায়। কারণ, সিনেমায় নায়কের গলায় একাত্তরে গুলি লেগেছিল, তাই পরিচালক বলেছেন, গলাটা ভাঙা ভাঙা হতে হবে। পেয়েছেন একুশে পদক। পেয়েছেন মেরিল–প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। জীবনের গান নামে প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হওয়া একটা আত্মজীবনী আছে তাঁর।
আরও পড়ুনসেসব সুন্দর দিন আমাদের আসবে, সেটা দেখেই মরতে চাই০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫স্ত্রী মারা গেছেন। তিন কন্যা প্রবাসী। তবু দেশ ছাড়বেন না সৈয়দ আব্দুল হাদী। বারবার করে বলেন, জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেয়। অনেক দেশাত্মবোধক গান করেছেন এই নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। শেষ করলেন এই গানটা গেয়ে:
যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা
দে না তোরা দে না
সে মাটি আমার অঙ্গে মাখিয়ে দে না.
আনিসুল হক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রথম গ ন বছর বয়স গ ন কর ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুদের হত্যার ভয় দেখিয়ে মিরসরাইয়ের দুই বাড়িতে ডাকাতি
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একই গ্রামের দুটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল ওই দুই বাড়ির চার পরিবারের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বেঁধে শিশু ও নারীদের জিম্মি করে টাকা, স্বর্ণালংকার, কম্বল ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত উপজেলার হিঙ্গলী ইউনিয়নের একটি গ্রামের পাশাপাশি দুই প্রবাসী বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার রাত দেড়টার দিকে ডাকাত দল প্রথম হানা দেয় কুয়েত প্রবাসীর বাড়িতে। দ্বিতল পাকা বাড়ির মূল ঘর লাগোয়া রান্নাঘরের গ্রিল কেটে ডাকাত দল ঘরে ঢোকে। দলে সাত থেকে আটজন ছিল বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এ সময় প্রবাসীর স্ত্রী ও সন্তান একা ছিলেন ঘরে। ডাকাত দল ওই বাড়িতে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ ও সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা, দুই ভরি স্বর্ণালংকার ও একটি মুঠোফোন নিয়ে যায়।
ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দুই ভাড়াটিয়ার বাড়িতেও ডাকাতেরা হানা দেয়। সেখান থেকে চার হাজার টাকা ও দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় তারা।
রাত চারটার দিকে প্রথম বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে আরেক প্রবাসীর বাড়িতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে ডাকাত দলের সদস্যরা। সেখানে একতলা নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক সৌদি আরব প্রবাসীর শ্বশুর, তাঁর স্ত্রী ও ছোট দুই শিশুপুত্র ছিল। শাবল দিয়ে সদর দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পুরুষ সদস্যদের হাত পা বেঁধে ফেলে ডাকাতেরা। পরে দুই শিশুকে হত্যা ও বাড়ির নারীদের ধর্ষণের হুমকি দিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা, সাতটি কম্বল ও একটি মুঠোফোন নিয়ে যায়। ২২ মিনিটের মধ্যে ডাকাতি শেষ করে নির্বিঘ্নে চলে যায় তারা।
ডাকাতির শিকার এক প্রবাসীর স্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, রাত দেড়টার দিকে রান্নাঘরের জানালা ভেঙে ডাকাত দলের সদস্যরা ঘরে ঢুকে পড়ে। তাদের পরনে হাফপ্যান্ট ও কালো রঙের মুখোশ ছিল। তাদের সবার হাতে দেশি ধারালো অস্ত্র ছিল। ডাকাতেরা তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ধর্ষণের হমকি দেয়। তাঁর ছেলেকেও মারধর করে। এরপর তারা দ্বিতীয় তলায় তাঁর দুই ভাড়াটিয়ার ঘরেও হানা দেয়।
ডাকাতি হওয়া আরেক বাড়ির বাসিন্দা প্রবাসীর শ্বশুর প্রথম আলোকে বলেন, মেয়ের স্বামী প্রবাসে থাকায় একা বাড়িতে তিনি সবার দেখভাল করেন। বুধবার ভোর চারটার দিকে ঘরের দরজা ভেঙে সাত–আটজন ডাকাত ঢুকে দেশি অস্ত্রের মুখে তাঁকে বেঁধে ফেলে। এরপর মেয়েকে ধর্ষণ ও দুই নাতিকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। এ সময় ঘরে থাকা ৫০ হাজার টাকা, ৭টি কম্বল ও একটি মুঠোফোন নিয়ে গেছে ডাকাতরা। ২২ মিনিট সময়ের মধ্যে ঘরের ভেতর তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায় তারা।
দুই বাড়ির চারটি পরিবারে ডাকাতির ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতে হিঙ্গুলী ইউনিয়নে এক বাড়িতে গ্রিল কেটে ও আরেক বাড়িতে দরজা ভেঙে চুরি বা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। গ্রামটি ফেনী নদীর পাড়ে হওয়ায় নদীর উত্তর পাশের ছাগলনাইয়া উপজেলার সমিতির বাজার এলাকা থেকে শেষ রাতে ডাকাত দল এখানে এসে হানা দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।